ফা. সুশীল লুইস পেরেরা

ভূমিকা: মানুষের একটি বড় দিক ও বৈশিষ্ট্য হল তাদের মুখের ভাষা। ভাষা হল মানুষের পরিচয়, নিজেদের অস্তিত্ব ও প্রকাশের মাধ্যম। আমাদের নিজেদের প্রাণের ভাষার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বীর ভাষা শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি জানাই আন্তরিক ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্তদের মধ্যে বাংলাসহ রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি ভাষা। যেমন: সান্তালী, ওরাঁও, মুন্ডা, পাহাড়ীয়া, মাহালী, মান্দি প্রভৃতি। মানুষ নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে, লিখতে, পড়তে, উপাসনা করতে ভালবাসেন, স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সে আঙ্গিকে বিবেচনা করলে বলতে হবে যে, ধর্মপ্রদেশে প্রচলিত সকল ভাষা সমভাবে যত্ন, রক্ষা, প্রচলন ও উন্নয়ন করা নিজেদের বড় প্রয়োজন। সেসব ক্ষেত্রে মণ্ডলির পরিচালক, ভক্ত, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, প্রবাসী, সেবাকারী সকলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখন বিশেষ কথা হল: স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এ ভাষাগুলির যত্ন-রক্ষা, উন্নয়ন ও সমন্বয় করার ক্ষেত্রে মণ্ডলির বিভিন্ন পর্যায়ে সকলের ভূমিকা কোথায়, কিরূপ হতে পারে? আমি মনে করি মণ্ডলির পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জড়িত সকলে সচেতন, তৎপর ও সক্রিয় হলে সব স্তরে এ বিষয়ে দ্রুত ও স্থায়ী অনেক কিছু করা সম্ভব। তবে বড় কথা হল সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাষা বিষয়ে সচতেন হয়ে নিজ নিজ ভাষা ভালবাসতে হবে, সম্মান ও গুরুত্ব দিতে হবে, ভাষা উন্নয়ন ও রক্ষায় ব্যাপক কাজ করতে হবে।

মণ্ডলির বিবেচনার দিক:
আদিবাসীদের বাংলা ভাষা ও নিজেদের ভাষা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে মণ্ডলিকে তাদের সহায়তা ও পরিচালনা দিতে হবে। এজন্য ধর্মপ্রদেশে তাদের সহায়তা ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম ও পদক্ষেপ থাকতে পারে; যেমন প্রকাশনা, ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণ, ভাষা দিবস পালন, বিভিন্ন ভাষার জরীপ, ভাষার মর্যাদা দান প্রভৃতি। সকল আদিবাসীকে বাংলা ভাষা ভাল শিখতে হবে কারণ সেটা হল দেশের ভাষা, লেখাপড়ার, চলার, জীবন গড়ার ভাষা, কাজ ও উন্নতির ভাষা। অন্যদিকে নিজেদের ভাষা যত্ন করা, রক্ষা করা নিজেদের বিশেষ প্রয়োজন। কারণ সেটা হল তাদের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা, সংস্কৃতির ভাষা, আত্মপ্রকাশের ভাষা, সম্পর্কের ভাষা, অস্তিত্বের ভাষা, উন্নতির ভাষা। ধর্মপ্রদেশে স্থান-পাত্র অনুসারে বিভিন্ন ভাষা রয়েছে এসবের রক্ষা ও উন্নতির জন্য সবাইকে একত্রে ও সমান্তরালে কাজ করতে হবে। মানুষের যেমন থাকে দুটি হাত তেমনি ধর্মপ্রদেশের নানা ভাষাভাষি মানুষের কথা-শিক্ষা ও জীবন যাপনের দুটি হাত: একটি হল দেশের ভাষা বাংলা আর অন্যটি হল স্ব স্ব দলের নিজেদের মায়ের ভাষা। তাদের দুটি ভাষাতেই সমান পারদর্শী, “দোভাষী” হতে হবে তবেই তারা সমান তালে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এমন কী প্রয়োজনে প্রতিযোগিতা ক’রেও চলতে পারবে। এখানে ধাপে ধাপে নিজেদের করণীয় কিছু দিক দেখানো হল:

ক- ধর্মপল্লী/প্রতিষ্ঠান থেকে করণীয় কিছু দিক হতে পারে:

– মণ্ডলি নানা ভাষার মানুষদের বিশেষভাবে ছাত্র ছাত্রী, যুবাদের নিজেদের ভাষা আয়ত্ব করতে উৎসাহ ও পরামর্শ দিবে, বাস্তবতা অনুসারে তাদের ভাষা শিক্ষা-চর্চার ব্যবস্থা ও সুযোগ ক’রে দিবে।
– মণ্ডলির বিচিত্র কার্যক্রমে সেসব ভাষার ব্যবহার বাড়াতে তৎপর হবে, বিভিন্ন পদক্ষেপ নিবে। মণ্ডলি পরিচালনার সাথে জড়িত সকলে (ফাদার, সিস্টার, কাটেখিস্ট, মাস্টার ..) স্থানীয় ভাষা শিখতে, সাথে সাথে কথায়, লেখায় সেসব ব্যবহার করতে যত্নশীল ও তৎপর হবেন। সেজন্য অনেক ধৈর্য, আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা অতি জরুরী। চিন্তা ক’রে অবাক হই বিদেশী প্রচারকগণ এদেশে এসে কত সময় নিয়ে, কষ্ট করে, ভালবেসে বাংলা আর অনেকে তার পাশাপাশি নানা আদিবাসী ভাষা শিখেছিলেন। তারা সেসব ভাষায় কথা বলেছেন, লিখেছেন, অনেকে আবার সেসব ভাষায় সহজেই উপাসনা পরিচালনা করেছেন। আর বর্তমানে দেশের মানুষ আমরা কাজ ও জীবনের প্রয়োজনে একটি ভাষাও কি শিখতে পারব না? অবশ্যই সম্ভব এবং সম্ভব হওয়া বা করা অতি জরুরী। চাইলেই সম্ভব। চেষ্টা করলেই সম্ভব। প্রয়োজন শুধু নিজের মধ্য থেকে বের হয়ে অন্য ভাষায় কথা বলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ও সেভাবে সংকোচ, ভয় জয় ক’রে ভাষা চর্চায় সামনে অগ্রসর হওয়া। সংশ্লিষ্ট ভাষাকে ভালবেসে সে ভাষা শুনতে, বলতে, পড়তে চেষ্টা করা। ভুল হলেও না থেমে, প্রয়োজনে সংশোধন ক’রে পুনরায় স্ব স্ব কর্মাঞ্চলের ভাষার সাধনা করা দরকার। সত্যিকার প্রচেষ্টা থাকলে সেসব ক্ষেত্রে নানাভাবে দ্রুত অনেক সুফল লাভ করা সম্ভব।
– ছাত্রাবাস, বিদ্যালয় ও নানা সমাবেশে নিজেদের স্থানীয় ভাষা শিক্ষা ও ব্যবহার জোরদার কারা। প্রয়োজনে নিয়মিত ভাষা শিক্ষা ক্লাসের স্থান, সময় কার্যক্রম প্রভৃতির ব্যবস্থা করা। সম্ভব হলে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নিজেদের ভাষা ঘিরে কিছু প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। যেমন গান, পড়া, লেখা, আবৃত্তি, গল্প-কৌতুক বলা, অভিনয় করা প্রভৃতি। বাস্তবতা বিবেচন ক’রে সেখানে কিছু পুরস্কারও রাখা যেতে পারে।
– বিভিন্ন উপলক্ষ্য ঘিরে ধর্মপল্লী বা প্রতিষ্ঠান, সংঘ-সমিতি থেকে নিজেদের ভাষায় বিভিন্ন লেখা/পত্রিকা প্রকাশ করা, সেসব পড়ার সুযোগ রাখা।
– ধর্মপল্লীতে, প্রতিষ্ঠানে, পাঠাগারে নিজেদের ভাষায় বিভিন্ন লেখা প্রকাশ, পত্রিকা রাখা ও পড়ার/রক্ষার সুব্যবস্থা করা।
– সম্ভব হলে প্রকাশ্য স্থানে মানুষদের ভাষায় বিভিন্ন ঘোষণা, কার্যক্রম ও অন্যান্য কিছু লেখা।
– নিজেদের ভাষায় অনুষ্ঠান, সভা-সম্মেলন, ভাষা গবেষণা প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা। নিজেদের ভাষায় শিক্ষণীয় কিছুর (ছবি, নাটক, ভিডিও প্রভৃতি) প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
– ভক্তদের স্থানীয় ভাষায় উপাসনা করা, নানা উপাসনা অনুষ্ঠান, ধর্ম-কর্ম প্রভৃতি নিজেদের ভাষায় করতে চেষ্টার পাশাপাশি ভক্তদের সেভাবে করতে শিক্ষা-উৎসাহ দেয়া, ব্যবস্থা করা। বাস্তবতা বিবেচনা ক’রে বড় বড় অনুষ্ঠানে নিজেদের ভাষায় গান করার পরিবেশ তৈরী করাও অনেক সহায়ক হতে পারে। প্রয়োজনে উপাসনার বইসমূহ নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করা, সংশোধন করা, বোধগম্য ভাষায় প্রকাশ করা।
– সুযোগ সুবিধা থাকলে নিজেদের ভাষায় উপাসনার উপকরণ সংগ্রহ করা ও সেসবের সহজ ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিভিন্ন ভাষার গানসমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা ।
– গ্রামে গ্রামে উপাসনাসহ বিভিন্ন কিছুতে ভক্তদের ভাষা ব্যবহারে উৎসাহ দান করা, স্বীকৃতি দেয়া।

খ- ভক্তদের জন্য করণীয় কিছু দিক হতে পারে:
– তারা সর্বদা নিজেদের মাতৃভাষার সম্পদ এবং তার ব্যবহার বিষয়ে সচেতন ও তৎপর হবেন।
– তারা নিজেদের মায়ের ভাষাকে অন্তর গভীর থেকে ভালবাসবেন, সম্মান করবেন আর ভাষা রক্ষার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিবেন, চেষ্টা করবেন। একই সাথে নিজেদের মঙ্গলের জন্য সমান্তরালভাবে তারা দেশের ভাষা বাংলা ভালবাসবেন ও তার ব্যবহার যথাযথ করবেন। সমভাবে দুইদিকে দুইভাষা শুদ্ধভাবে ব্যবহার করবেন তবেই তাদের জীবন সুন্দর হতে পারে।
– নিজেদের ভাষার বর্ণমালা সযত্নে রক্ষা করা, সেসবের উচ্চারণ ও চর্চা ঠিক রাখা, নিজেদের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অনুবাদ করা। নিজেদের ভাষার অভিধান রচনা করা মঙ্গলজনক হবে।
– গ্রামে গ্রামে উপাসনা, সভা-সম্মেলন, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে নিজেদের ভাষা ব্যবহার করা, ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়া।
– নিজেদের ছেলে-মেয়েদের মাতৃভাষা শিখতে, পড়তে, বলতে পরিবেশ তৈরী করা, জোর দেয়া।
– বিভিন্ন উপলক্ষ্য ঘিরে গ্রাম, সংঘ-সমিতি থেকে মাতৃভাষায় বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ এবং সেসব পড়ার সুযোগ রাখা। গ্রামে গ্রামে নিজেদের ভাষায় পাঠাগার তৈরী করতে চেষ্টা করা। আর সেখানে নিজেদের ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা রাখা, পড়া ও রক্ষার সুব্যবস্থা করা।
– সম্ভব হলে প্রকাশ্য স্থানে স্থানীয় ভাষায় বিভিন্ন ঘোষণা, কার্যক্রম লেখা।
– নিজেদের ভাষায় অনুষ্ঠান, আসর, সভা-সম্মেলন, ভাষা গবেষণা প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা। বিশেষভাবে নিজেদের লেখা ও গবেষণার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রভৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
– নিজেদের ভাষায় শিক্ষণীয় কিছুর (ছবি, নাটক, ভিডিও প্রভৃতি) প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা নিজেদের জন্য উপকারী হতে পারে।

গ-প্রবাসী ও শিক্ষিতদের করণীয় কিছু দিক হতে পারে:
এ অঞ্চলের অনেকে শিক্ষিত হয়েছেন, লেখাপড়া, কাজ ও জীবনের প্রয়োজনে তাদের কেউ কেউ সপরিবারে বাড়ী, গ্রাম থেকে দূরে শহরে অবস্থান করেন বা করছেন। এভাবে বিভিন্ন কারণে মানুষ নানা স্থানে নড়া চড়া করেন, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। তারা তখন আর নিজেদের ভাষা বলয়ে অবস্থান করেন না। তাদের কাজ, চলাচল, হাট-বাজার, ধর্ম-কর্ম সন্তানদের লেখাপড়া প্রভৃতি সেভাবেই নানা মিশ্র সংস্কৃতিতে হতে থাকে। এভাবে থাকতে থাকতে অনেকে আবার অনভ্যাসের কারণে ভাষা চর্চার পরিবেশ পান না। ফলে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা ও রক্ষার ক্ষেত্রে এক বড় অসুবিধা ও জটিলতা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় মা-বাবাগণ অনেক সময় ব্যস্ত থাকেন, নিজেদের ভাষায় কম কথা বলেন। তাদের অনেক সন্তান তাই মাতৃভাষা শিক্ষা ও চর্চার সুযোগ পান না। কেউ কেউ মাতৃভাষায় কথা বলতে চান না। ফলে তারা বেশীর ভাগ সময় বাংলা বা কেউ কেউ ইংরেজি বলতে পারদর্শী হয়।
– তারা নিজেদের মাতৃভাষার সম্পদ, মূল্য, গুরুত্ব, তার ব্যবহার বিষয়ে সর্বদা সচেতন, উৎসাহী ও তৎপর হবেন। তারা নিজেদের মাতৃভাষাকে ভালবাসবেন, সেই ভাষাকে সম্মানে উচুঁতে তুলে ধরবেন। সে পথে নিজেদের ভাষার ক্ষেত্রে প্রবাসী, শিক্ষিতদের করণীয় অনেক কিছু থাকতে পারে-বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক তাদের অবদান আসতে পারে। কারণ তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, অনেক শিখেছেন, তাই তাদের মানুষদের দেবারও অনেক থাকবে- মানুষও সেভাবে আশা করবেন।
– তারা প্রথম নিজেদের মায়ের ভাষাকে অন্তর গভীর থেকে ভালবাসবেন, সম্মান করবেন আর সে ভাষা রক্ষার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিবেন। একই সাথে নিজেদের মঙ্গলের জন্য সমান্তরালভাবে তারা দেশের ভাষা বাংলা ভালবাসবেন ও তার ব্যবহার সুনিশ্চিত করবেন। সমভাবে দুইদিকে দুইভাষা শুদ্ধভাবে ব্যবহার করবেন তবেই তারা তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।
– বড়রা নিজেরা মাতৃভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করবেন, ছেলে-মেয়েদের মাতৃভাষা শিখতে, পড়তে, বলতে পরিবেশ তৈরী করবেন।
– নিজেদের ভাষার বর্ণমালা সযত্নে রক্ষা করা, সেসবের উচ্চারণ ও চর্চা ঠিক রাখা, স্ব স্ব ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অনুবাদ করা, মাতৃভাষার অভিধান রচনা করা, ভাষার গবেষণা করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা মুখ্য অবদান রাখতে পারেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে তারা শিক্ষিত, অভিজ্ঞ, কারো কারো কিছু করার টাকা আছে। বিশেষভাবে নিজেদের লেখা ও গবেষণার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রভৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
– তারা সর্বদা নিজেদের মানুষদের সঙ্গে যোগযোগ রাখতে পারেন, তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন কিছুতে, সেখানকার উপাসনায় মানুষদের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে উৎসাহ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। ধর্মপ্রদেশে, ধর্মপল্লীতে উপাসনা দেশীয় করণ ক্ষেত্রে তারা ভাষা-জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা প্রভৃতি দিয়ে অনেক সহায়তা করতে পারবেন।
– সম্ভব হলে মাঝে মাঝে নিজেদের সভা-সম্মেলন, আসর, অনুষ্ঠান, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে নিজেদের ভাষা ব্যবহার করা, ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়া।
– বিভিন্ন উপলক্ষ্য ঘিরে প্রবাসী সংঘ-সমিতি থেকে মাতৃভাষায় বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ এবং নিজেদের অঞ্চলে সেসব রাখা ও পড়ার সুযোগ করতে পারেন। তারা গ্রামে গ্রামে নিজেদের ভাষায় পাঠাগার তৈরীতে গ্রামবাসীদের সাথে পরামর্শ করতে পারবেন তাদের সহায়তা দিতে পারবেন।
– স্ব স্ব এলাকায় নিজেদের ভাষায় শিক্ষণীয় কিছু ছবি, নাটক, ভিডিও, গান, জীবনযাত্রা প্রভৃতির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলে নিজেদের জন্য অনেক উপকারী হবে।

শেষের কিছু কথা: ভাষা যেন মানুষের প্রাণ স্বরূপ। সবাই যার যার মাতৃভাষাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসুন। ধর্মপ্রদেশের সকলে মিলে চেষ্টা করলে এ অঞ্চলের অমূল্য ভাষাগুলি সযত্নে রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিশেষভাবে যারা সচেতন ও শিক্ষিত তাদের এ দায়িত্ব কিন্তু বেশী ও প্রথম। তারা যেন কোনভাবে নিজের সুবিধার কারণে স্ব স্ব মানুষ ও তাদের ভাষাকে না ঠকান বা বঞ্চিত না করেন। অন্যদের দোষ না দিয়ে বা অন্যের উপর নির্ভর না ক’রে নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে এ পথে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের দেবার, করার অনেক আছে, তাদের বুদ্ধি, সময় সুযোগ ও আছে। কারণ বাড়ীতে, গ্রামে যারা থাকেন তাদের অনেকে আছেন বেশী বুঝেন না বা কোন কোন ক্ষেত্রে জানেন না, অন্যদিকে নিজেদের পরিবেশ ও ব্যস্ততার কারণে তাদের সময় সুযোগও কম। তাই, কিছু মানুষকে এ বিষয়ে প্রথম ভূমিকা ও পদক্ষেপ নিতে হবে, এসব কিছুতে সরাসরি কাজ করতে হবে। আর এভাবে সবার কাজ ও প্রচেষ্টায় ধর্মপ্রদেশের সকল ভাষা, ভাষার অমূল্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের দেশের, ধর্মপ্রদেশের যার যার মায়ের ভাষার জয় হোক! পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার জয় হোক!

Please follow and like us: