গত ২৭ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী বনানী ঢাকাতে ডিকন অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের মাইকেল হাঁসদা ও নরেশ লরেন্স মার্ডী একই দিনে ডিকন পদে অভিষিক্ত হন। ডিকন অভিষেক অনুষ্ঠানের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিস্বরূপ ২৬ মে ডিকন প্রার্থীদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন সাক্রামেন্তীয়  আরাধনা অনুষ্ঠান করা হয়। আরাধনার মূলসুর ছিল : “আনন্দে চিত্তে, বিনম্র সেবায়, পিতার দিকে যাত্রা”। আরাধনা অনুষ্ঠানের পূর্বে পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর নতুন ভবনের সামনে সেমিনারীর পরিচালক শ্রদ্ধেয় ফাদার পল গমেজ,  সহকারী পরিচালক  ফাদার রোদন রবার্ট হাদিমা,  শিক্ষা পরিচালক ফাদার আন্তনী হাঁসদা,  আধ্যাত্মিক পরিচালক ফাদার স্ট্যানলী কস্তা,  ফাদার ফ্রান্সিস মূর্মু, ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ এবং ফাদার লেণার্ড রিবেরু’ ডিকন প্রার্থীদের অভিভাবকদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

ডিকন অভিষেক অনুষ্ঠানে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, বরিশাল ধর্মপ্রদেশ, পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশ, ফাদারগণ, সিস্টাগণ এবং ডিকন প্রার্থীর অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন ও খ্রিস্টভক্তগণ প্রায় ৫০০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।

খ্রিস্টযাগে প্রধান পুরোহিত্য করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও । তিনি তাঁর উপদেশে তিনটি বিষয় নিয়ে সহভাগিতা করেছেন। প্রথমটি হলো- পুণ্যবেদীতে সেবা করা: পরিসেবকের কাজ হলো পুণ্যবেদীতে সেবা প্রদান করা। সেই সাথে একজন পরিসেবক বিশপ ও যাজকদেরকে সাহায্য করা এবং যিশুর ঐশবাণী ঘোষণা করা। শিষ্যদের প্রতি যিশুর শেষ নির্দেশ হলো  “তোমরা জগতের সর্বত্রই যাও; বিশ্বসৃষ্টির কাছে তোমরা ঘোষণা কর মঙ্গলসমাচার” (মার্ক ১৬:১৫)। বাণী ঘোষণার পাশাপাশি পরিসেবকগণ রোগীদের সাক্রামেন্ত প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ  কাজ। আর এই কাজটি মূলত সচেতন ভাবে, পবিত্র মন নিয়ে করতে হবে। তাদের হয়ে উঠতে হবে একজন প্রার্থনাশীল ব্যক্তি, ধ্যানী, ঈশ্বরের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনকারী একজন মানুষ। 

দ্বিতীয়টি হলো একজন পরিসেবককে তার পালকীয় কাজে ঐশসেবক হয়ে উঠতে হবে। তাইতো যিশু বলেছেন, আমি সেবা পেতে আসিনি বরং সেবা দিতে এসেছি। এমনকি যিশু পিতার ইচ্ছা পূর্ণ করতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে মানুষের মুক্তি সাধন করেছেন। তাই একজন পরিসেবককেও তার দৈনন্দিন জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছা গ্রহণ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পালকীয় কাজে নিজেকে বিসর্জনও দিতে হবে। একইসঙ্গে পালকীয় কর্মক্ষেত্রে ভালবাসার হৃদয় দিয়ে কাজ করতে হবে। 

তৃতীয়টি হলো-  কীভাবে সেবক হয়ে উঠি: ডিকনদেরকে হতে হবে মিলনধর্মী সেবা কর্মী। খ্রিস্টমণ্ডলিতে ডিকন বা পরিসেবকের ভূমিকা খ্রিস্টমণ্ডলির শুরু থেকেই পরিলক্ষিত হয়ে। আদিমণ্ডলিতে বিশ্বাসীদের সংখ্যা যখন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখনই প্রেরিত শিষ্যরা সাতজনকে যুবককে বেছে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে যাদের সুনাম আছে, যারা সুবিবেচক ও পবিত্র আত্মার প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ মানুষ। আজ তোমরা যারা ডিকন পদে অভিষিক্ত হবে তোমাদেরকেও হয়ে উঠতে হবে একেক জন সুবিবেচক, বুদ্ধিমান এবং পবিত্র আত্মায উদ্বুদ্ধ একজন পবিত্র সেবক।পরিসেবক হতে হবে আবেগ দিয়ে নয় বরং সহমমির্তা, ভালবাসার ও পবিত্রতার মধ্য দিয়ে। 

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : জের্ভাস গাব্রিয়েল মুরমু

Please follow and like us: