“ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথ চলা” এ মূলসুর ঘিরে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চলের উপজেলা পর্যায়ের সুবর্ণজয়ন্তী গতকাল নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার সরাইগাছীর কাতিপুর কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে উদযাপন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব সাধন চন্দ্র মজুমদার, এমপি নওগাঁ-১, (পোরশা-সাপাহার-নিয়ামতপুর), মাননীয় মন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি; বিশপ, রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব সালমা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পোরশা এবং রেভা. ফাদার রঞ্জিত কস্তা, ওএমআই, পাল-পুরোহিত, কাটাডাঙ্গা কাথলিক মিশন; জনাব ভুট্টু পাহান, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাপাহার, পোরশাসহ বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা/কর্মীবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উন্নয়ন মিত্র, যুবক-যুবতী, কারিতাসের সহযোগী সমিতির সদস্য সদস্যা এবং আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, সমমনা এনজিও প্রতিনিধিসহ সহস্রাধিক লোক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা, পরিচালক কর্মসূচি, কারিতাস বাংলাদেশ।

মাননীয় খাদ্য মন্ত্রী জনাব সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন, আদিবাসীদের উন্নয়ন তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কারিতাস দেশে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। দাতা সংস্থার নিকট হতে যে অর্থ সহায়তা পায় কারিতাস তা সঠিক ও সুন্দরভাবে ব্যয় করছে। তিনি আদিবাসীদের শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় হতে আদিবাসীদের শিক্ষা সংক্রান্ত যেসকল সহায়তা প্রদান করছে তার তথ্য তুলে ধরেন। আজ আাদিবাসী জনগণের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আর তা হয়েছে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার জন্য এবং কারিতাসের জন্য। আদিবাসীদের বর্তমান সমস্যা অনৈক্য, মতভেদ, অসচেতনতা, সামাজিক সংগঠনে বিরোধ, জমি নিয়ে সমস্যা ইত্যাদি। এ সকল সমস্যা হতে তিনি বের হওয়ার আহ্বান জানান এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসও দেন।

অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ডিডি বলেন, আদিবাসী ভাইয়েরা দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও অনেকে এখনো মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট পাননি। স্বাধীনতার সময় একমাত্র কারিতাসই ছিল সংস্থা। যে সংস্থা দেড় যুগ মানুষকে ঐ সময় খাদ্য সহায়তা করেছে। এছাড়া কারিতাস দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুদ্ধ পরবর্তী দেশ পুনঃগঠন, পানীয় জল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি বলেন, আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে কারিতাসের বিভিন্ন কাজে সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন এবং বলেন, আমরাও চাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশ যে উন্নয়নশীল হবে তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা, পরিচালক প্রোগ্রামস্ এলাকার জনগণ, জনপ্রতিনিধি, দাতা সংস্থা, প্রশাসনসহ সকল ব্যক্তিদের কারিতাসের কাজে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, জুবিলী উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো- আমরা কী করতে পেরেছি, কি করতে পারিনি, যা করতে পরিনি তার জন্যে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, একসময় বরেন্দ্র এলাকা ধুধুময় ছিল। কিন্তু কারিতাসের বিভিন্ন সময়ের উদ্যোগের কারণে বর্তমানে চতুর্দিকে সবুজায়ন। কারিতাসও এ এলাকায় ৪ লাখ বৃক্ষ রোপন করেন। এছাড়া পানীয় জলের জন্য ইন্দারা এবং পুকুর খননে কারিতাস বাংলাদেশে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতার পর কারিতাস প্রথম দেশে আলু বীজের মাধ্যমে আলু চাষ সম্প্রসারণ করেন। এভাবে কারিতাস শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাধি খাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আমরা মনে করি একা কোন কিছু করা যায় না। সকলকে নিয়ে আমরা কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতেও করতে চাই। সান্তাল বিদ্রোহ দিবসের সাথে কারিতাসের কাজের মিল রয়েছে। সান্তালরা অধিকার আদায়ে বিদ্রোহ করেছিল। কারিতাসও দুঃখী দরিদ্র মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করছে। তিনি কারিতাসের কাজে সকলের সর্বাত্মক সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে কারিতাস বাংলাদেশ ভালবাসায় ৫০ বছরের পথচলায় ঐতিহাসিক ও উল্লেখযোগ্য অর্জন সহভাগিতা করেন মি. কার্তিক মিঞ্জ, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, পোরশা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সালমা আক্তার, আদিবাসী নেতা মি. কর্ণেলিউস হাঁসদা, মি. বাবলু উরাও প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল- জুবিলী উপলক্ষ্যে বিশেষ মানবিক সহায়তা হিসেবে ২জনকে গৃহায়ন সহায়তা, ২০ জনকে শিক্ষাবৃত্তি সহায়তা, স্ব-নির্ভরতার চিহ্নস্বরূপ ২টি সমিতির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর, কারিতাসের ৫ দশকের কাজের চিহ্নস্বরূপ স্কুল ক্যাম্পাসে ৫টি বৃক্ষরোপন, আদিবাসী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কারিতাস পতাকা উত্তোলন ও কারিতাস সংগীত পরিবেশন, বেলুন-ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানো, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হতে পাঠ, সান্তাল বিদ্রোহ দিবসের স্মৃতির অংশ হিসেবে সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি। এছাড়া কারিতাস বাংলাদেশ- ভালবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথচলা বিগত ৫ দশকের ঐতিহাসিক, স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য অর্জন সহভাগিতা, কারিতাসের কার্যক্রমের উপর জীবনসাক্ষ্য প্রদান, অতিথিদের উত্তরীয় ও জুবিলী সম্মাননা স্মৃতি স্মারক প্রদান কার্যক্রমও অনুষ্ঠানে অন্তর্ভূক্ত ছিল। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা কারিতাসের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন ও কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মি. দীপক এক্কা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (ডিএম), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : অসীম ক্রুশ

Please follow and like us: