রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের দক্ষিণ ভিকারীয়ার মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী, বোর্ণী ধর্মপল্লীতে পালিত হলো শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার পর্বোৎসব। ০২ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৮ টায় সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হতে মা মারীয়ার মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করে খ্রিস্টভক্তগণ ধর্মপল্লীতে আগমন করেন এবং সকাল ৯টায় খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। পর্বীয় খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন রাজশাহীর খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ও সহকারী পাল-পুরোহিতদ্বয় এবং বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত পুরোহিতগণ। খ্রিস্টযাগের পর আশীর্বাদিত বিস্কুট বিতরণ করা হয় ও সকাল ১১টায় “শক্তিমতি কুমারী মারীয়া” এর উপর জারিগানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সর্বমোট ৮টি গ্রাম থেকে খ্রিস্টভক্তগণ এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্য থেকে প্রতিযোগী ৩টি গ্রামকে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান নির্বাচন করা হয় ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।

পর্বীয় উৎসবের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিস্বরূপ নয় দিনের নভেনা করা হয়। নয় দিনের নভেনায় মা-মারীয়ার ৯টি গুণাবলীর উপর পাশ্ববর্তী ধর্মপল্লী থেকে ন’জন পুরোহিত খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন এবং উপদেশের মাধ্যমে খ্রিস্টভক্তদের আলোকিত করেন। নয় দিনের নভেনার বিষয়গুলো ছিল: ঈশ্বর জননী কুমারী মারীয়া; দুঃখীদের সান্ত্বনা, শোকার্ত জননী মারীয়া; খ্রিস্টানদের সহায় নিত্যসাহায্যকারীনি কুমারী মারীয়া; দূতসংবাদ: মারীয়ার আহ্বান ও নম্রভাবে সাড়াদান; প্রেরিতগণের সহায় ও বাণী প্রচারকদের প্রেরণা কুমারী মারীয়া; রোগীদের স্বাস্থ্য ও পীড়িতদের সহায় কুমারী মারীয়া; স্বর্গে উন্নীতা রাণী মা মারীয়া এবং পরিবারের রাণী মা মারীয়া। ৯ম দিনে বিকেলে প্রতিটি গ্রাম থেকে মা-মারীয়ার মূর্তি নিয়ে জপমালা প্রার্থনা করতে করতে খ্রিস্টভক্তগণ ধর্মপল্লীতে আসেন। খ্রিস্টযাগের পর মা-মারীয়ার মূর্তি নিয়ে আলোক শোভাযাত্রা ও জপমালা প্রার্থনা করা হয়। সকলে গির্জার সামনে থেকে ২টি লাইন করে ছেলেদের বোডিং প্রদক্ষিণ করে শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার গ্রটোর সামনে গিয়ে শেষ করে। পর্বীয় খ্রিস্টযাগে ৮জন পুরোহিত, বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সেমিনারীয়ান, সিস্টার ও প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী, বোর্ণীর ফাদার পাল-পুরোহিত সুশান্ত ডি’কস্তা, পর্ব দিনের অভিব্যক্তি করে বলেন, মণ্ডলিতে সবচেয়ে বেশি মা-মারীয়াকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখানো হয়। তাঁকে স্মরণ করা হয় বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন জায়গায়। তিনি হলেন বিশ্বজননী মারীয়া। আর তাই খ্রিস্টভক্তসহ অন্য ধর্মের মানুষও তার তীর্থ স্থানে মিলিত হয়, সন্মান প্রদর্শন করে থাকে। আমাদের ধর্মপল্লী যেহেতু শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার নামে উৎসর্গীকৃত সেহেতু বোর্ণী ধর্মপল্লীবাসী ও ফাদার, সিস্টারগণ সকলে নয় দিনে নভেনার মধ্যেদিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করেছি। নভেনায় শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে ধ্যান করি ও তার নিকট স্মরণাপন্ন হই, আমাদের অন্তরের প্রার্থনা তা তুলে ধরি। এ বছর পর্বীয় খ্রিস্টযাগ ও নভেনার খ্রিস্টভক্তদের প্রস্তুতি বেশ ভাল ছিল। প্রত্যাশা রাখি আগামীতেও আরো বড় পরিসরে সকলের সহযোগিতায় তা পালন করতে পারবো, মা-মারীয়া যেন আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করেন।

বোর্ণী ধর্মপল্লীর কাশিপুর গ্রামের প্রেমা এক্কা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার পর্বদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাই। মা-মারীয়া আমার জীবনে সব কিছুতেই প্রভাব ফেলে। আমি বিশ্বাস করি মা-মারীয়া সর্বদা আমার পাশে আছেন এবং আমাকে রক্ষা করেন। শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার পর্বদিনটি খুবই আধ্যাত্মিক ও ধ্যানময় ছিল। তিনি যে কত গুণবতী তা আজকে আবার নতুন করে অনুভব করলাম। ফলে তার প্রতি বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে এ পর্বটি যেন আরো ঘটা করে হয় এবং এর মধ্যদিয়ে আমাদের ধর্মপল্লী যেন শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বোর্ণী ধর্মপল্লীর বোর্ণী গ্রামের হেলেন রোজারিও বলেন, মে মাস হলো মায়ের মাস, তাই এ মাসে মায়ের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করার জন্য প্রতিদিন সকালে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করি। মায়ের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস রয়েছে । তাই এই একটি মাস নিজেকে সর্ম্পূণভাবে মা-মারীয়ার চরণে উৎসর্গ করেছি। ধর্মপল্লী ও শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার পর্বটি ছিল খুবই অর্থপূর্ণ ও উৎসবমূখর। আধ্যাত্মিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য আমরা নয়দিনের নভেনা ও খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেছি। বিশ্বাস করি, আমরা সবাই এ পর্বের মধ্যদিয়ে শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করেছি।

বোর্ণী ধর্মপল্লীর বোর্ণী গ্রামের অরুপ গমেজ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন ঠিক এভাবে, জগতে আমাদের মায়েদের জন্মদিনে যেমন আনন্দ করি ঠিক তেমনই শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার পর্বে আমরা আনন্দ করেছি ও মায়ের আশীর্বাদ লাভ করেছি। জাগতিক মায়ের মতই আমরা মা-মারীয়ার কাছ থেকে শক্তি ও প্রেরণা লাভ করেছি। এ উৎসবটি খুবই আধ্যাত্মিকপূর্ণ ছিল যা আমি ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করেছি। প্রত্যাশা রাখি আগামীতে এ পর্ব আরো বড় পরিসরে উদযাপিত হোক, যেন আমরা আমাদের মা-মারীয়ার প্রতি যে ভক্তি, শ্রদ্ধা তা প্রকাশ করতে পারি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : পিটার ডেভিড পালমা

Please follow and like us: