গত ১ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে, শ্রমিক সাধু যোসেফ ধর্মপল্লী, ভূতাহারা’র পর্বদিন উদযাপন, নতুন যাজক নিবাস ও নতুন গির্জা উদ্বোধন ও আশির্বাদ, ভূতাহারাকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণা এবং হস্তার্পণ সাক্রামেন্ত প্রদান অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় জের্ভাস রোজারিও। তিনি ধর্মপল্লীতে আসলে তাকে সান্তাল কৃষ্টির দাসাই নাচের মাধ্যমে বরণ করে নিয়ে পা ধুয়ানো ও ফুলের মালা প্রদানের স্বাগতম জানানো হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগের প্রারম্ভে বিশপ মহোদয় ফিতা কেটে এবং লিপিফলক উন্মোচন করার মধ্য দিয়ে নতুন গির্জার শুভ উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও, পাল-পুরোহিত ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের উন্নয়ন ও প্রশাসক ফাদার উইলিয়াম মুরমুসহ ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭ জন ফাদার, ৬ জন সিস্টার এবং প্রায় ১০০০ মত খ্রিস্টভক্ত উপস্থিত ছিলেন। একই দিনে ১০৯ জনকে হর্স্তাপন সাক্রামেন্ত প্রদান করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ভূতাহার ধর্মপল্লী এতো দিন ধরে কোয়াজি ধর্মপল্লী হিসেবে ছিল। গত ১ মে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে বিশপ জের্ভাস রোজারিও এটিকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণা দেন এবং পুর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত হিসেবে ফাদার সুশীল লুইস পেরেরার কাছে ঘোষণাপত্রটি প্রদান করার মধ্যদিয়ে দায়িত্ব প্রদান করেন।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল, বিশপ জের্ভাস রোজারিও খ্রিস্টযাগের উপদেশে বলেন, আজকে এই খ্রিস্টযাগের এবং আশির্বাদ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক সাধু যোসেফ ধর্মপল্লী, ভূতাহারা একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী হবে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, ঈশ্বরের আশির্বাদের বিষয়। আজকের প্রথম পাঠে প্রবক্তা যেরুমিয়া’র গ্রন্থে আমরা দেখি যে, ঈশ্বরের মন্দিরে যে সমস্ত মানুষেরা উপস্থিত হতো তারা ঈশ্বরের বন্দনা গান গাইতো। তারা ঈশ্বরের বাক্য মনোযোগ দিয়ে শুনতো এবং তারা ঈশ্বরের নির্দেশ মেনে চলতো। এখন যে নতুন গির্জাঘর নির্মাণ করা হয়েছে এখানেও ঈশ্বরের বাণী বা যিশুর কথা আমাদের কাছে প্রচার করা হবে, বলা হবে সেটা যেন আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং সে অনুসারে যেন জীবন যাপন করি। আজকের ২য় পাঠে কলসীয়দের কাছে লেখা সাধু পল তাঁর পত্রে লিখেছেন যে, ‘আমরা যা কিছু করি প্রভু যিশুর নামেই করি’। আমাদের দীক্ষাস্নানের গুণে আমরাও প্রভু যিশুকে গ্রহণ তাঁকে পরিধান করেছি। তাই এখন থেকে আমরা আমাদের জীবনে প্রভুর যে বাণী শুনবো, সেই অনুসারেই যেন জীবন-যাপন করি। তাই সাধু পল বলেন, ঈশ্বরের বাণী অনুসারে জীবন-যাপন কর, ভাল কাজ কর, পরস্পরের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রশংসা কর, সেবা কর, পরস্পরকে ভালবাসা হলো যিশুর শিষ্যদের কাজ। তাই আসুন পলের এই শিক্ষা গ্রহণ করি এবং যিশুর প্রকৃত শিষ্য হয়ে উঠতে পারি।
ভূতাহারা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা বলেন, এই দিনে আমরা প্রথমত: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এই সুন্দর গির্জা ঘরের জন্য বিশপ মহোদয়দেকে ধন্যবাদ জানাই। এখানে যারা যারা কাজ করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ফাদারগণ এবং যারা বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলকে জানােই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে আজকে আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই যারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসেছেন তাদের সকলকে। আজকের এ অনুষ্ঠানের জন্য যারা নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন করেছেন সাজানো, গান, প্রার্থনা, নাচ, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, দেখাশুনা করা, স্বেচ্ছাসেবক হওয়া, ধর্ম মা-বাবা হওয়া সকলকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, এখনও যা কিছু বাকী আছে তা যেন সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন হয় । ঈশ্বর যেন আমাদেরকে তার আর্শিবাদে ঘিরে রাখেন। আজকের এই দিনের আমি বিশেষভাবে স্মরণ করি শ্রদ্ধেয় ফাদার এমিলিও স্পিনেল্লীকে যিনি ইতমধ্যে স্বর্গবাসী হয়েছেন। তিনি এই ধর্মপল্লী শুরু থেকে ১৩ বছর ধরে তার যাজকীয় ও পালকীয় সেবাদানের পাশাপাশি প্রাথমিক অবকাঠামো গড়ার কাজ করেছেন। গত আগস্ট মাসের ১২ তারিখে তিনি স্বর্গবাসী হয়েছেন। বাংলাদেশে একজন পিমে মিশনারী ফাদার হিসেবে ৪৬ বছরের মধ্যে ১৩ বছর তিনি এখানে এই ভূতাহারা ধর্মপল্লীতে সেবাকাজে রত ছিলেন। আমরা অনেকেই তাকে চিনি, জানি এবং তাকে অনেক ভালবাসি। তাঁর আত্মিক মঙ্গল কামনা করি। একই সঙ্গে এই এলাকায় অনেক মিশনারী কাজ করেছেন, বিশেষভাবে পিমে মিশনারীগণ। ফাদার-সিস্টারগণ, কাটেখ্রিস্টগণ অনেক কাজ করেছেন। আজকে আমরা তাদেরও স্মরণ করি, তাদের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাদের আত্মিক মঙ্গল কামনা করি। আমরা আনন্দের সঙ্গে আজকের এই উৎসব পালন করছি। এখানে কয়েকটি বিষয় ছিল, একটা ছিল ফাদারের বাড়ি আশির্বাদ, গির্জা ঘর আশির্বাদ ও উদ্বোধন, শ্রমিক দিবস পালন এবং আমাদের প্রতিপালক সাধু যোসেফ’র পর্ব দিন পালন এবং ধর্মপল্লীর ঘোষণা। তিনি আরো বলেন, গির্জা ঘর হয়েছে এটা হলো আমাদের দায়িত্বের পরিপক্কতার চিহ্ন। আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করছি, দায়িত্ব পালন করবো এবং তা পূর্ণ করব। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নরেন মুরমু, ভুতাহারা ধর্মপল্লী কুন্তুল গ্রামের একজন খ্রিস্টভক্ত, যিনি বহু দিন থেকে গীর্জা মাষ্টার হিসেবে কাজ করছেন, তিনি তার অনুভূতি তুলে ধরে বলেন, ভূহাহারকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী হিসেবে পেয়ে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত। এটা আমাদের মিশনবাসী সকলেরই জন্য খুব বড় আনন্দের একটি সংবাদ বলে আমি মনে করি। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আজকের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বিশপ মহোদয় ভূতাহারা ধর্মপল্লীকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীতে উন্নীত করেছেন এবং আমাদের বিশ্বাসের অনুশীলন করার জন্য নতুন গিজার্ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের এই ভূতাহারা ধর্মপল্লী যেন ভব্যিতে আরও বেশী সক্রিয় ও সাবলম্বী ধর্মপল্লীতে পরিণত হয় এবং আরো অনেক নতুন নতুন মানুষ আমাদের মণ্ডলিভুক্ত হতে পারেন।
ভূতাহারা ধর্মপল্লীর ক্লারা, যিনি ভূতাহারা মিশনের একজন সেবাদানকারী। তিনি ভুতাহারা মিশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণার পর তার আনন্দ অনুভূতি ব্যক্ত করেন এইভাবে, ’আজ সত্যিই আমার খুব ভাল লাগছে। আমি ভোর ৪:৩০ মিনিট থেকে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু আমার মধ্যে তেমন কোন ক্লান্তি অনুভব করছি না। আজ আমার প্রত্যাশা হলো এই যে, আমরা প্রত্যেক খ্রিস্টভক্ত যেন ফাদার-সিস্টারদের সাথে সহযোগিতা দান করি। যেন আমাদের ভূতাহারা খ্রিস্টমণ্ডলি একটি সক্রিয় ও অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি হয়ে উঠে।
লবীন নামক ভূতাহারা ধর্মপল্লীর একজন সক্রিয় যুব, যে মিশনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত, সে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আজ আমরা যুবারা, সত্যিই খুবই আনন্দিত এই জন্য যে, আমরা ভূতাহারা ধর্মপল্লীকে একটি পুণার্ঙ্গ ধর্মপল্লী রূপে পেয়েছি। শুধুমাত্র তাই নয়, আমরা পেয়েছি একটি নতুন যাজক ভবন ও গীর্জা। এখন আমার প্রত্যাশা হলো আমরা প্রত্যেকে যেন আরো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মপল্লীকে একটি শক্তিশালী সক্রিয় স্থানীয় মণ্ডলি হিসেবে গড়ে তুলি। তাই, আমার যুবা বন্ধুদের বলতে চাই, প্রিয় বন্ধুগণ এসো আমরা একসাথে পথ চলি ও মিলন সমাজ গড়ি এবং ভূতাহারা ধর্মপল্লীকে সাবলম্বী ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী মণ্ডলি হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্ঠা করি।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: ফাদার বাবলু কোড়াইয়া