গত ১৯ মার্চ এফ. চেস্কাতো হল রুমে কারিতাস আঞ্চলিক কার্যালয়ে কারিতাস দিবস উদযাপন এবং কর্মীদের লং সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। কারিতাস দিবসের মূলসুর ছিল “এক সাথে পথ চলি মিলন সমাজ গঠন করি”। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি, বিশপ, রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশ এবং সভাপতিত্ব করেন শ্রদ্ধেয় মি: ডেভিড হেম্ব্রম, আঞ্চলিক পরিচালক (ডেজিগনেট), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী’র সাধারণ পরিষদ, কার্যনিবার্হী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং কারিতাস কর্মী/কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ভাই বোনদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, পরিবারে নারী ও পুরুষ পার্থক্য বা বৈষম্য না করে আমরা একে অন্যকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করব। আমরা পরিবার, সমাজ সকলে মিলনের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ, শান্তির মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে বেচেঁ থাকব।

ত্যাগ ও সেবা অভিযানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যক্ত করে কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী’র আঞ্চলিক পরিচালক (ডেজিগনেট) মি: ডেভিড হেম্ব্রম বলেন- প্রথমত: ত্যাগ ও সেবা কাজ সম্পর্কে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ প্রত্যেককে সচেতন করা, সেবা কাজে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা এবং তহবিল সংগ্রহ করা। দ্বিতীয়ত: কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে দেশের গরীব, দুঃস্থ ও বঞ্চিত প্রতিবেশী ভাই-বোনদের জন্য দান করে তাদের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করতে অনুপ্রাণিত করা।

“একসাথে পথ চলি মিলন সমাজ গঠন করি’ এ মূলসুরের উপর আলোকপাত করেন রাজশাহী খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া। তিনি বলেন, এটি একটি মঙ্গলসমাচার ভিত্তিক নিমন্ত্রণ (প্রেরিত শিষ্য ২: ৪২-৪৮)। যার মধ্যদিয়ে আদি মণ্ডলির বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। এই নিমন্ত্রণ হলো ‘সত্যময় আত্মার কন্ঠস্বর শ্রবণ করার’ (যোহন ১৪:১৭) এবং পিতার ইচ্ছা বুঝতে চেষ্ঠা করার এক আহ্বান। মিলনধর্মী পরিবার, সমাজ ও মণ্ডলি গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে- পারস্পারিক সাক্ষাৎ (Encounter), শ্রবণ বা শোনা (Listen) এবং নির্ণয় করা (Discernment)। তিনি আরো বলেন- এক সাথে পথ চলতে গেলে ত্যাগস্বীকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় নিজের প্রাধান্যে, পছন্দের সব কিছু করতে গেলে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আমার ইচ্ছা বা পছন্দ যখন আমি বরাবরই অন্যের উপর চাপিয়ে দেই, সেখানে আর ভালোবাসার পরিচয় বহন করতে পারি না। আমি যে অন্যের জন্য ত্যাগস্বীকার করছি বা ছাড় দিচ্ছি তা আমাকে প্রকাশ করতে হবে সেবা কাজের মধ্য দিয়ে। তাহলেই আমার ত্যাগস্বীকার সার্থক হবে। আমি যার জন্য বা যাদের জন্য ত্যাগস্বীকার করি, সেবা করি, তাদের সঙ্গেই আমি ভালোবাসার সম্পর্কে যুক্ত হই। এইভাবেই আমরা আমাদের সমাজে মিল মহব্বত আনি আর গড়ে তুলি মিলন সমাজ। একে অন্যের পাশে দাঁড়াই, ভালোবাসা বিলাই, মিলন সমাজ গড়ি আর ভালোবাসায় পথ চলি।

‘একসাথে পথ চলি মিলন সমাজ গঠন করি’ এ মূলসুরের উপর ভিত্তি করে তিন ধর্মের আলোকে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে: ইসলাম ধর্মের আলোকে, জনাব হাফেজ মওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, হাজী জমির উদ্দিন শাফিনা মহিলা কলেজ, রাজশাহী; সনাতন ধর্মের আলোকে, ড. শিখা সরকার, প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী এবং খ্রিস্ট ধর্মের আলোকে, রেভা. ফাদার প্যাট্রিক গমেজ, সহকারি পাল-পুরোহিত, বেণীদূয়ার ধর্মপল্লী, ধামইরহাট উপজেলা এবং সেক্রেটারি, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যে তারা তুলে ধরেছেন, মিলন সমাজ গঠনের মূলভিত্তি হলো ভালোবাসা, পারস্পারিক শ্রদ্ধা-সম্মানবোধ এবং একে অপরের ভাই-বোন হিসেবে গ্রহণ করে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে শান্তির ও ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্যদিয়ে মিলন সমাজ গঠন করা। তাইতো তাদের সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে এই আহ্বান, আসুন সকলে মিলে ভালোবাসার মানুষ হই এবং ভালোবাসার চর্চা করি, ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে এবং সমাজ জীবনে।

‘এক সাথে পথ চলি মিলন সমাজ গঠন করি’ এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে ছিল যারা কারিতাসে দীর্ঘ দিন যাবৎ সেবাদান করে আসছে তাদের সেবা কাজের সম্মান স্বরূপ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা। এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে কারিতাসের সেবাদানের দশ বছর পূর্তিতে মোট ১৩ জনকে , পনের বছর পূর্তিতে ৯ জনকে, বিশ বছর পূর্তিতে ১০ জন এবং পঁচিশ বছর পূর্তিতে ১২ জনসহ সর্বমোট ৪৪ জনকে।

এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সেবাকর্মীদের পক্ষ থেকে কয়েকজন তাদের অনুভূতি তুলে ধরেন এভাবে- আজকে আমরা আমাদের কাজের সম্মানসূচক স্বীকৃতির জন্যে কারিতাস কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আজ আমরা যা হতে পেরেছি তা হয়েছি কাারিতাসের বদৌলতে। প্রত্যাশা করি, যেন এ কর্মময় জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আর্তমানবতার সেবার কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে পারি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : লীনা রোজারিও

Please follow and like us: