Synodal Life Style of the priests in a Parish এ মূলভাবকে কেন্দ্র করে গত ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো ধর্মপ্রদেশীয় যাজকবর্গের বার্ষিক সেমিনার। এ সেমিনারে উপস্থিত ছিল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ভিকার জেনারেল ফা: ফাবিয়ান মারান্ডী, চ্যাঞ্চেলর ফা; প্রেমু রোজারিও, ধর্মপ্রদেশের উন্নয়ন প্রশাসক ফা: উইলিয়াম মূর্মূসহ ধর্মপ্রদেশের কর্মরত বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৪১ জন ফাদার। প্রার্থনা ও বাইবেল পাঠের মধ্যদিয়ে সেমিনারের কার্যক্রম শুরু করা হয়।

শ্রদ্ধেয় বিশপ তার স্বাগত বক্তব্যে বিভিন্ন কমিশনের কনভেনর ও সেক্রেটারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী পর্যায়ে কমিশনের কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়িত হয়। এই মিটিং-এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো সুনির্দিষ্ট বিষয় ও ক্রস কাটিং বিষয়গুলো রয়েছে তা বাস্তবায়ন ও কোন কার্যক্রম যেন ওভারল্যাপিং না হয় সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা। সেই লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন কমিশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমন্বয় সাধন করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ধর্মপ্রদেশের অগ্রযাত্রা ও বিভিন্ন কমিশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধর্মপ্রদেশ জীবন্ত ও সক্রিয় হয়ে উঠে। ব্যস্ততা ও বিভিন্ন কার্যক্রমের অযুহাতে কোন কাজ যেন অবহেলা না করা হয় সেই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। সকল কমিশনের কার্যক্রমই ভালো চলছে তবে আগামীতে আরো ভালো করা যেতে পারে কেননা, ভালোর শেষ নেই।

ফা: দিলীপ এস.কস্তা মূলভাবের উপর বক্তব্যে বলেন -পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলির ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। ধর্মের আহবান হলো কল্যাণ ও মঙ্গলকে ধারণ করা এবং সাধনার গুণে পরম সত্ত্বার সাথে মিলিত হওয়া। ধর্মের মূল শিক্ষা ও আহবান হলো পরমসত্ত্বা বা জীবনস্রষ্টার সাথে মিলন। মিলন হলো পরমানন্দ, জীবনের পরিপূর্ণতা ও পরম তৃপ্তি। খ্রিস্টীয় সঙ্গীতে গাওয়া হয়, ‘মিলনের তরে কাঁপিছে হিয়া এসো প্রিয় এসো হে’। বিশ্ব বরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬২-১৯৪২) মিলনের আহবানে সুরে সুরে বলেন, “আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কি সত্ত্বে ¡”। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যাত্রা হলো পরম পিতার দিকে, একা নয়, সমবেতভাবে মিলনের আহবানে। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস তার আহবান সিনোডাল মণ্ডলি গড়ে তোলা অর্থাৎ মিলনধর্মী মণ্ডলি, সমাজ ও পরিবার গড়ে তোলা। ধন্য আন্তনী বাসিল মরো’র আহবান ‘একা গড়ে না কেউ, গড়ে অনেকে মিলে’। তাই, দীক্ষিত খ্রিস্টভক্ত হিসেবে মিলনের চেতনা, আনন্দ ও প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে যাই মিলন সমাজ গড়ার লক্ষ্য পথ ধরে। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য সিনোড হলো একসাথে পথ চলার একটি নিমন্ত্রণ। এই নিমন্ত্রণে ‘সত্যময় আত্মার কন্ঠস্বর শ্রবণ করার (যোহন ১৪: ১৭) এবং পিতার ইচ্ছা বুঝতে চেষ্টা করার আহবান জানানো হয়। মিলনধর্মী মণ্ডলি গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক সাক্ষাৎ (Encounter), শ্রবণ বা শোনা (Listen) এবং নির্ণয় করা (Discernment)। পোপ ফ্রান্সিস সিনোডাল মণ্ডলি বিষয়ে বলেন, “যে জগতে আমরা বাস করি এবং যে জগতে ভালবাসতে ও সেবা করতে আহুত, এখানে অসঙ্গতি থাকলেও, মণ্ডলির কাজে এটি দাবী করা হয় যে, মণ্ডলি তার প্রেরণ দায়িত্বের ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। এই কাজ করার ডাক হচ্ছে ঐশজনগণের প্রতি সহায়তা সম্প্রদানের ডাক। মিলনের মাঝেই জীবন স্রষ্টার উপস্থিতি। যিশু বলেন যেখানে, “দুই বা তিন জন আমার নামে একত্রিত হয় সেখানে আমি তাদের মাঝে উপস্থিত”। তাই, আসুন সকলেই মিলনের প্রচেষ্টা করি ঈশ্বরের সাথে, বিশ্বপ্রকৃতির সাথে, মানুষের সাথে এবং ধর্মপল্লীর সকল শ্রেণীর ভক্তজনসাধারণের সাথে। স্রষ্টার সাথে একাত্ত্বতা ও নিবিড় সম্পর্ক (কলসীয় ১: ১৫-১৭) গড়ে তুলি।

আলোচনার পরে ভিকারিয়া ভিত্তিক দলীয় আলোচনা করা হয়। অত:পর দলীয় প্রতিবেদনও পাঠ করা হয়। সবশেষে উন্মুক্ত আলোচনার মধ্যদিয়ে সেমিনারের কার্যক্রম শেষ করা হয়।

বরেন্দ্রদূত নিজস্ব রিপোর্টার

Please follow and like us: