বিগত ৮ মার্চ খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে ধর্মপ্রদেশীয় খ্রিস্টভক্তজনগণ বিষয়ক কমিশনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নারীদের নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্ব নারী দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের মূলসুর ছিল “ডিজিটালঃ নারী পুরুষের সমতায়নে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি”। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, খ্রিস্টভক্তজনগণ বিষয়ক কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া এবং এছাড়াও উপস্থিত ফাদার নবীন পিউস কস্তা, ব্রাদার রঞ্জন লুক পিউরীফিকেশন, সাত জন সিস্টার এবং একশত নব্বই জন নারী ও দশ জন পুরুষ। কর্মসূচীর শুরুতে ছিল রেলী ও পবিত্র খ্রিস্টযাগ। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও।

খ্রিস্টযাগের পর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সভা। এই আলোচনা সভায় অতিথিদের আসন গ্রহণের পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। খ্রিস্টভক্তজনগণ বিষয়ক কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্তমান এই প্রযুক্তির যুগে নারী পুরুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় সমতার অভাব। বিশেষভাবে এই বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে উঠে মজুরী প্রদানের ক্ষেত্রে। বর্তমানে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারী সমাজ যথেষ্ঠ অবদান রেখে যাচ্ছে। তাই, আমাদেরকে নারী পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে তা দূর করার জন্য কাজ করতে হবে।

প্রধান অতিথি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন যে, তিনিও একজন নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। জৈবিক পার্থক্য ছাড়া নারী ও পুরুষের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসে নারীগণ পুরুষের চেয়েও বেশী আয় করছে। তাই, তিনি তাঁর বক্তব্যে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ধর্মপদেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে যেন কোন বৈষম্য না থাকে। তাই, নারী সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মেয়েদের শিক্ষিত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া ও দায়িত্বশীল নারী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদেরকে একযুগে কাজ করতে হবে।

মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলোচনা করেন খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া। তিনি তার উপস্থাপনায় প্রথমে বাইবেলের আলোকে নারী পুরুষের সমতায়ন, প্রযুক্তি কী, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন কি , পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা, ছেলে ও মেয়ের প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পদের সম বন্টন, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, পাওয়ার অন বিষয়ে আলোকপাত করেন। নারী সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করা দরকার। সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে অবদান রাখার জন্য নারী ও পুরুষকে এক সাথে পথ চলতে হবে। নারী উদ্যোক্তা তৈরী করা সময়ে দাবী । তাই, আসুন আমরা নারী-পুরুষ সকলে মিলে একসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ি এবং উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো বেশী উদার হই ও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি।

প্রযুক্তিতে নারী পুরুষের সহিংসতা এই বিষয়ে উপস্থাপনা করেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মকর্তা মিঃ ডেভিট বাস্কে। প্রযুক্তি
ব্যবহারের কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কিভাবে নারীদের প্রতি সহিংসতা আচরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়; তার বিভিন্ন তথ্য- উপাত্ত সকলের সামনে তুলে ধরেন। বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারী পুরুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ভুল-বোঝাবুঝি, ঝগড়া, অবিশ্বাস। তাই, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই হচ্ছে এ সমস্ত বৈষম্যমূলক আচরণ নিরসনের উপায়।

নারী নেত্রী কস্তানতিনা মুর্মু বলেন, পরিবার, সমাজ ও রাস্ট্রীয় পর্যায়ে এখনো নারীগণ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোন কোন সমাজ ব্যবস্থায় বিশেষভাবে আদিবাসী সমাজে পরিবার থেকেই নারীদেরকে সম্পদের সম অধিকার দেয়া হয় না। পরিবার থেকে নারী পুরুষের সমতা চর্চা করা এবং আদর্শ পরিবার গঠন করার মধ্যদিয়ে এই বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করা একান্ত জরুরী।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : সুশীল টুডু

Please follow and like us: