চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর শান্তিরাণী সিস্টারদের কমিউনিটির নতুন সুপিরিয়র ও সেন্ট পলস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বরণ অনুষ্ঠান

  গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ, ভাষার মাসে এই শেষ লগ্নে এসে চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে অবস্থানরত শান্তিরাণী সিস্টারদের নতুন সুপিরিয়র সিস্টার রাণী সরেন এবং সেন্ট পলস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার শিলা গমেজ-কে দারাম নাচের মধ্যদিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অতঃপর তাদেরকে কৃষ্টি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী পা-ধুয়ে দেওয়া হয় এবং ফুলের তোড়া প্রদানের মধ্য দিয়ে চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানানো হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে শান্তিরাণী সিস্টার সম্প্রদায়ের কাউন্সিলর সিস্টার পেরিনা দাশ উপস্থিত ছিলেন। নুতন সুপিরিয়র সিস্টার রাণী সকলের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেন যাতে তিনি সুন্দর মন নিয়ে তাঁর কমিউনিটি পরিচালনা করতে পারেন। সেই সাথে সেন্ট পলস হাইস্কুলের নতুন প্রধান শিক্ষিকা তাঁর অনুভূতিতে বলেন, তিনি স্কুলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্ঠা করবেন এবং পড়াশুনার মান বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাবেন। সেই সাথে তিনি সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমি যখন পারবোনা তখন আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন আর সকলের সাহায্যে সব কিছুই সম্ভব হয়। সুন্দর বরণ অনুষ্ঠানের জন্য তিনি প্রত্যেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা প্রদান করেন। পরবর্তীতে একটি নৃত্যের মধ্য দিয়ে বরণ অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।

সেন্ট পলস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিদায় অনুষ্ঠান

বিদায় সকলের জন্যই বেদনাদায়ক। তবুও মানুষকে যেতে দিতে হয়। দীর্ঘ দশটি বছর যিনি মায়ের ভালোবাসা দিয়ে যত্ন করে সেন্ট পলস হাইস্কুলকে আগলে রেখেছিলেন তিনি হলেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রদ্ধেয়া সিস্টার মারীয়া গরেট্টি কস্তা, সিআইসি। সিস্টারের এই সেবাদানের জন্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষে স্কুলের মিলনায়াতনে বিদায় দেওয়া হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের সভাপতি ফাদার বেলেসারিও সিরো, ফাদার উজ্জ্বল রিবেরু ও স্কুলের সকল শিক্ষকবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি বলেন, সিস্টার গরেট্টি একজন শিক্ষাগুরু। যিনি গভীর যত্ন নিয়ে এই স্কুলকে আগলে রেখেছেন তাঁর এই সেবার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ ও সিস্টারকে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই। বিদায়ী সিস্টার তাঁর বক্তব্যে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না, তিনি কান্নারতভাবে বলেন, এই স্কুলের সব জায়গায় আমার স্পর্শ আছে তাই কষ্ট লাগছে। তিনি ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা পড়াশুনা, ভালো পড়াশুনার মধ্য দিয়ে তোমরা জীবনে অনেক বড় কিছু করতে পারবে। বিদায়ী মানপত্র পাঠ, কবিতা আবৃতি, নৃত্য ও উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।

জন্মদিন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে একই সাথে পালন করা হলো ফাদার বেলেসারিও সিরো মন্তোয়ার শুভ জন্মদিন ও সিস্টার মারীয়া গরেট্টির কস্তার ধন্যবাদের অনুষ্ঠান। ফাদার বেলেসারিও সিরো মন্তোয়ার জন্মদিন হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের দিন কিন্ত চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর অধীনস্থ বাগডাঙ্গা গ্রামের রুমিলা ও মরিয়ম নিখোঁজ হওয়ার কারণে তিনি তাঁর জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যেদিন তিনি এই দুই মেয়েকে খুঁজে পাবেন আর সেদিন তিনি আনন্দের সহিত তাঁর জন্মদিন পালন করবেন। রুমিলা ও মরিয়মকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে সবাই আনন্দিত এবং ঈশ্বরের প্রশংসা গানে মুখর। তাই, খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় রুমিলা ও মরিয়মকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, ফাদারের জীবনের জন্য। সেই সাথে সিস্টার মারীয়া গরিট্টি কস্তা দীর্ঘ দশ বছর সেবা দান করেছেন সেই জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। খ্রিস্টযাগ ও রাতের আহারের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে কেক কাটা, নৃত্য ও বিভিন্ন উপস্থাপনার মধ্যদিয়ে জন্মদিন ও ধন্যবাদের অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। ফাদার বেলেসারিও তাঁর অনুভূতিতে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঈশ্বর আছেন, আমি ঈশ্বরের সাথে ঝগড়া করেছি কেন তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনছেন না, কেন তিনি আমাদের মেয়ে রুমিলা ও মরিয়মকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। কথা বলতে বলতে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন। শেষে তিনি সবাইকে আহ্বান করে বলেন, আমরা যেন ঈশ্বরের কাছে চাই, আমরা যেন ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করি। সিস্টার মারীয়া গরেট্টির তাঁর অনুভূতিতে চোখের জন্য মুছতে মুছতে বলেন, আমি দশ বছর চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে কাজ করেছি, অনেক স্বাধীনভাবে ফাদারদের পরামর্শে কাজ করেছি। চাঁদপুকুর মিশনে সেবা দানের যাত্রা আমার অনেক ভালো ছিল। তিনি তাঁর ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সকলের কাছে প্রার্থনা চান যেন, তিনি সুস্থ্যদেহে ভূতাহারা ধর্মপল্লীতে কাজ করে যেতে পারেন। পরবর্তীতে ফাদার ও সিস্টারদ্বয়কে উপহার প্রদান করা হয় এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্ত করা হয়।

শুভাগমন অনুষ্ঠান উদযাপন

গত ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ রোজ রবিবার বিকেলে চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে আনন্দের সহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার বেলেসারিও সিরো মন্তোয়ার আগমন উপলক্ষ্যে সান্তালী ও উঁরাও নাচে-গানের মধ্য দিয়ে ফাদারকে বরণ করে নেওয়া হয়। দীর্ঘ চার মাসের একটু বেশি দিন নিজ দেশ কলম্বীয়াতে ছুটি কাটানোর পর তিনি পুনরায় ফিরে আসেন প্রাণের প্রিয় ধর্মপল্লী চাঁদপুরে। ভক্তজনগণের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে প্রিয় ফাদারকে পেয়ে। খ্রিস্টভক্তগণ ও বোর্ডিং এর ছেলে-মেয়েরা চিরচেনা কৃষ্টি পা-ধুয়ে এবং ফুলের মধ্য দিয়ে তাদের মনের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। শ্রদ্ধেয় ফাদার বেনেসারিও সিরো মন্তোয়া তার বক্তব্যে ঈশ্বরের প্রশংসা কীর্তন করেছেন কারণ ঈশ্বর তাকে পুনরায় সুস্থ দেহে আবার প্রেরণ করেছেন এবং সকলের কাছে প্রার্থনা চেয়েছেন তিনি যেন সুস্থ দেহে আরো ভালো কাজ করে যেতে পারেন।

ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার অনুষ্ঠান
চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে পালকীয় কাজে দীর্ঘ ছয় বছর যার স্পর্শ ও ভালোবাসা মিশে আছে তিনি হচ্ছে সিস্টার মেরি টুডু। তিনি অনেক ভালোবাসা নিয়ে পালকীয় কাজ করেছেন, ঈশ্বরের নাম ও খ্রিস্টের বাণী প্রচার করেছেন। তাই, স্বার্থবিহীন এই ত্যাগ ও সেবার জন্য গত ২০ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ শ্রদ্ধেয় সিস্টার মেরি টুডু-কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা জানানো হয়। সি. মেরি টুডু নিজেও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান কেননা ঈশ^র তাকে সুন্দর মন ও স্বাস্থ্য দিয়েছেন যিশু বাণী প্রচার করার জন্য। তিনি চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর ফাদার, সিস্টার, ক্যাটিখ্রিষ্ট ও ভক্তজণকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন সেবা কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য এবং তিনি সকলের কাছে প্রার্থনা চান যেন তাঁর নতুন সেবাকর্মস্থল কার্পাসডাঙ্গাতে আন্তরিকতার সহিত ও বিশ^স্থ ভাবে খ্রিস্টের বাণী প্রচার করতে পারেন।

সেন্ট পলস্ হাই স্কুল, চাঁদপুকুরে বাষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
চাঁদপুকুর অধীনস্থ সেন্ট পল হাই স্কুল একটি সুনামধন্য স্কুল। পড়াশুনার পাশাপাশি ভালো মানুষ গড়ার জন্য স্কুলটি সেবাদান করা যাচ্ছে। স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি “মন ও সুস্থ্য দেহ গঠনে খেলাধুলা” মূলসুরকে কেন্দ্র করে গত ১ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। উক্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন স্কুলের সভাপতি ফাদার বেলেসারিও সিরো মন্তোয়া, ফাদার উজ্জ্বল রিবেরু, স্কুলের প্রধান শিক্ষকা সিস্টার মারীয়া গরেট্টি কস্তা ও স্কুলের সকল শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাবকবৃন্দ ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। স্কুলের সভাপতি ফাদার বেলেসারিও সিরো ফিতা কেটে বাষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়-২০২৩ শুভ উদ্ধোধন করেন। সভাপতি বলেন, শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে বছরে একদিন খেলাধুলা না করে বরং প্রতিদিন আমাদের শরীর চর্চা করা প্রয়োজন। শরীর ভালো থাকলে আমাদের মন ও ভালো থাকবে আর মন ভালো থাকলে পড়াশুনায় মন বসবে। তাই, খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বই পড়ার জন্য অনুরোধ জানান এবং বলেন প্রত্যেককে ভালো মানুষ হতে হবে। পরবর্তীতে মাঠ প্রদর্শন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত, মশাল প্রজ্জ্বলন ও মাঠ প্রদক্ষিণ এবং সান্তাল ও উঁরাও কৃষ্টির নৃত্যের মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হয়। খেলাধুলার পাশাপাশি যেমন খুশি তেমন সাজোতে অনেকে অংশ নেয় এবং পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার উজ্জ্বল সামুয়েল রিবেরু

Please follow and like us: