আগস্ট ২৫, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ নবাই বটতলা ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ‘সিনোডাল মণ্ডলিঃ খ্রিস্টবিশ্বাসের দায়িত্ব- মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ’- মূলসুরের উপর ভিত্তি করে নবাই বটতলা ধর্মপল্লীতে বিভিন্ন গ্রাম হতে আগত সমাজের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সারাদিনব্যাপী ধর্মপল্লীর পর্যায়ে পালকীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  এতে ৮৩ জন ফাদার-সিস্টার, গ্রাম প্রধান, কাটেখ্রিস্ট-গির্জা মাস্টার অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানসূচীতে ছিলো ক্ষুদ্র প্রার্থনা, শুভেচ্ছা গানসহ অতিথিদের বরণ। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশপ মহোদয়ের প্রতিনিধি ফাদার প্রেমু রোজারিও, চ্যান্সের, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, মুলসুরের উপর উপস্থাপনা দেন ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, আহ্বায়ক, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পালকীয় দলসহ উক্ত ধর্মপল্লীর পালক পুরোহিত ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন।

পালক পুরোহিত ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন স্বাগত বক্তব্যে তুলে ধরেন সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ। বিশপ মহোদয়ের পালকীয় পত্রের বিষয়গুলো সবাইকে অবহিতকরণ এবং ধর্মপল্লীর জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। মিলনের মধ্য দিয়েই আমরা খ্রিস্টবিশ্বাসের দায়িত্বকে আরও ফলপ্রসূ করতে পারি।

ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয়ের প্রতিনিধি চ্যান্সেলর শুভেচ্ছা বাণীতে তুলে ধরেন- মণ্ডলির সেবাকাজে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করার। সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও দায়িত্বশীল খ্রিস্টভক্ত হওয়ার জন্য দরকার শিক্ষা, ধর্ম, নৈতিকতা ও আর্থিক সাবলম্বী হওয়া। প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সূর্যের ন্যায় সবার জীবনকে তথা মণ্ডলিকে আলোকিত করার জন্য অনুপ্রেরণা দান করেন।

মূলসুরের উপর উপস্থাপনা দিতে গিয়ে ফাদার বাবলু বিশপ মহোদয়ের পত্রের আলোকেই ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি সহভাগিতায় তুলে ধরেন- খ্রিস্টবিশ্বাসী সবাই যিশুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ও পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মার নামে দীক্ষিত হয়ে মণ্ডলির সদস্য হন। মণ্ডলিতে সকলেরই সমান অধিকার ও দায়িত্ব। কেউ বড় নয়, কেউ ছোটও নয়, বরং সকলেই সমান কারণ খ্রিস্টই আমাদের সমান মর্যাদা দিয়েছেন- এক করে তুলেছেন। সাধু পলেন ভাষায়, “আমরাও তেমনি অনেক হয়েও, খ্রিস্টের সঙ্গে মিলনাবদ্ধ বলেই এক দেহ” (রোমীয় ১২:৫ক)। আমরা খ্রিস্টবিশ্বাসীরা অনন্ত জীবনই প্রত্যাশা করি বলেই সেই অনন্ত জীবনের যাত্রায় আমরা বিশ্বাসীগণ মিলে গড়ে তুলি একটি মিলন সমাজ। যেটা পোপ মহোদয় ভাষায় ‘সিনোডাল মণ্ডলি’। আমরা যে শুধু মণ্ডলির সদস্য, তা-নয় বরং আমরাই মণ্ডলি অর্থাৎ আমাদের নিয়েই মণ্ডলি। মণ্ডলিতে সকল সদস্যই সমান অর্থাৎ সমান মর্যাদা ও সকলেরই নিজ নিজ দায়িত্বও রয়েছে। প্রেরিত শিষ্যদের মত বিশপ ও যাজকদের দায়িত্ব হলো প্রার্থনা, ধ্যান, উপাসনা পরিচালনা ও গির্জার সেবাকাজ করা। আর খ্রিস্টভক্তগণের কাজ হলো মণ্ডলির বৈষয়িক বিষয়গুলি দেখা। আদি মণ্ডলির খ্রিস্টভক্তদের পথ অনুুসরণ করাই বর্তমান খ্রিস্টভক্তদের আহ্বান এবং সঙ্গে সঙ্গে সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করা। মণ্ডলির সেবাকাজ পরিচালিত হয় খ্রিস্টভক্তদের ভালবাসায় ও উদার দানে। খ্রিস্টভক্তদেরই দায়িত্ব হলো নিয়মিত গির্জা-উপাসনায় যোগদান, পারিবারিক প্রার্থনা, ধর্মপল্লীর বিভিন্ন সেবাকাজে অংশ নেওয়া, সন্তানদের ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক গঠন দিয়ে মানুষ করা, ইত্যাদি কাজের পাশাপাশি দরিদ্র প্রতিবেশীদের প্রতি দয়ার কাজ করা,  যাজকদের ভরণ-পোষণ করা, ইত্যাদি।

তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দলীয় আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের লিখিত প্রতিবেদনে কয়েকটি বিশেষ দিক উঠে আসে- যেভাবে মণ্ডলির জীবন ও প্রেরণকাজে অংশ নিতে পারি – নিয়মিত খ্রিস্টযাগে যোগদান করে, প্রার্থনাশীল হয়ে, মঙ্গলবাণীতে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে ও যিশুর বাণী অনুসরণসহ প্রচারের মাধ্যমে, বড়দের সম্মান করে ও ছোটদের স্নেহ-আদর ও ভালবাসা দিয়ে, ভালো ব্যবহার-কথা ও ভালো কাজে সহযোগিতা করে, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়ে ও প্রার্থনা ও ভাল কাজের জন্য উৎসাহ দিয়ে (যেমন- অসুস্থ ব্যক্তিদের বাড়ীতে গিয়ে প্রার্থনা ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে) এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে।

আমি মণ্ডলির কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য কি কি হতে পারি বা কি কি করতে পারি- নিয়মিত গির্জা-প্রার্থনা যোগদান, ব্যক্তিগত প্রার্থনাসহ পারিবারিক প্রার্থনা নিয়মিত করা, ধর্মপল্লীর বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ  (যেমন- সংঘ-সমিতি  (যেমন- শিশু মঙ্গল, সেবক দল, ওয়াইসিএস, বিসিএসএম, মারীয়া সংঘ, এসভিপি সংঘ ও ক্রেডিট ইউনিয়ন সংঘঠন), সভা-সেমিনারে, বাণী প্রচারে, আর্থিক অনুদান প্রদান ও সংগ্রহে), ছেলে-মেয়েদের যিশুর শিক্ষা ও নৈতিক গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও খেলা-ধূলার সময়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়, প্রার্থনাসভার সময়, গ্রাম্য বিভিন্ন বিচার-সালিসির সময়, জম্মদিন-বিয়ে ও মুত্যুর সৎকারের সময়সহ ইত্যাদিতে আমি মণ্ডলির কাজে  অংশগ্রহণ করবো অনুষ্ঠান পরিচালনা কাজে সক্রিয় থাকবো, ছোট ছোট দল তৈরি করে মণ্ডলির সেবাকাজগুলো করবো (যেমন- গির্জাঘর পরিস্কার, গান, বাণীপাঠ, সার্বজনীন প্রার্থনা, খ্রিস্টযাগের পরিবেশ ঠিক রাখা)। ধর্মপল্লীর পরিচালনা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য আমরা যা যা করতে পারি- আর্থিক অনুদান দিতে উদার হবো (যেমন: বাৎসরিক পারিবারিক পালকীয় অনুদানে, প্রেরণকার্যের অনুদানে, শিশু মঙ্গল অনুদানে, মারীয়া সংঘের অনুষ্ঠানের অনুদানে, ক্ষুদ্র পুষ্প তেরেজা সংঘের অনুদানে, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অনুদানে সহায়তা করে। তাছাড়া ধর্মপল্লীর যে সম্পদ আছে তা রক্ষনা-বেক্ষণে সাহায্য-সহযোগিতা করবো)।

নবাই বটতলায় অবস্থিত রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার তীর্থস্থানকে ধর্মপ্রদেশের একমাত্র তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা বিবেচনায় এনে ধর্মপ্রদেশীয় একটি তীর্থ কমিটি করা হয় যা ঘোষণা করেন বিশপ মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসাবে চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও। তীর্থ কমিটির চেয়ারম্যান বিশপ মহোদয়, আহ্বায়ক ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন, সেক্রেটারি সিস্টার কল্যাণী পালমা, এসিসহ ২১ জন সদস্য-সদস্যা।

ধর্মপল্লী পরিচালনার জন্য ১৯টি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয় সকলের সম্মতিতে। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও দুপুরের আহারের মধ্য দিয়ে সম্মেলন পরিসমাপ্তি হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার স্বপন মার্টিন পিউরীফিকেশন

Please follow and like us: