গত ১ থেকে ৪ আগস্ট রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় বিবলিক্যাল ও ক্যাটেকেটিক্যাল কমিশনের আয়োজনে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো ‘ মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণধর্মী মণ্ডলিতে মঙ্গলবাণী প্রচারে কাটেখ্রিস্টদের করণীয় বিষয়ক সেমিনার। এতে ১৩ টি ধর্মপল্লী থেকে মোট ২৩ জন কাটেখ্রিস্ট অংশগ্রহণ করেন।

১ আগস্ট বিকেলে কাটেখ্রিস্টগণ খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে একত্রিত হয় এবং ২ আগস্ট উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী । তিনি উপদেশে বলেন, কাটেখ্রিস্টগণ হলেন খ্রিস্টমণ্ডলির ধর্মশিক্ষক ও বাণীপ্রচারক। আর সেই বাণী প্রচারের কাজটি বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের জীবন সাক্ষ্য দানের মধ্যদিয়ে। তিনি আরো বলেন, ‘ আমাদের এই কোর্স আয়োজনের উদ্দেশ্যই হলো যারা কাজ করছেন বা এর পরে কাজ করবেন তাদের মাঝে বাণী প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্য রয়েছে সেগুলো যেনো আরো পাকাপোক্ত ভাবে দিতে পারি ‘।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলের মধ্য দিয়ে কোর্সের সূচনা করেন কমিশন এর আহ্বায়ক এবং রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন ফাদার ফবিয়ান মারান্ডী, একজন কাটেখ্রিস্ট মাস্টার এবং একজন সিস্টার।

‘সিনোডাল মণ্ডলিতে বাণী প্রচার , চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয় ‘ এই বিষয়ে সহভাগিতা করেন ফাদার প্রশান্ত থিওটোনিয়াস আইন্দ। তিনি বলেন, যাজকগণ হলেন স্বয়ং খ্রিস্টের দৃশ্যমান প্রতিনিধি, সুতরাং সকল কাটেখ্রিস্ট এবং ফাদার ও সকল ভক্তজনগণকে বিশ্বাসের দিক থেকে সবাইকে হয়ে উঠতে হবে একে অপরের আত্মীয়। তিনি আরো বলেন, বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে ভাষা হলো বড়ো একটা মাধ্যম। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবাণী প্রচারে আমাদেরকে আরো  সক্রিয় ও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। যেন যে সমস্ত অঞ্চলে বাণী প্রচার করবো সেখানকার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে পারি এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি। 

রাতে মঙ্গলবাণী প্রচারের ক্ষেত্রে কয়েকজন কাটেখ্রিস্ট মাস্টার তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, সমস্যা, সম্ভাবনা ও বাধাসমূহ তুলে ধরে সেই সম্পর্কে বর্তমাণে করণীয় দিকসমূহ চিহ্নিত করে, তাদের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

৩ তারিখ পবিত্র সাক্রামেন্তসমূহ ও পূণ্য উপাসনায় এ্যাকোলাইট ও লেকটরদের ভূমিকা বিষয়ে ধারণা দেন ফাদার সুরেশ পিউরিফিকেশন। তিনি বলেন, সাক্রামেন্তসমূহ হলো বিশ্বাসের দৃশ্যমান চিহ্ন কারণ এগুলো আমাদের বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত যার মধ্য দিয়ে আমরা লাভ করি ঈশ্বরের অদৃশ্য কৃপা আশীর্বাদ। 

পরবর্তী সেশনে ফাদার শ্যামল গমেজ পূণ্য উপাসনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি তার সহভাগীতায় বলেন, উপাসনা হচ্ছে মণ্ডলির প্রাণ আর এই শিক্ষাটা আমাদের ছোট বয়স থেকেই শিশুদের দিতে হবে। তিনি বলেন, মণ্ডলি হলো মা যার মধ্য দিয়ে আমাদের জন্ম। আবার মণ্ডলিকে স্ত্রীর সাথে তুলনা করেছেন যাকে ভালোবেসে আগলে রাখা যায়। তিনি মণ্ডলিতে চলমান বিভিন্ন নিয়মাবলী এবং পালনীয় বিষয় সম্পর্কে  আলোকপাত করেন । শেষে তিনি উপাসনা ব্যবহৃত গানের বিষয়ে বলেন, আমাদের গান হতে হবে কণ্ঠনির্ভর, যন্ত্র নির্ভর নয়।

৪ আগস্ট কোর্সের সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া। তিনি তার উপদেশে জন মেরি ভিয়ান্নীর জীবনাদর্শের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন অতি সাধারণ ও সহজ-সরল হৃদয়ের একজন নম্র মানুষ। তিনি তার দায়িত্ব পালনে ছিলেন বাধ্য এবং কর্তব্যনিষ্ঠ। যার মধ্যদিয়ে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত মঙ্গলসমাচার। তিনি তার প্রার্থনা ও ত্যাগস্বীকারের মাধ্যমে মানুষের মন পরিবর্তন করেছিলেন। আমরাও আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিশ্বস্তভাবে ও বাধ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার মধ্যদিয়ে হয়ে উঠতে পারি ঐশবাণীর জীবন্ত সাক্ষ্য এবং খ্রিস্টের প্রেরণকাজের অংশীদার।

খ্রিস্টযাগের পর সকল কাটেখ্রিস্ট মাস্টার ও সিস্টার, বিশ্বের সকল যাজকদের প্রতিপালক সাধু জন মেরি ভিয়ান্নীর পর্ব দিবস উপলক্ষে সকল যাজকদের নামে ফাদার বাবলুকে শুভেচ্ছা জানান। ফাদার বাবলু সকলের উদ্দেশে বলেন, কাটেখ্রিস্টগণ যে নিষ্ঠার সাথে সেবা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমাদের দায়িত্ব কতো ছোট বা বড় সেটা নিয়ে যেন চিন্তা না করি। বরং ভালোবাসাপূর্ণ হৃদয় নিয়ে খ্রিস্টের বাণী প্রচার করি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস

Please follow and like us: