ফাদার পিউস গমেজ

শিক্ষা জাতীয়করণের ভাবনা ও প্রত্যাশা নাগরিক হিসেবে যুক্তিযুক্ত! তবে যে দিকগুলো প্রায়শঃ আলোচিত বিষয়গুলো যদি তেমনই হয় এবং তার ফল প্রত্যাশা মাফিক পর্যায়ক্রমে আসবেই, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা আসলেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে আনবে!

তবে এক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না যে, এই পরিবর্তন চেয়ে চেয়ে আজ অবধি আমরা একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখাই দাঁড় করাতে পারিনি! পরীক্ষামূলক ভাবনা আর স্থায়ীত্বের কাঠামো হচ্ছে না! পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেখে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা বেশির ভাগ স্কুল কলেজই এখন ভাল ফলাফল করছে ! কিন্তু এমনটিও দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষক তার সন্তানকে নিজ কর্ম-স্কুল বা কলেজে না পড়িয়ে বেসরকারি, আধা-সরকারি, মিশনারি বা অন্যকোন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছেন! উনারাও শিক্ষার জাতীয়করণের দিকেই মত দেবেন! কিন্তু স্বার্থটি কোথায়?! পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও বেসরকারি বা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও দিব্বি চলছে! এটা আমরা নিজেরাই বের করতে পারবো! জাতীয়করণের মধ্যেই কি বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের পথ নিহিত? যদি অন্য কোন প্রয়োজন বা প্রাপ্তির ব্যাপ্তি প্রসারিত করা দরকার হয়۔۔۔সম্ভাব্য অন্য পথগুলো আমাদের অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার!

প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক۔۔۔শিক্ষার্থীরা কোচিং, প্রাইভেট ও সহায়িকা নির্ভরতা হতে বের হতে পারছে না! অবস্থা এমন স্কুলের চেয়ে প্রাইভেট কোচিং বেশি গুরুত্বপূর্ণ! করোনার ক্ষতির চেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অমনোযোগিতার জন্য আমি এটাকেই বর্তমানের মূল কারণ বলে মনে করি!

সরকারি স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক একদিন বলছিলেন۔۔۔ শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে আর কয়েকটা প্রাইভেট পড়বে এতেই মনে করে কি যেন হয়ে গেলাম! তারা বেশির ভাগই বই পড়তে, বহন করতে ও ধরতেই চায় না! চাপে পরে কেউ কেউ পড়তে বসে, বই ধরে কিন্তু পড়ার ভিতরে প্রবেশ করছে না!

স্কুলে ভাল result করছে মানে না আমাদের সন্তানেরা অনেক মেধাবী হওয়া সত্বেও সঠিকভাবে মেধার অনুশীলন করছে! একটা স্কুল এ 100% বা 50% A+ কিংবা অনেক গোল্ডেন পেলেই অহংকারের পারদ যেন আকাশ স্পর্শ না করে! শুধু রেজাল্টের আকাশ ছোঁয়ার চিত্র বর্তমানে আর শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধিকে একই স্কেল এ রাখছে না! তার প্রমাণ পরবর্তী শিক্ষা ধাপ ও কর্মক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে!

শিক্ষার জাতীয়করণসহ আরও অনেক শুভ পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশে আসুক! তবে সময় নিয়ে ও ভেবে চিন্তে! প্রতিটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্ক্ষলা ও অনুকূল পরিবেশ প্রথমে নিশ্চিত হওয়া অনেক বেশি দরকার! তবে কথাগুলো ঢালাওভাবে নেবার ও বিতর্কিত করার জন্য নয়! আমরা আন্তরিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে যথার্থভাবে সেবা দিতে সক্ষম হলে পরিবর্তনের যাত্রা এখানেই সূচিত হবে! আমাদের শিক্ষার্থীরা যারা সঠিকভাবে বড় হচ্ছে তারাও শিক্ষকদের সম্মান, জীবনমান ও অন্যদিকে আবার শিক্ষার মান নিয়ে অনেক শংকিত! উত্তরণের পথ খুঁজে ক্ষান্ত হলেই কাজ হবে না! সে পথে হাঁটা প্রয়োজন!

আমাদের মতো সকলেরই প্রত্যাশা এ শঙ্কা কেঁটে যাবে একদিন! অন্ধকার রাত্রি শেষে দিবালোকের শুভ যাত্রায় ঠিক যেভাবে দেখা দেয় সূর্যালোক! সে আলো আমাদের হোক, হোক সকলের! বের করে আনুক সকল কুপমুণ্ডুকতার বেড়াজাল! যাহাই জানি থাকুক অভিজ্ঞতার ভিত্তি হয়ে আর শেখা শুরু হোক আরও নতুন কিছু শূন্য হতে! আমাদের হাতেই আগামীর প্রদীপ! যেন জ্বেলে যেতে পারি অনেকের অন্তরে!

Please follow and like us: