“স্থানীয় মণ্ডলি গঠনে: মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ” এ মূলসুরকে কেন্দ্র করে বিগত জুন ১৫-১৬, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো ধর্মপ্রদেশীয় সিনোড ২০২২ খ্রিস্টাব্দ। উক্ত সিনোডে বিশপ, ফাদার সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তসহ ২৩০ জন অংশগ্রহণ করেন। সিনোডে সভাপতিত্ব করেন ধর্মপ্রদেশেদের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
সিনোড-এ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রেভা. ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, সহসভাপতি, ধর্মপ্রদেশীয় সিনোড ২০২২। তিনি বলেন, একসাথে পথ চলা মণ্ডলির একটি ধারা ও প্রকৃতি। মণ্ডলির এই একসাথে পথ চলার মৌলিক ধারা স্থিতমূল রয়েছে স্বয়ং ত্রিত্ব ঈশ্বরেরই মধ্যে। পবিত্র বাইবেলে বর্ণিত- মানুষ সৃষ্টির দ্বিতীয় কাহিনীতেই একত্রে পথ চলার মৌলিক রহস্য নিহিত রয়েছে। যিশুর পথে চলার অর্থ হলো- “ যিশুর সাথে চলা, কেননা যিশুই পথ, সত্য ও জীবন।” একসাথে চলার পথে ‘মিলন’ হলো সুস্থতার চিহ্ন। একসাথে চলার পথে ‘অংশগ্রহণ’ হলো বৃদ্ধি। একসাথে চলার পথে ‘প্রেরণ’ হলো গতিময়তা।
বিশপ জের্ভাস রোজারিও তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আমরা এই সিনোডে আলোচনা করব কিভাবে আমাদের ধর্মপল্লীগুলিকে স্বাবলম্বী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারি। বিদেশী মিশনারীদের কাছ থেকে আমরা শুধু খ্রিস্টবাণীই নয়, পেয়েছি অনেক সাহায্য সহযোগিতাও। বর্তমানে আমরা পূর্বের সেই দরিদ্র অবস্থায় নেই। বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং আগামী ২০৪১ খ্রিস্টাব্দে হবে উন্নত দেশ। এজন্য আমরা আর বিদেশী সাহায্য পাব না। সে বিষয় চিন্তা করে, এখনই আমাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা অর্জনের জন্য পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেই মণ্ডলি গড়তে আমাদের এখনও অনেক কিছু করতে হবে। সিনোড প্রস্তুতির পথরেখা অনুসরণ করে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। যা নিম্নরূপ-
(১) একত্রে পথ চলা, (২) শ্রবণ, (৩) কথা বলা, (৪) উৎসব উদযাপন, (৫) দায়িত্বের সহভাগিতা, (৬) সংলাপ (৭) আন্তঃমাণ্ডলিক ঐক্য, (৮) কর্তৃত্ব ও অংশগ্রহণ, (৯) নির্ণয় করা বা সমঝোতায় নির্বাচন করা (Discernment) এবং (১০) সিনোডাল পথ।
উক্ত ১০টি বিষয়ের উপর সহভাগিতা করেন যথাক্রমে সি. দিপালী আরেং, মিসেস মনিকা ক্রুশ, দিপু কুজুর, মিস্ প্রিয়াংকা গমেজ এবং মি. সেন্টু পল কস্তা।
সিনোড বিষয়ক ধারণা নিয়ে সুন্দর সহভাগিতা করেন ফা. দিলীপ এস. কস্তা। তিনি তাঁর আলোচনায় খ্রিস্টমণ্ডলি কি, সিনোড প্রসঙ্গ কথা ২০২৩, সিনোডের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, সিনোডের করণীয় দিক নির্দেশনা, সিনোডে অংশগ্রহণ ও ফলপ্রসূ করে তোলার কয়েকটি চিন্তা এবং প্রেরণ-দায়িত্ব (Mission) বিষয়গুলি অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা সহভাগিতা করেন।
স্থানীয় মণ্ডলিতে মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ বিষয়ে সহভাগিতা করেন মি. গাব্রিয়েল হাঁসদা, ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লী। তিনি তাঁর আলোচনায় স্থানীয় মণ্ডলি কি, স্থানীয় মণ্ডলির বৈশিষ্ট্য ও ভীতির বিষয়, মিলন নির্ভর করার বিভিন্ন দিক, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ প্রভৃতি বিষয়ের আলোকে উপস্থাপনাটি তুলে ধরেন।
সিনোডে স্থানীয় মণ্ডলি গঠনে মিলন- দক্ষিণ ভিকারিয়া, স্থানীয় মণ্ডলি গঠনে অংশগ্রহণ- মধ্য ভিকারিয়া এবং স্থানীয় মণ্ডলি গঠনে প্রেরণ-উত্তর ভিকারিয়া আলাদা আলাদা দলীয় কাজের পর তা উপস্থাপনের পর মুক্তালোচনা করা হয়।
‘একসাথে পথ চলার মাধ্যমে পেশাজীবির সক্রিয় স্থানীয় মণ্ডলি গঠন’ বিষয়ে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিবৃন্দের সহভাগিতায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি শিশু প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করে অধরা মার্টিনা ক্রুশ-ক্যাথিড্রাল, যুব প্রতিনিধি-মিলিসা গমেজ-রাজশাহী, প্রবীণ প্রতিনিধি মি. ইগ্নাসিউস গমেজ- মথুরাপুর, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধি- নিভা ধানোয়ার, আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধি- মার্কুশ মুরমু, কৃষক প্রতিনিধি- মি. রমনী বেসরা (সুরশুনিপাড়া), চিকিৎসক প্রতিনিধি- ডা. ডলি রাণী (বড়াইগ্রাম), শিক্ষক প্রতিনিধি- প্রফেসর সামসন হাঁসদা (চাঁদপুকুর), নার্স প্রতিনিধি- সুখী মারান্ডী (ক্যাথিড্রাল), ব্যবসায়ী প্রতিনিধি- মি. ক্লেমেন্ট কস্তা (বনপাড়া), এনজিও প্রতিনিধি- মি. সেবাষ্টিয়ান পিউরীফিকেশন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি- মি. দিলীপ হাঁসদা (কলিমনগর) এবং স্থানীয় সরকার ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধির মধ্যে সহভাগিতা করেন মেম্বার মি. ঈশ্বর টপ্প্য (ভূতাহারা) ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, মি. নিখিল খাঁ খাঁ (গুল্টা)। মাঞ্জহি প্রতিনিধি- মি. সন্তোষ টুডু (রহনপুর), দিঘরী প্রতিনিধি- মি. সুবীন কাউরিয়া (রহনপুর), বাইশী প্রতিনিধি- মি. অভিলাষ বিশ্বাস (বটতলা), পারগানা প্রতিনিধি- মি. সেবাষ্টিয়ান হেম্ব্রম (বেনীদুয়ার), ক্ষুদ্র খ্রিস্ট মণ্ডলির প্রতিনিধি- মিসেস মমতা গমেজ (বনপাড়া) , বৈঠকী সমাজের প্রতিনিধি- মি. আব্রাহাম কস্তা (ফৈলজানা), মারীয়া সংঘের প্রতিনিধি- মিসেস রাণী রিবেরু (বোর্ণী), এসভিপি প্রতিনিধি- মি. বার্নাবাস হাঁসদা (রহনপুর), ওয়াইসিএস প্রতিনিধি- কৃপা মার্ডী (ক্যাথিড্রাল), বিসিএসএম প্রতিনিধি-সৈকত কাউরিয়া (ক্যাথিড্রাল), প্যারিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধি- মি. রতন পেরেরা (বনপাড়া), অন্যান্য মণ্ডলির প্রতিনিধি- রেভা. মাইকেল সরেন, সিটি চার্চ এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধি- মি. বৈদ্যনাথ (ক্যাথিড্রাল) প্রমুখ।
অত:পর ধর্মপল্লী ও ভিকারিয়া পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ‘কর্মশালায় প্রাপ্ত প্রশ্নোত্তরের সংকলন ও সারাংশ’ উপস্থাপন করেন মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা, আহবায়ক, সিনোড কমিটি, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপস্থাপনা, পর্যালোচনা ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
এছাড়াও সিনোডে ভিকারিয়াভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সহভাগিতা, মুক্তালোচনা ও মূল্যায়ন এবং সিনোড ২০২২-এর অগ্রাধিকারসমূহ নির্ণয়ের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী সিনোড ২০২২ শেষ হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : মি: অসীম ক্রুশ (প্রতিবেদন কমিটির পক্ষে)