৩ জুলাই কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চলের ফাদার চেস্কাতো সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও নতুন আঞ্চলিক পরিচালকের অধিষ্ঠান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তাকে কারিতাস বাংলাদেশের পরিচালক, প্রোগ্রামস্ হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং মি. ডেভিড হেম্ব্রমকে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের নতুন আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে অভিভাদন জানানো হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি; বিশপ, রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, বিশপ, বরিশাল ধর্মপ্রদেশ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক, মি. গাব্রিয়েল কস্তাসহ বিভিন্ন স্তরের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা/কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মি. যোয়াকিম গমেজ, পরিচালক, অর্থ ও প্রশাসন, কারিতাস বাংলাদেশ ও অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মি. দীপক এক্কা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (ডিএম), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল এবং র‌্যান্সি রুথ হাঁসদা, কর্মসূচি কর্মকর্তা, আলোকিত শিশু প্রকল্প, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।

সদ্য বিদায়ী আঞ্চলিক পরিচালক এবং পরিচালক, প্রোগ্রামস্, কারিতাস বাংলাদেশ মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা মহোদয় বলেন, কারিতাস বাংলাদেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, সে হিসেবে আমি কারিতাসকে কিছুই দিতে পারিনি। আমি এ সংস্থায় বিভিন্ন গ্রেডে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি অর্থাৎ বর্তমান হিসাবে ৫ নং গ্রেড হতে ১২ নং গ্রেডে আর ১৩ নং গ্রেডে কাজ শুরু করব। তিনি কারিতাসের বিভিন্ন সম্পদের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে শহরে ও গ্রামে কারিতাসের ৭৫ বিঘা জমি রয়েছে। তন্মধ্যে নতুন যুক্ত করা হয়েছে ১৩ বিঘা। ৪৫টি অফিসের বিল্ডিং করার পরিকল্পনা আছে, ইতিমধ্যে ২১ টি অফিস বিল্ডিং-এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কর্মী পূর্বে ছিল ৫৪৩ জন, বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১,১৫৬ জন। এছাড়া রয়েছে স্টাফ কল্যাণ তহবিল, শিক্ষা তহবিল, প্রতিবন্ধী তহবিল, ইমারজেন্সি তহবিলসহ ১৩টি তহবিল যেখানে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা রয়েছে আর আমাদের উক্ত তহবিলে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ছিল ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার। তিনি অত্র এলাকার সবল দিক উল্লেখ করে বলেন, এখানে স্টাফদের মধ্যে রয়েছে টিম বিল্ডিং, ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব, পেশাদারিত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক সম্পদ। আর সীমাবদ্ধতার মধ্যে পেশাভিত্তিক সেক্টরাল কর্মকর্তা, স্বপ্ন দেখানের জন্য ভাল নেতা, নারী কর্মী তুলনামূলক কম এবং চাকুরীর নিশ্চয়তা না থাকায় দক্ষ কর্মী চলে যাওয়া ইত্যাদি। অপরদিকে, সুযোগ-সুবিধার মধ্যে স্টকহোল্ডারদের সাথে ভালো সম্পর্ক, চার্চের সাথে খুবই পজিটিভ সম্পর্ক, পার্টনারদের সাথে ভালো সম্পর্কসহ সরকারের সাথে ভালো সম্পর্ক। ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্রের আদিবাসীদের ভূমি, স্বাস্থ্য, ভাষা, অধিকার ইত্যাদি; জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কাজ, চরের মানুষদের সাথে কাজ করা, শিক্ষাক্ষেত্রে (ব্যক্তি ও সংস্থা পর্যায়ে) কাজ করা এবং চ্যারিটির মাধ্যমে আয় করা।

নব নিযুক্ত কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মি. ডেভিড হেম্ব্রম, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ও উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমাদের পদ শুধু রূপান্তর হয়। পরিচালক, প্রোগ্রামস্ ঢাকায় গেলেও নির্দেশনা দিবেন কারণ তিনি আমাদেরই মানুষ। তাঁর যে গুণগুলো রয়েছে সেগুলো শুনেছি, আমিও চেষ্টা করবো তিনি যেভাবে কাজ করে গেছেন সেভাবে কাজ করতে। আপনারা অনেক প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সেই প্রত্যাশা অর্জনে চেষ্টা করব, এ কথা দিতে পারি। দাতা সংস্থার পাশাপাশি আমরা স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করবো।’’

বরিশাল ধর্মপ্রদেশের নব নিযুক্ত পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও নবনিযুক্ত আঞ্চলিক পরিচালক ও প্রাক্তন আঞ্চলিক পরিচালকগণকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি তাঁদেরকে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হয়ে উঠার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারিতাসের মাধ্যমে জনগণকে যা কিছু দিই তা পর্যাপ্ত নয়, কিন্তু আমাদের রয়েছে হৃদয় ভরা ভালোবাসা। আর কারিতাস পরিবারের সদস্য হয়ে আমাদের সকলের হৃদয়ে ভালোবাসা থাকা দরকার। যে ভালোবাসা আমরা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি।’’

পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জেভার্স রোজারিও ডিডি, এসটিডি, তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল এক নম্বর অঞ্চল হয়ে উঠছে। প্রাক্তন আঞ্চলিক পরিচালক মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তার টিম বিল্ডিং ও দূরদর্শিতার সাথে রাজশাহী কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চলে। তারই একটি দৃশ্যমান চিহ্ন হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে এ অঞ্চলের বিল্ডিং নির্মাণ করা। তিনি মি. কস্তার বিভিন্ন কাজ উল্লেখ করে বলেন, তিনি কারিতাসের সকল কাজের পাশাপাশি ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় সম্মেলন, শিক্ষা কমিশন, যুব কমিশন, নতুন ধর্মপ্রদেশের জন্য জরিপ কাজে সহায়তা, ধর্মপ্রদেশীয় সিনোড-এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন কাজে কার্যকরি ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

নবনিযুক্ত আঞ্চলিক পরিচালকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘নবনিযুক্ত আঞ্চলিক পরিচালকও একজন দক্ষ মানুষ, আদিবাসী জাতীগোষ্ঠীর। আমি তাঁদেরকে স্বাধীনতা দিতে চাই, যাতে তারা সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। সকল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে সকলের জন্য কাজ করতে হবে।’’

অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন মীর মো. জানে আলম, এরিয়া ম্যানেজার (সিএমএফপি), মি. শিশির কস্তা, সহকারী আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সিএমএফপি),  রুথ হাঁসদা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (আলোকিত শিশু), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল; মি. কার্তিক মিঞ্জ, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, (সিএমএফপি)। তাঁরা সদ্য বিদায়ী আঞ্চলিক পরিচালক হতে পদোন্নতি পাওয়া মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিভিন্ন গুণাগুণ উল্লেখ করেন এবং তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের সফলতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জনাব আব্দুস সামাদ মন্ডল, আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল; মিসেস সিসিলিয়া মারান্ডী, সদস্য, কারিতাস জিবি; রেভা. ফাদার উইলিয়াম মুর্মু, চ্যান্সেলর, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল এবং মি. গাব্রিয়েল হাঁসদা, প্রাক্তন কর্মী কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।

পরিশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি মি. যোয়াকিম গমেজ, পরিচালক, অর্থ ও প্রশাসন, উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমরা একসাথে সুন্দরভাবে কাজ করে সংস্থার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সবশেষে তিনি সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : অসীম ক্রুশ

Please follow and like us: