গত ৭ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৪:৩০ টা হতে সকলের অধীর অপেক্ষা শেষে বিকেল ৬:২০ মিনিটে নেচে, গেয়ে, আনন্দে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন ধর্মপল্লীর সন্তান বরিশালের মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও ও তাঁকে সাথে করে নিয়ে আসা রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও’কে! গির্জা হতে এক কিলোমিটার পথ এমনি আনন্দ উল্লাসে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয় গির্জাঘরে! একসাথে প্রার্থনা এবং প্রার্থনা শেষে নব মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল তার অনুভূতি তুলে ধরেন ঠিক এভাবে-আমি আজ গভীর আনন্দের সাথে পরম পিতার ঐশ অনুগ্রহের আনন্দ সহভাগিতা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে নিজ মাতৃ ধর্র্মপল্লীতে ফিরে এসেছি। যিশু যেমন তার প্রচার কাজে শুরু করার পূর্বে তার নিজ জন্মস্থানে গিয়েছিলেন আমিও আমার এই প্রেরণ কাজ শুরু করার আগে জন্মভূমিতে এসেছি যেন আপনাদের আশির্বাদ প্রার্থনা নিয়ে ঈশ্বরের দেয়া অর্পিত দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে তার মহিমা ঘোষণা করতে পারি। অতঃপর শেষ আশির্বাদ ও শুভেচ্ছা বাণীর মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয় বরণ অনুষ্ঠান! পরে মনোনীত বিশপ তাঁর আত্মীয় স্বজনসহ প্রয়াত পিতামাতার সমাধিতে কিছুক্ষণ প্রার্থনায় কাটান!

৮ জুলাই হাস্যোজ্জল সকালে গভীর আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সকল খ্রিস্টভক্তগণ নির্ধারিত সময়ের আগেই গির্জাঘরে উপস্থিত হন। সকাল ৮:৩০ টায় শুরু হয় পবিত্র খ্রিস্টযাগ! মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল কাননের পৌরহিত্যে ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিওসহ আরও ৮জন যাজক এই সহার্পিত খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন!

খ্রিস্টযাগের উপদেশে বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও বলেন- ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সকলকে আজকের এই খ্রিস্টযাগে প্রার্থনা করতে সমবেত হওয়ার জন্য। আজ আমরা এখানে এসেছি ঈশ্বরের আহ্বানে ঈশ্বর আমাদের সর্বদাই ডাকেন। আর ডাকেন বলেই আমরা তার কাছে আসি। তাঁর দয়া বা অনুগ্রহ লাভের মধ্যদিয়ে আমরা তার কাজ করি বা তার কাছে যাই। কারণ, আমরা যখন তার কাছ থেকে দূরে সরে যাই তখন তিনি আমাদের আহ্বান করেন যেন আমরা তার কাছে ফিরে আসি। নিজেদের মন পরিবর্তন করি। আর এই মন পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আমরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে জীবন কাটাতে পারি।

রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন- উপস্থিত বরিশাল ধর্মপ্রদেশের মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, সকল ফাদার-সিস্টারগণ এবং প্রিয় খ্রিস্টভক্তগণ সকলকে জানাই প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। তার এই গুরু দায়িত্ব লাভ আমাদের ধর্মপ্রদেশের জন্য যেমন আনন্দের তেমনি ফৈলজানাবাসীর জন্যও তা অত্যন্ত আনন্দের। ফৈলজানা ধর্মপল্লী থেকে একজন সন্তান বিশপ হবেন এটা কি আশ্চর্য কাজ নয়? অবশ্যই আশ্চর্যকাজ, আর এই আশ্চর্যকাজ সম্পন্ন করেছেন ঈশ্বর নিজেই!

ফৈলজানা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার এ্যাপোলো রোজারিও বলেন- আজ আমরা ফৈলজানার খ্রিস্টভক্তরা খুবই আনন্দিত। কেননা, আমাদেরই সন্তান ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ পদে মনোনীত হয়েছেন। আর তার অভিষেক লাভের পূর্বে আমাদের সঙ্গে তার আনন্দ সহভাগিতা করতে এসেছেন। আমি বলতে চাই, মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল আমাদের ধর্মপল্লীর গর্ব। আজ আমরা তাকে নিয়ে অবশ্যই গর্ব করব তবে সেই সাথে সাথে তার জন্য প্রার্থনাও করব যেন তিনি তার নতুন কর্মক্ষেত্রে তার ধর্মপ্রদেশে সুন্দরভাবে কাজ করে যেতে পারেন। মাতৃ ধর্মপল্লী হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের এই গর্বিত সন্তান নব মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েলের জন্য প্রার্থনা করা। কেননা, তিনি যেখানেই যাবেন সেখানেই এই ফৈলজানা বাসীর পরিচয় বহন করবেন।

পালকীয় পরিষদের সহ-সভাপতি মি: প্রণব পেরেরা বলেন- বরিশাল ধর্মপ্রদেশের মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’কে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাই। কেননা, তিনি ঈশ্বরের মহান ইচ্ছাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। তিনি হলেন ফৈলজানাবাসীর গর্ব। তাই আমরা তার জন্য প্রার্থনা করব। তিনি যেন তার ধর্মপ্রদেশে সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।

খ্রিস্টযাগ শেষ হবার পর ধর্মপল্লীর পক্ষ হতে মনোনীত বিশপ ও ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয়কে ফুলের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়!

আজ আমরা ঈশ্বরের গৌরব ও প্রশংসা করি মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’র জন্য। ঈশ্বর তাঁর মনোনীত এই ভক্তসেবকের মধ্যদিয়ে যেন অনেক মানুষের জীবনে মঙ্গল ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসেন! মনোনীত বিশপ ইম্মানুয়েল ফৈলজানা ধর্মপল্লীবাসীর জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত এক অনুগ্রহের চিহ্ন!

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার বাবলু সি. কোড়াইয়া

Please follow and like us: