গত ১৫ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পিএমএস-এর আয়োজনে বাণীপ্রচার ও সিনোডাল মণ্ডলি’  এই মূলভাবকে কেন্দ্র করে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে কাটেখ্রিস্ট ও ধর্মশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।  এতে ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে ৪৮ জন কাটেখ্রিস্ট  ও ধর্মশিক্ষক অংশগ্রহণ করে। 

১৫ জুন বিকেলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে কর্মশালাটির শুভ উদ্বোধন হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন রাজশাহী পিএমএস এর পরিচালক ফাদার পিউস গমেজ, ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী ও ফাদার বাবলু কোড়াইয়াসহ তিন ভিকারিয়া থেকে ৩ জন প্রতিনিধি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফাদার বাবলু কোড়াইয়া বলেন‚ ‘প্রকৃতির পাহাড় নয় বরং নিজের জীবনের পাহাড়গুলো উত্তরণের উপায়গুলো বের করতে হবে এবং সকলকে আহ্বান করে বলেন এ কর্মশালার মাধ্যমে বাণী প্রচারের সঠিক উপায় বাইবেলীয় বাণীর মধ্য দিয়ে আলোচনা করতে যেন আমরা সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক উপায়ে খ্রিস্টের বাণী প্রচার করতে পারি।’ খ্রিস্টের ভালোবাসার আদর্শ প্রচারকারী হিসেবে অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি আরো বলেন‚‘আমরা যেন হয়ে উঠতে পারি খ্রিস্টের সেই জীবনসঞ্চারী বাণী এবং তা হৃদয়ে ধারণ করে যেন মানুষের মাঝে নিজ জীবন দিয়ে প্রচার করতে পারি।’
এরপর ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন‚ ‘যিশু তাঁর নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাণী প্রচারের কাজে মানুষের প্রতিবন্ধকতাকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে বরং বাণী প্রচারকে মুখ্য হিসেবে দেখতে হবে। তিনি সকলকে আরও বলেন‚ ‘আমি আপনাদের প্রতি খুব আশাবাদী এবং খুশি এই জন্য যে, আপনারা বাণী প্রচারের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে মণ্ডলিতে সেবা দান করছেন।’
১৬ জুন সকালে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন হলো যিশুর প্রতি ভালোবাসা এবং তিনি আমাদের আহ্বান জানান যিশুর পবিত্র হৃদয়ের মতো হয়ে উঠতে।’ তিনি প্রৈরিতিক মণ্ডলি‚ আমাদের বাণী প্রচার ও বিশ্বাস বিস্তার- এই সকল বিষয়ের উপর বাইবেলের বিভিন্ন পদের মধ্য দিয়ে সহভাগিতা করেন।
বিকেলে মঙ্গলবাণীর আনন্দ-এর আলোকে সহযাত্রিক মণ্ডলির স্বরূপ ও গঠনযাত্রা এর উপর সেশন পরিচালনা করেন ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। তিনি এ বিষয়ে কিছু সুনিদিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন‚ ‘মণ্ডলিতে সব পর্যায়ের মানুষই হলেন একেকজন বাণী প্রচারক; প্রত্যেক কৃষ্টির মানুষের মধ্যেই রয়েছে নিজস্ব মূল্যবোধ যা বাণীপ্র চারে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তিনি আরও বলেন,খ্রিস্টযাগের উপদেশ হতে হবে বাইবেলের আলোকে জীবনসঞ্চারী কথা।
‘খ্রিস্টীয় শিক্ষা, ইতিহাস ও সহযাত্রিক মণ্ডলি গঠন’ – এ বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন ফাদার দিলীপ এস কস্তা। তিনি ইতিহাসের মাধ্যমে ক্যাথলিক নাম এবং খ্রিস্টান নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন । তিনি অংশগ্রহণকারী সকলের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ধর্মশিক্ষার হতে খড়ি বা প্রাথমিক শিক্ষা দেন কাটেখ্রিস্টগণ তাই ‘আমরা যা বিশ্বাস করি সে একই বিশ্বাস অন্যের মাঝে প্রচার করাটাই আমাদের প্রধান কাজ।’
কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী কাটেখ্রিস্ট ও ধর্ম শিক্ষকগণ তাদের মূল্যায়ন ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
মহিপাড়া ধর্মপল্লীর তার্সিসিউস সরেন বলেন, এই ধরনের কর্মশালা আগামিতেও করলে খুবই ভালো হয় তবে তা ভিকারিয়া ভিত্তিক। 
বোর্ণী ধর্মপল্লীর সাগরিকা গমেজ বলেন, এক কথায় বলতে গেলে এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শিখেছি যা বাণী প্রচারের কাজে আমার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত কাটেখ্রিস্ট মাস্টার সুশীল টুডু বলেন, সকল খ্রিস্টভক্তের দায়িত্বই হলো যিশুকে প্রচার করা। তাই খ্রিস্টধর্ম প্রচারই আমাদের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। আর এই সকল বিষয়ে পূর্ণ অভিজ্ঞতা পেয়েছি এই কর্মশালা থেকে এবং যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে সত্যি আমাদের বাণীপ্রচারে আমাকে অনেকটা সাহায্য করবে। তাই এই ধরনের কর্মশালা আয়োজন করার জন্য পিএমএস- কে অনেক ধন্যবাদ। 
১৮ তারিখ সকালে সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জেভার্স রোজারিও। তিনি তার উপদেশে বলেন,যখন আমি নিজের জন্য জীবন-যাপন করি, তখন সেটা জীবনদান হয় না, কিন্তু যখন অন্যের জন্য জীবন-যাপন করি, অন্যদের সাহায্য করি,অন্যের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করি তখন সেটা প্রকৃত অর্থে জীবনদান বুঝায়। তাই, বিশপ পিএমএসসহ সকল কাটেখ্রিস্টদের ধন্যবাদ দেন বাণীপ্রচারে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্য।
ধর্মপ্রদেশীয় পিএমএস এর পরিচালক ফাদার পিউস গমেজ কর্মশালার বিষয়ে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল খ্রিস্টধর্মের শিক্ষা ও বিশ্বাসের গঠন। ভাটিকান মহাসভার আলোকে, খ্রিস্টের শিক্ষা অনুযায়ী ফাদার-সিস্টার, ব্রতধারী-ব্রতধারীনীদের মতো কাটেখ্রিস্টদেরও এই ধর্মশিক্ষা যেন চলমান থাকে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল কাটেখ্রিস্টগণ যেন খ্রিস্ট বিশ্বাসের মূল বিষয়গুলো জানতে পারেন, যা তাদের বাণীপ্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
রিপোর্টঃ বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস।
Please follow and like us: