“ প্রায়শ্চিত্তকালীন যাত্রায় একজন ক্যাথলিক শিক্ষক হিসেবে আমার করণীয়” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গত ২৫ মার্চ রোজ শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্যতা সহকারে মুক্তিদাতা হাই স্কুল, বাগানপাড়া, রাজশাহী-এর আয়োজনে রাজশাহী শহরে অবস্থিত প্রায় ৪০ জন ক্যাথলিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে টিচার্স টিমের আওতায় অর্ধবেলা প্রায়শ্চিত্তকালীন নির্জন ধ্যান অনুষ্ঠিত হয়। এতে হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ, মুক্তিদাতা হাই স্কুল, রাজশাহী মিশন স্কুল, পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ, মুশরুইল প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী প্রার্থনা, সহভাগিতা, পাপস্বীকার, খ্রিস্টযাগ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও রাতের আহারের মাধ্যমে নির্জন অতিবাহিত হয়।

নির্জন ধ্যান পরিচালনা করেন খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রের পরিচালক শ্রদ্ধেয় ফাদার বাবলু কোড়াইয়া। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে তার জ্ঞানগর্ব উপস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষতার পরিচয় রাখেন। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, তপস্যাকাল হচ্ছে চল্লিশ দিনব্যাপী খ্রিস্টীয় জীবনের একটি বিশেষ যাত্রা; এ যেন খ্রিস্টীয় জীবনের বসন্তকালীন এক পথ চলা, ঈশ্বর ও মানুষের প্রতি ভালবাসার পথ চলা। পুনরুত্থান-শুধু পুনরুত্থান পর্ব নয়: খ্রিস্টীয় জীবনে পুনরায় উত্থান করার সময়; জীবনে পুনঃজাগরণ হওয়া, খ্রিস্টীয় জীবনে জাগ্রত হওয়া, উজ্জীবিত হওয়া এবং রূপান্তরিত হওয়ার সময়; বাইবেলের কথায় সমতল থেকে মন্দিরের উচুঁতে এবং পর্বতে আরোহণ করার সময়; জৈতুন পর্বত বা হেব্রোন পর্বত ও কালভেরি পর্বতে আরোহণ করা” এর মানে হচ্ছে নিম্নতর খ্রিস্টীয়-জীবনের অবস্থা ও মান ছেড়ে একটু উপরে যাত্রা ও আরোহণ করার সময়। তপস্যাকালের শুরুতেই আমরা যিশুর এই কথা শুনি, “এসো, আমাকে অনুসরণ কর”, “ঐশ্যরাজ্যে প্রবেশ কর”, “মন ফেরাও”, “মঙ্গলসমাচারে বিশ্বাস কর”, “আমার ক্রুশ বহন করে আমার অনুগামী হও”। তিনি আরো বলেন, পিতা-মাতার পর একজন সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়া তোলার দায়িত্ব যিনি পালন করে থাকেন তিনি হচ্ছেন একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা। তাই, আপনারা হলেন মানুষ গড়ার কারিগড়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় শিক্ষককে। শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কাছে বাবা-মায়ের মতো। বাবা-মা যেমন তাদের ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা দিয়ে সন্তানদের বড় করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। এর সাথে থাকে স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা। নিঃসন্দেহে শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে অন্য সকল পেশার জননী বলা হয়। সেটি শিক্ষার যেকোনো স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিখন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে শিক্ষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

অনুষ্ঠানের শেষে জাতীয় চ্যাপ্লেইন হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় ব্রাদার প্লাসিড রিবেরু টিচার্স টিমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন। শেষে মুক্তিদাতা হাই স্কুলেন প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ব্রাদার রঞ্জন লূক পিউরিফিকেশন সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ব্রাদার রঞ্জন লূক পিউরীফিকেশন

 

 

Please follow and like us: