গত ৬ থেকে ১১ অক্টোবর সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার এর ধর্মপল্লী ফৈলজানাতে ১২৯ জন যুবক যুবতীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব দিবস ২০২২।
প্রথমদিন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিওসহ বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত যুবক যুবতীদের কীর্তন এবং মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নেয় ফৈলজানাবাসী ।
যুব দিবসের সূচনা হয় পবিত্র যুব ক্রুশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে , ৬ তারিখ বিকেলে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে যুব ক্রুশ স্থাপনের মধ্য দিয়েই যুব দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগে বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন , “যুব ক্রুশ হলো যুব আধ্যাত্মিকতার মূল, আর এই ক্রুশের সাথে যুবক যুবতীদের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্যই ক্রুশকে যুব দিবসের প্রাণ কেন্দ্রে রাখা হয়”। রাতের খাবারের পর স্থানীয় কৃষ্টির মধ্য দিয়ে সকলকে বরণ করেন স্বাগতিক ধর্মপল্লীর যুবারা, এছাড়া পরিচয় পর্ব সহ নানান সব আয়োজনে শেষ হয় প্রথম দিন।
দ্বিতীয় দিন পবিত্র খ্রিস্টযাগের পর ছিল বর্ণাঢ্য র্যালী, এতে সকলে নিজ নিজ কৃষ্টির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশগ্রহণ করে। র্যালী থেকে ফিরে আসার পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার এ্যাপোলো রোজারিও, সিএসসি ও প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং একই সাথে যুব কমিশনের পতাকা উত্তোলন করেন যুব সমন্বয়কারী ফাদার নবীন পিউস কস্তা এবং সহ যুব সমন্বয়কারী ফাদার প্রশান্ত আইন্দ , এ সময় জাতীয় সংগীত চলতে থাকে। পতাকা উত্তোলনের পর শপথ বাক্য পাঠ করা হয়। এরপরে শুরু হয় স্টল এবং দেয়ালিকা কর্নার উদ্বোধন এবং পরিদর্শন।
বিকেলে নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতির মূল্যবোধ অনুসন্ধানে যুবারা নিজ নিজ জাতি গোষ্ঠী অনুসারে দলীয় আলোচনা করে এবং তা উপস্থাপনা করে, এতে করে বিভিন্ন সংস্কৃতির বিভিন্ন ভালো এবং খারাপ দিকগুলি উঠে আসে।
এবছরের মুলসুর “মারিয়া উঠে সঙ্গে সঙ্গে যাত্রা করলেন”- এর উপর সহভাগিতা করেন ফাদার যোহন মিন্টু রায়। সন্ধ্যায় ক্রুশের অর্চনা করা হয়। রাতে খাবারের পরে ছিল সেন্ট আলইসিউস এর ওপর উত্তর ভিকারিয়ার ভূতাহারা ধর্মপল্লীর নাটিকা উপস্থাপন ও বন্ধু খোঁজার পর্ব, নির্দিষ্ট টোকেনের মাধ্যমে যুবারা একে অপরের বন্ধুদের খুঁজে নেয় এবং তাদের সাথে পরিচিত হয়। কিছুক্ষণ পরে যুব ক্রুশের সামনে তৈরি কৃত একটি জীবন বৃক্ষে যুবক যুবতীরা তাদের বন্ধু সম্পর্কে কাগজে লিখে আটকে দেয়।
পরের দিন খ্রিস্টযাগ এবং সকালের নাস্তার পর প্রথম অধিবেশন নেন ফাদার দিলীপ এস. কস্তা, তার সেশনের বিষয় ছিল সিনোডাল মণ্ডলি: মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ: প্রেক্ষিতে যুবসমাজ। তার এই সেশনের পর যুব কাউন্সিলিং নিয়ে সহভাগীতা করেন ফাদার রিপন। যুবারা কেন আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, এর কারণ কি এবং এ থেকে ফিরে আসতে আমাদের করণীয় দিকসমূহ – এই সকলই ছিল তার আলোচ্য বিষয়। উপাসনা বিষয়ক নির্দেশনা নিয়ে ফাদার শ্যামল গমেজ বলেন “উপাসনা হচ্ছে খ্রিস্ট মণ্ডলির প্রাণ, আর তাই সঠিকভাবে উপাসনায় অংশগ্রহণ করা আমাদের কর্তব্য”।
সন্ধ্যা প্রার্থনার পর নাটক উপস্থাপন করে মধ্য ভিকারিয়ার পক্ষে সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লী এবং দক্ষিণ ভিকরিয়ার পক্ষে ফৈলজানা ধর্মপল্লী , এরপরে শুরু হয় ফায়ার ক্যাম্প। আগুন আশীর্বাদের মধ্য দিয়ে ফায়ার ক্যাম শুরু । বিভিন্ন কৃষ্টি সংস্কৃতির যুবারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে নেচে গেয়ে মেতে ওঠে এবং কয়েকজন ফাদার সিস্টার তাদের জীবন আহ্বান সহভাগিতা করেন ,তারা বলেন কিভাবে তারা তাদের জীবন আহবান নির্ণয় করতে পেরেছেন। ফায়ার ক্যাম্প শেষে অংশগ্রহণকারী সকল যুবক-যুবতী ক্রুশের সামনে গিয়ে প্রার্থনা করেন।
পরের দিন সকালে “আমাদের জীবন কেমন হওয়া উচিত” এ বিষয়ে সহভাগিত করেন ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী, একই সাথে “পবিত্র বাইবেল আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি” এ বিষয়ে সহভাগিতা করেন ফাদার পলাশ হেনরি গমেজ। শেষে ফাদার নবীন পিউস কস্তা গ্রাম পরিদর্শন সম্পর্কে কিছু দিক নির্দেশনা দেন। দুপুরের খাবারের পর সকলে গ্রাম পরিদর্শনে বের হয়। পরের দিন বিকেলে গ্রাম পরিদর্শন শেষে সকালে ফিরে এসে তাদের দলীয় উপস্থাপনা সহযোগিতা করে।
১০ তারিখ বিকেলে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও, সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন এবং খ্রিস্টযাগ শেষে যুব প্রতিজ্ঞা পাঠ করান। যুব প্রতিজ্ঞা পাঠ করার পরে ভূতাহারা ধর্মপল্লীর প্রতিনিধিদের হাতে যুব ক্রুশ হস্তান্তর করেন। এতে ভূতাহারা ধর্মপল্লীর যুবক-যুবতিসহ সকলেই আনন্দে মেতে ওঠে ।
রাতের খাবারের পর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং দেয়ালিকা ও নাটিকা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী । পুরস্কার তুলে দেন ফাদার নবীন পিউস কস্তা এবং যুব দিবস-২০২২ এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন ।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস
Please follow and like us: