“বা কামি, বাং জমা” অর্থাৎ (কাজ করবে না সে খাবে না) এই কথাটি যার মুখে সব চেয়ে বেশি উচ্চারিত হতো তিনি হলেন স্বর্গীয় ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লী। ইতালি দেশের পিমে মিশনারীদের একজন সদস্য ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লী একজন ভিন্ন ধরনের মিশনারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ, পরিশ্রমি, নীতিবান এবং সব ধর্মের মানুষের সাথে মিশে যাওয়া একজন ব্যক্তি। তিনি সুদূর ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসলেও একজন বাংলাদেশীর মতো জীবন যাপন করতেন। তিনি ধর্মের উপরের মুনষ্যত্বকে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি সর্বদা সবার পাশে থেকেছেন, সবাইকে বিপদে সাহায্য করেছেন।

তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই তবে রেখে গেছেন ভালোবাসা মিশ্রিত হাজারো স্মৃতি। তাঁর মৃত্যুতে সকলেই হয়েছিল স্তম্ভিত, শোকাহত ও মর্মাহত। ফাদারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য ১২ আগস্ট ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষ চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে পালন করা হয় তাঁর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী। ফাদার স্পিনেল্লীর স্মরণে সকাল ১০ ঘটিকায় চাঁদপুকুর ছেলেদের বোর্ডিং চাতালে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়।

পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত পিমে সম্প্রদায়েল সুপিরিয়র ফাদার ফ্রান্সিসকো রাপাচাল্লি। প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। সেই সাথে পবিত্র খ্রিস্টযাগে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার বেলিসারিও সিরো মন্তোয়া, সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার উজ্জ্বল সামুয়েল রিবেরু, ফাদার সুবল কুজুর, সিএসসি এবং ডিকন মাইকেল হাঁসদা।

পবিত্র খ্রিস্টযাগে ফাদার ফ্রান্সিসকো বলেন, যিশু যেমন অসুস্থ্য, রোগীদের সুস্থ্য করেছেন এবং দরিদ্রদের পাশে ছিলেন তেমনি ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লী জাতি, ধর্ম ও বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে সকলকেই সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন এবং প্রকৃতির যত্ন নিতেন। তাঁর এই উদারতার জন্য সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে। ফাদারের জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করে যেন আমরাও সকল মানুষকে ভালোবাসি ও সাহায্য করি এবং প্রকৃতির যত্ন নেই।

পরবর্তীতে পবিত্র খ্রিস্টযাগের পর, সুদূর ইতালি থেকে ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লীর কবর থেকে যে মাটি আনা হয় তা নিয়ে ড্রাম বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে চাঁদপুকুর মিশন কবরে যাওয়া হয় এবং সেখানে প্রার্থনা করার পর ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লীল কবরের মাটি দিয়ে একটি কবর বানানো হয় এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা স্বরূপ ফুল ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। তার পর পুনরায় বোর্ডিং চাতালে স্মরণ সভা শুরু হয়। স্মরণ সভার আরম্ভেই ফাদার স্পিনেল্লীর জীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় এবং বক্তব্য ও আলোচনা হয়।

ফাদার বেলিসারিও বলেন, চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত হিসেবে এবং একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে আমি পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই ফাদার এ্যামিলিওর সেবাময় জীবনের জন্য। তাঁর জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের জন্য একটি মহান উপহার। তাঁর মৃত্যু শোক প্রকাশ করে একজন বলেছিলেন, “ এমন অসাধারণ ব্যক্তি যুগে একবার পাওয়া যায়”। আসলে এটা সত্য যে তিনি বাংলাদেশে এসে দরিদ্র্য, অসহায় ও অসুস্থ মানুষের কল্যাণে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে দান করেছেন।

চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর ক্যাটিখ্রিষ্ট মাস্টার গপিন হাঁসদা বলেন, এক কথায় তিনি একজন ফাদার। সবার ফাদার। সবার কাছে সম্মানিত ব্যক্তি। একজন খাঁটি মানুষ। সবার কাছে তিনি অসহায়ের পিতা। তাঁর মৃত্যুতে অনেকেই বলেছে, তিনি যদি চাঁদপুকুরে না আসতেন তাহলে আমরা যে কোথায় ভেসে যেতাম, তার হদিস থাকতো না। তবে এইটুকু বলতে চাই আমার ছেলে-মেয়ে মানুষ হওয়ার একমাত্র অবদান ফাদার এ্যামিলিও স্পিনেল্লীর।

পরবর্তীতে সকলকেই দুপুরের আহার প্রদান করার মধ্য দিয়ে মৃত্যু বার্ষিকী ও স্মরণ সভার সমাপ্তি টানা হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার উজ্জ্বল সামুয়েল রিবেরু

Please follow and like us: