গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ধর্মপ্রদেশীয় যাজকীয় ও ব্রতধারী/ব্রতধারীনিদের জন্য কমিশনের উদ্যোগে ‘ ব্রতীয় জীবনে মিলনানন্দ ও সহভাগিতা’ মূলসুরকে সামনে রেখে ধর্মপ্রদেশে সেবাদানরত ফাদার-ব্রাদার ও সিস্টারদের জন্য নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করা হয় বিশপ ভবনে। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয়সহ আরও ৫৯ জন ফাদার- ৩ জন ব্রাদার, ৫৫ জন সিস্টার ও ৯ জন সেমিনারীয়ান অংশগ্রহণ করেন।
নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপনকারী সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের ধর্মপল্লী বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করেছি। আর আজ আমরা আমাদের ধর্মপ্রদেশ পর্যায়ে সকলে মিলে একসঙ্গে নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করছি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমরা সকলে এখানে মিলিত হয়ে এই নিবেদিত জীবন দিবসটি উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি বলে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেই, শ্রদ্ধেয় ফাদার সৃজনকে নিবেদিত জীবন দিবস উপলক্ষ্যে একটি সুন্দর, তাৎপর্যময় অনুধ্যান দেবার জন্যে এবং আমাদেরকে প্রত্যেককে মিলনের আনন্দের আহ্বানে আলোকিত করার জন্যে। সর্বোপরি সকলকে নিবেদিত জীবন দিবস উপলক্ষ্যে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকের এই নিবেদিত জীবন দিবস উদযাপন করতে গিয়ে যে মূলসুরটিকে আমরা বেঁছে নিয়েছি তা হলো “ব্রতীয় জীবনে মিলনানন্দ ও সহভাগিতা।” ব্রতীয় জীবনে যদি মিলন ও সহভাগিতা না থাকে তাহলে আমাদের জীবন হয়ে পড়ে মূল্যহীন। তাই, এই মিলন, আনন্দ ও সহভাগিতার মধ্যদিয়েই আমাদের নিবেদিত জীবনটাকে সাজাতে হবে। ক্ষুদ্র পুষ্প সাধ্বী তেরেজা নিত্য দিনের ছোট ছোট কাজগুলো বিশ্বস্ততার সাথে, আনন্দ সহকারে এবং ভালোবাসার সাথে করতেন। তাই তার প্রতিটি কাজে লক্ষ্য করা যেত এক আনন্দময় অনুভূতির। বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সহযোগিতা থাকলে, ছোট ছোট কাজগুলো হয়ে উঠবে এক একটি মহৎ কাজ।
ফাদার সৃজন, এস.জে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই তাড়না আছে সম্পর্ক গড়ার। এটি হচ্ছে মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে বা কোন বিষয়টি আমার মধ্যে সে তাড়না সৃষ্টি করে? এটি আর অন্য কেউ নয় এ হলো স্বয়ং ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বর। ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বর আমাদের মতো মানুষের মধ্যেই বাস করেন। অতএব, মানুষের মধ্যে অনবরত মিলনের তাড়না বা তাগিদ চলমান। আমাদের কাথলিক মণ্ডলির যে বিশ্বাস মন্ত্র রয়েছে সেখানেও এ মিলনের একটি তাগিদ পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ আমার মধ্যে যা আছে সেটা আমি অন্যকে দিতে চাই অর্থাৎ অন্যদের সঙ্গে আমি মিলিত হওয়া মানুষের একটি চিরন্তন চাওয়া। সেজন্যে, যে কোন ভাবেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে মিলনাবদ্ধ হতে চায়। অর্থাৎ মানুষ সম্পর্ক তৈরী করতে পছন্দ করে। আর ঈশ্বর নিজেই একজন যোগাযোগকারী। আর সেজন্যেই আমরা দেখি যে, ঈশ্বর যখন এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি বলেছেন যে, এসো আমরা মানুষকে সৃষ্টি করি।’ ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বরের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় একতা ও মিলনের একটি আহ্বান। অর্থাৎ প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বরের উপস্থিতি দেখতে পাই। মণ্ডলি শব্দের মধ্যেই আমরা মিলনের একটি সূর শুনতে পাই। অর্থাৎ মণ্ডলি মানেই হলো মিলন সমাজ। আমাদের মানবতাই হচ্ছে মণ্ডলি। সেজন্য বলা যায়, মিলনের মধ্যেই আনন্দ নিহিত আছে। সহজভাবে বলতে পারি, মিলনে আনন্দ। আর এই মিলন হতে হবে মানুষের সাথে মানুষের। আর এই মিলনের জন্য আমাদেরকে অন্বেষণ করতে হবে বা খুঁজতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাঁকে খুঁজবো? আমার স্বত্ত্বার মধ্যেই আমি ঈশ্বরকে খুঁজবো এবং সেই সাথে ঈশ্বরের উপস্থিতি খুঁজবো মানুষের মধ্যে। যখন এই মিলনের জন্যে আমরা একে অন্যকে খুঁজবো, আলিঙ্গন করবো, সেখানেই হবে আনন্দের পূর্ণতা।
বরেন্দ্রদূত নিজস্ব রিপোর্টার