গত ২৯-৩০ মে ২০২২ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্র রাজশাহীতে, সামাজিক যোগাযোগ কমিশন কর্তৃক আয়োজিত লেখক কর্মশালা ও বিশ্ব যোগাযোগ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের শহরের আশে-পাশের ধর্মপল্লীগুলোর মোট ৪০ জন যুবক-যুবতী অংশহগ্রহণ করে। পবিত্র খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে সেমিনারের শুরু হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও ও তার সহার্পিত খ্রিস্টযাগে ছিলেন খ্রিস্টজ্যোতি রেডিও’র পরিচালক ফা: সুনীল দানিয়েল রোজারিও এবং সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের আহ্বায়ক ফা: বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া।

বিশপ মহোদয় খ্রিস্টযাগে তাঁর উপদেশে বলেন- আজ আমরা প্রভু যিশুর স্বর্গারোহণ পর্ব পালন করছি। সেই সাথে বিশ্ব যোগাযোগ দিবস ২০২২ উদযাপন করছি। প্রভু যিশুর স্বর্গারোহণ পর্ব আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষ তার পাপের দ্বারা ঈশ্বরের সাথে যে যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল প্রভু যিশুর স্বর্গারোহণের মধ্যদিয়ে তা পুনরায় স্থাপন করেছেন। আর এবারের ৫৬তম বিশ্ব যোগাযোগ দিবসের পোপ মহোদয় আমাদেরকে যে মূলসুর বেঁধে দিয়েছেন সেটি হচ্ছে ‘হৃদয়ের কান দিয়ে শ্রবণ করো।’ অর্থাৎ, আমরা যখন শুনি তখন আমরা যা শুনি তার জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করি। আর দায়িত্ব গ্রহণ করা মানে হল জীবনকে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ, আমরা যেন যে কোন অবস্থায় আমাদের হৃদয়-মন খোলা রেখে ঈশ্বরের বাণী শুনি এবং সেইমতো নিজে দায়িত্ব নিয়ে নিজের ও অন্যদের জীবন পরিবর্তনে সাহায্য করি।

খ্রিস্টজ্যোতি রেডিও’র পরিচালক ফা: সুনীল দানিয়েল রোজারিও বলেন- উত্তম যোগাযোগের শর্ত হল শ্রবণ। শোনা হল সংলাপ ও যোগাযোগের অবিচ্ছেদ্য উপকরণ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রকৃত শ্রবণের প্রথম আবিষ্কার হল অন্যের সত্যিকার প্রয়োজনকে শোনা। যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির অন্তরাত্মা বিরাজ করছে। উপযুক্ত শ্রবণের মধ্যদিয়ে আমরা নিজেদের সৃষ্টির মধ্যে উত্তম হিসেবে প্রমাণ করতে পারি এবং অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। সাধু আগষ্টিনের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন- বাণী শ্রবণ বাহ্যিক কান দিয়ে নয়, কিন্তু হৃদয়ের আধ্যাত্মিকতা দিয়ে। তিনি বলেছেন ‘তোমার কানের মধ্যে হৃদয় রেখ না, কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে তোমার কান রেখ।’

সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের আহ্বায়ক ফা: বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন- আজ বিশ্ব যোগাযোগ দিবস। এই দিবসে বিশ্বের সকল সামাজিক যোগাযোগ কর্মীদের জানাই শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। পোপ মহোদয় ৫৬তম বিশ্ব যোগাযোগ দিবসে যে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় আমাদেরকে চিন্তার ও ধ্যানের জন্য রেখেছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। কেননা, বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় আমরা দেখি যে, মানুষ যেন শোনেও শুনছে না, দেখেও দেখতে চাচ্ছে না। কিংবা বুঝার পরেও হৃদয় দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে না। তাই তো পোপ মহোদয়ের এই ঐকান্তিক আহ্বান। বর্তমান বাস্তবতায় আমরা যেন হৃদয়ের কান দিয়ে শ্রবণ করি। অর্থাৎ অন্যদেরকে আমাদের হৃদয়ে স্থান দেই এবং হৃদয়ের ভালবাসা দিয়ে তাদের দায়িত্ব নেই। হৃদয় ও কানকে যেন ভালবাসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি। যার মধ্যদিয়ে আমরা হয়ে উঠতে পারব ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে এবং মানুষে মানুষের মধ্যে প্রকৃত স্থাপনকারী।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী যুবক-যুবতীদের মধ্যে লুকাস বাস্কে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন ঠিক এভাবে– শ্রবণেন্দ্রিয়ের প্রৈরিতিক কাজ ও বিশ্বাস শ্রবণের মধ্যদিয়ে আসে। এ বিষয়টি আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপলব্দি করতে পেরেছি যে, আমার হৃদয়ের কান দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। তাহলে যারা ব্যক্ত করে তাদের এবং যারা ব্যক্ত করতে পারে না তাদের কথা আমি বুঝতে পারবো। অধিবেশনের মাধ্যমে আমি শিখলাম ঈশ্বর আমাকে তার কথা শোনবার জন্য আহ্বান করছেন। মানুষ, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের সাথে তখনই আমার যোগাযোগ ঘটবে যখন আমি আমার হৃদয়ের কান দিয়ে শুনবো।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একে অন্যকে শোনা। কেননা, শ্রবণের মধ্যদিয়ে প্রকাশিত হয় একে অপরের সম্পর্ক ও ভালবাসার আদান-প্রদান। তাই, আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পালকীয় কর্মকান্ড হল শ্রবণেন্দ্রিয়ের প্রৈরিতিক কাজ। মানে হল বলার আগেই শুনতে হবে। যেমনটি বলেছেন সাধু যাকোব তার ধর্মপত্রে। শুনতে সবাই আগ্রহী থাকুক কিন্তু কেউ যেন সহজে মুখ না খোলে (১:১৯)। স্বাধীন ইচ্ছায় অন্যকে শোনার জন্য কিছু সময় দান করা হল ভালবাসার প্রথম কাজ।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: