মিডিয়ার কাজ যদি হয় তথ্য আদান প্রদান, শিক্ষিত করে তোলা এবং বিনোদন, তাহলে আজকের দিনে মিডিয়া মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট বদলে দিচ্ছে কীভাবে? মিডিয়া যুব সমাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট বদলে দিচ্ছে এর জন্য দায়ী কে? মিডিয়া এন্টারপ্রাইজ বা কোম্পানি? এর পিছনে কি কাজ করছে ব্যবসা? বা একটা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা? ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে বা তথ্য প্রযুক্তির মহাসরণী ধরে মিডিয়া লাগামহীনভাবে এগিয়ে চলেছে- তার কতোটুক তথ্য আদান প্রদান, শিক্ষা ও বিনোদন? গণমাধ্যমে যে ভাইয়োলেন্স থাকে সেটা এ্যান্টি স্যোসাল বিহেভিয়্যর বা সামাজিক চরিত্র বিরোধী কীনা? এই প্রশ্নগুলো সামনে এগিয়ে আসে।
পশ্চিমা মিডিয়ার প্রভাবে আমাদের যুবসমাজ যেনো আগের চেয়ে বেশি ঔপনিবেশিক শক্তির কবলে পড়ে যাচ্ছে। মিডিয়া কমই থার্ড ওয়ার্ল্ডের যুবসমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। অন্যদিকে পশ্চিমা মিডিয়া তাদের কালচার, পণ্য, সংগীত, সিনেমা আমাদের যুবসমাজের কাছে তুলে ধরছে। ৩৬০ কোটি মানুষ বাস করে এশিয়া মহাদেশে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। এশিয়ার এই ৩৬০ কোটি মানুষের মধ্যে ৬০ ভাগ যুবক। অথচ মিডিয়া থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা এই যুব সমাজের জন্য নেই। আমরা আমাদের ধর্ম, পরিবার, ধ্যান ধারণা, সংস্কৃতি ও সমাজ জীবন- যুব সমাজকে যেনো আর পারিবারিক আদর্শ, সমাজের ঐতিহ্য শিক্ষা দিতে পারছে না- এখন মিডিয়া বলে দিচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী শিক্ষক হলো মিডিয়া- যুবসমাজের মডেল।
আজকের দিনের যে শিক্ষা তা হওয়া উচিৎ মূলত উৎপাদনমূখী। আজকে লেখা পড়া শিখে কেউ আগের দিনের মতো পন্ডিত হবে তা সম্ভব নয়- পেশাদারি হতে হবে। এখনকার বিশ্বে বহুমূখী শিক্ষার প্রয়োজন। আগের দিনের মতো সংগীত চর্চা, গণিত চর্চা, শরীর চর্চা বা দর্শন শাস্ত্রের চর্চা এখনকার বিশ্বে ততো জনপ্রিয় নয়। আজকে অগোচরে থেকে যাচ্ছেন অনেক বিশ্বখ্যাত লেখক। এখন ডিজিটাল যুগ। ফেইসবুক- কম্পিউটার জানা না থাকলে তাকে হয়তো শিক্ষিত বলবে না।
শিক্ষা ছাড়া জাতি উঠতে পারে না- এটা সর্বজনীন চাহিদা। শিক্ষা ছাড়া একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। সরকার যেমন একদিকে শিক্ষা প্রসারে নজর দিচ্ছে তেমনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, চার্চ, নানা উপায়ে শিক্ষা প্রসারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে মানুষ কিন্তু হিউম্যানাইজড হচ্ছে না। এই না হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো শিক্ষা জীবনমুখী নয়, সমন্বিত শিক্ষা নয়। অভিভাবক, শিক্ষাকে যদি একটা ডিমান্ড হিসেবে নেয় তাহলে সমাজ শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তবে শুধুমাত্র অভিভাবকদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে আরো অনেক রকমের বিষয়, প্রভাব, পরিবেশ, অবস্থা ও ব্যবস্থাকে বিবেচনায় আনতে হবে। হাই স্কুল পাশ মানে শিক্ষার জগতে দীক্ষা নেওয়া মাত্র। এখন পেশাগত শিক্ষার কদর বেশি। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনবিদ, কৃষিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, ইত্যাদি হওয়া। এখনো আমাদের শিক্ষার টার্গেট হয়ে আছে পাশ করে অফিসে চাকরি করবো। সে জন্য গার্জিয়ানরা চান ছেলে মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু আজকের দিনে অফিসের চাকরি একটা ছোট চাহিদা মাত্র। একজন কৃষিবিদ গ্রামে অনেক ভালো কাজ করতে পারেন। ডাক্তার হয়ে এখন গ্রামে ভালো উপার্জন করতে পারেন। মিডিয়াতে এই বিষয়ে যুব সমাজকে প্রভাবিত করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণী হলো প্রকৃত শিক্ষা। সে-ই প্রকৃত শিক্ষিত যিনি সত্যের উপাসক, যিনি ন্যায়ের ধারক, যিনি মানুষের সেবক। একজন শিক্ষিতের সাথে যদি প্রকৃত কর্ম যোগ না হয়, সৃষ্টি করার সাধনা যোগ না হয়, তাহলে তাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। “যে শিক্ষার কর্ম নাই সেই শিক্ষার মুখে ছাই।” অর্থ সম্পদ বিতরণ করলে বা ভোগ করলে কমে আসে। কিন্তু একজন যত শিক্ষা গ্রহণ করে তত বেড়ে উঠে। একজন যত শিক্ষা বিতরণ করে শিক্ষা সমাজে তত বৃদ্ধি পায়। আজকের মিডিয়া কিন্তু এসব বিষয়ে খুব কম অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে।
আধুনিক শিক্ষার সাথে সমাজের বহুদিনের লালিত ঐতিহ্য, সমাজ ব্যবস্থা, আদব কায়দা, আচার আচরণ ও মতামতের মধ্যে একটা মতবিরোধ দেখা যায়। পুরনো ব্যক্তিরা মনে করছেন আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। আসলে আমাদের অভাবটা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কম্পিউটার কেনার সাধ্য ক‘জনার আছে। Paradigm shift বলে একটা কথা আছে। জমিদারি যুগে পাল্কীর প্রচলন ছিলো। এখন পাল্কীর স্থান দখল করেছে বাস, মাইক্রোবাস, ইত্যাদি। শিক্ষাঙ্গনেও স্লেট পেন্সিল ও হ্যান্ডেল কলম বিরল হয়ে গেছে। আজকের যে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা প্রযুক্তি নির্ভর- চক ডাষ্টার নির্ভর নয়। চাকরির ক্ষেত্রে এখনো যে একটা ডিগ্রির দরকার এই দরকারটা না থাকলে ছাত্ররা ক্লাস রুমে কম আসতো। এশিয়ার অনেক দেশেই কলেজ ছাত্রের একটা কম্পিউটার নেই এটা ভাবা যায় না। ইন্টারনেট ব্রাউজিং থেকে শুরু করে স্কুলের হোম ওয়ার্ক সবই করছে কম্পিউটারের সাহায্যে। আর এ দেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো কম্পিউটার নেই। আজকে আমরা তথ্য প্রযুক্তির যে মহাসরণীর Information Super High Way কথা বলছি এটা কোনো নির্দিষ্ট দেশে বা এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। Change of Profession বা বাপের পেশা, বাপের ব্যবসা, বাপের ভিটামাটি এগুলো ব’লে বা এগুলো ধরে রেখে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বাপ দাদার প্রাচীন পেশাকে বাদ দিয়ে এখন অনেকেই লেখাপড়ার মাধ্যমে উৎপাদনমুখী ও লাভজনক পেশা বেছে নিচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে একই পরিবারের কেউ শিক্ষক, প্রকৌশলী, কেউ আবার কৃষি কাজে নিয়োজিত। প্রাচীন পেশা পরিবর্তন কী আর্থিক উন্নতির প্রয়োজনে ঘটছে না? এখানে কিন্তু মিডিয়ার বড় অবদান রয়েছে।
শিক্ষার ব্যাপারে আদিকালের যে কাঠামো তা বদলে যাচ্ছে । একটা সময় ছিলো, শিক্ষা মানেই ক্লাস রুম। যদিও দেশের সর্বত্র এই ক্লাস রুম শিক্ষা কাঠামো এখনো বহাল রয়েছে। তবে ধ্যান ধারণায়, আনুষঙ্গিক সম্পর্কযুক্ত কারণে, এই কাঠামো শিথিল হয়ে আসছে। এখন ওপেন ইউনিভার্সিটি, ইন্টারনেট এডুকেশন সিস্টেম, মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। শিক্ষক হয়তো অন্য দেশের কোনো এক স্টুডিওতে বসে ক্লাস দিচ্ছেন আর ছাত্ররা বসে আছে আর এক দেশে কোনো ডিজিটাল পর্দার সামনে।
নতুন ইনফরমেশন এবং কমিউনিকেশন টেকনোলজির কারণে আধুনিক বিশ্বের কোণায় কোণায় যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় রেজাল্ট হলো Death of Distance বা দূরত্বের মৃত্যু। এটাই আজকের মিডিয়া রিয়ালিটি। ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট টেকনোলজির কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশ একসাথে যুক্ত হয়ে গেছে। সেকেন্ডের মধ্যে ইনফরমেশন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। সব দেশের কালচার, মানুষ, তাদের ফুড হ্যাভিট জানতে পারছে। তাতে করে আমরা চাই বা না চাই, আমাদের জানতে- অজানতে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি। এতে ক’রে লোকাল কালচার ধ্বংস হয়ে যাবে, নাকী একটা ওয়ার্ল্ড কালচার তৈরি হবে ? গ্লোবালাইজেশন ও মিডিয়ার কারণে যখন কালচার বদলে যাওয়ার কথা আসে তখন বিশ্বের বড় ধর্মগুলো এটাকে একটা হুমকী হিসেবে দেখবে বৈকী। মিডিয়ার প্রভাব ধর্মের উপর পড়তে যে শুরু করেছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। পোপ বলেছেন, We are losing the Notion of Sin. অর্থাৎ পাপের মূল অর্থ বদলে যাচ্ছে। আমরা ছোটকালে যেটাকে পাপ মনে করতাম এখনকার তরুণ সেটাকে পাপ মনে করছে না। এই যে পাপের ব্যাখ্যা বদলে যাচ্ছে, বা পাপকে আর পাপ মনে করছে না, এতে করে কী ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বদলে যাবে? নাকী নষ্ট হয়ে যাবে? নাকী ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নতুন করে স্থাপিত হবে?
বিশ্বায়ন পরিমন্ডলে চার্চের ভূমিকা কি ? ক্যাথলিক চার্চকে বলা হয় বিশ্বের অভিনয় মঞ্চে একক অভিনেতা। আর কোনো চার্চ ক্যাথলিক চার্চের মতো এতো সংগঠিত নয়। ক্যাথলিক চার্চের উপর দায়িত্ব দিয়ে বলা হচ্ছে যেনো চার্চ বিশ্বায়নকে হিউমেনাইজ বা মানবতাময় করে তোলে। চার্চের এটা ধর্মীয় পালকীয় কাজ হিসেবে দেখতে বলা হয়েছে। তার অর্থ হলো কোনো কারণে এদিকে সেদিকে চলে যাওয়া মানব সমাজ যেনো নষ্ট হয়ে না যায়। একটা প্রশ্ন রাখা যায়- আসলেই কী ক্যাথলিক চার্চ এখন বিশ্বের অভিনয় মঞ্চে একক অভিনেতা?
বিশ্বায়ন এখন একটা বাস্তব ঘটনা এবং এর থেকে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। মনে হয় বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া আরো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এর পিছনে কাজ করছে- অর্থ, উন্নত জীবন, আধুনিক জীবন, নিরাপত্তা, উন্নত চিকিৎসা, পরিবারের ভবিষ্যৎ, আরো অনেক বিষয়। চার্চের পক্ষে তার প্রাচীন ও ট্রেডিশনাল প্রভাব দিয়ে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। চার্চ এক শতাব্দি ধরে যা চিন্তা করে বর্তমানের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটে মাত্র বছরে। অনেক সময় বিশেষ করে যুব সমাজ চার্চের আন্তর্জাতিক জ্ঞান থেকে বেশি পারদর্শী। অনেক বিষয়ে আজকের সমাজ চার্চের নেতাদের চেয়ে বেশি শিক্ষিত, বেশি অভিজ্ঞ, বেশি তথ্যজ্ঞান মাথায় রাখে। আজকে যা নতুন, কালকে এটা হয়ে যাবে পুরনো বা ওল্ড মডেল। এই যে রেপিড চেঞ্জ এই দৌড়ে সেই টিকে থাকবে যে প্রকৃত আধুনিক, যার অন্তরে পরিবর্তনের ধারাকে গ্রহণ করার মতো জোর আছে। এই রেপিড চেঞ্জের যুগে চার্চকে নানা খাতে পেশাদারি হতে হবে।
বিশ্বায়ন যুগে আমাদের যুবসমাজের অবস্থান কেমন? পশ্চিমা মিডিয়া খুব কমই থার্ড ওয়ার্ল্ডের যুবসমাজের বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরে। অন্যদিকে বিশ্বের মিডিয়া তাদের কালচার, তাদের পণ্য, তাদের গান, সিনেমা আমাদের যুবসমাজের কাছে তুলে ধরছে। ৩৬০ কোটি মানুষ বাস করে এশিয়া মহাদেশে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ। এশিয়ার এই ৩৬০ কোটি মানুষের মধ্যে ৬০ ভাগ যুবক। আমাদের সংগীত, আমার ড্রেস, সংগীত, সংস্কৃতি বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। যুবসমাজকে নিয়ে কাজ করা একটু কঠিন। একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো যে, চার্চে যারা যুবসমাজ নিয়ে কাজ করছে তারাও যুবক কিন্তু তাদের মান সম্মত কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। যুবসমাজ একজন মডেল দেখতে চায়। যুবসমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোষ্ঠী সম্প্রদায় বা ভাগ রয়েছে। যেমন, শহরের যুবক, গ্রামের যুবক, প্রতিষ্ঠানে কর্মী যুবক, হাই স্কুলের যুবক, কলেজের যুবক, ইউনিভার্সিটির যুবক, পেশাদারি যুবক, বেকার যুবক, অশিক্ষিত যুবক, আদিবাসী যুবক, অন্য এলাকা থেকে আগত যুবক ও এতিম যুবক। এতোগুলো মন মানসিকতাসম্পন্ন যুবসমাজকে নিয়ে কাজ করা সহজ কথা নয়।
তৃতীয় বিশ্বের ক্যাথলিক চার্চের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। যুবকদের নিয়ে অনেক প্রোগ্রাম চলছে। অন্যদিকে মিডিয়ার কারণেই হোক বা শিক্ষার কারণেই নেই হোক যুবসমাজও এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন। তারা তাদের দাবী দাওয়া তাদের মতামত তুলে ধরতে ভয় পায় না। চার্চ বুঝতে পারছে যে তাকে শক্তিশালী করতে পারে একমাত্র যুবসমাজ। বিভিন্ন পূজা পার্বণে অনুষ্ঠানে যুবসমাজের সহযোগীতাই সেটা বলে দেয়। মিশনে যদি বড় একটা কিছু করতে চাই তবে যুবসমাজ ছাড়া সম্ভব নয়। এফ.এ.বি.সি. বা ফেডারেশন অব এশিয়ান বিশপস কনফারেন্স গঠিত হয়েছিলো ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে মেনিলায়। এফ.এ.বি.সি. বলেছিলো যে, Asia will be a Church for the POOR and a Church for the YOUNG. তার মানে এশিয়ার খ্রিস্টমণ্ডলি হলো গরিব এবং যুবসমাজের খ্রিস্টমণ্ডলি। যুগ লক্ষণ সামনে রেখে যুবসমাজের দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো। তা কতোটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা মূল্যায়নের বিষয়।
মানুষের বিশ্বাস- God is the centre of the universe and first cause. তাই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে যা কিছু দেখা যায় বা যায়না তা পুণ্য, কারণ ঈশ্বরের সৃষ্টি। মহাকাশ, মহাকাল, মহাশূণ্য এবং মানবকুল সবকিছুই ধর্মের ধারণার মধ্যে বিদ্যমান এবং আবর্তিত। মানুষ বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের কারণেই এগুলো বিদ্যমান। এ সবকিছুই পুণ্য এবং পবিত্র। আর মানুষ যদি এর ব্যতিক্রম করে তাহলে পাপ। প্রথমে ইউরোপ এবং পরে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বেই চার্চ প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো। Church was official agent and mediator between people and God. তাই দেখা গেছে মানুষের মধ্যে একটা পরিমিত বিশ্বাস ছিলো মণ্ডলিকে ঘিরে। অসুখ বিসুখ হলে ফাদারের পরামর্শ নিতো। ফাদার আমার বাড়িটা আর্শীবাদ করে দেন। আমার ছেলেটাকে আর্শীবাদ করেন। কেউ যদি অস্বাভাবিক আচরণ করতো তাহলে মনে করা হতো এটা মন্দ শক্তির প্রভাব। তাহলে মানত করতে হবে, মীশা উৎসর্গ করতে হবে, ফাদারের পরামর্শ নিতে হবে। মানব জীবনের প্রতিটি সেক্টর বা এরিয়াই চার্চকে ঘিরে আবর্তিত হতো। মিশন চত্বরে খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিলো। প্রায় প্রতি মিশনেই ফুটবল খেলার মাঠ ছিলো। বড় বড় পার্বণগুলোতে হতো নাটক, কালচারাল প্রোগ্রাম। মোট কথা জনগণ ছিলো মিশনকেন্দ্রীক। এখন এসব প্রায় ওঠে যাচ্ছে। আর জনগণ একটু একটু করে সরে যাচ্ছে ভিন্ন দিকে। এই সরে যাওয়ার বড় অংশ হলো যুবসমাজ।
সভ্যতার অগ্রসর, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, যুগ লক্ষণ, মানুষের শিক্ষা ও ধ্যান ধারণার অগ্রগতির কারণে খুব স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের ধর্মীয় জীবন নতুন প্রশ্ন, চাহিদার সম্মুখীন হবে। ফলে ধর্মকেও সমকালীন ব্যাখ্যা, সমকালীন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। এই যে পরিবর্তনগুলো আসার পথে, আমাদের আগেই আবিষ্কার করে তার সম্ভাব্য উত্তর জেনে রাখতে হবে। তাহলেই আধুনিক মিডিয়ার যুগে চার্চের সার্বিক পালকীয় মিশন সর্বজনীন ও সহজ হবে। পাঠকদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা।
ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিনিধি