গত ১ মার্চ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে, দীর্ঘ নয়দিন আধ্যাত্নিক প্রস্তুতির পর প্রতি বারের ন্যায় এবারও মহাসমারোহে মথুরাপুর মিশনের কাতুলী গ্রামে উদযাপিত হলো পাদুয়ার সাধু আন্তনীর মহাপর্ব ও তীর্থোৎসব। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও পর্বীয় মহাখ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন এবং খ্রিস্টযাগের উপদেশ-বাণীতে বিশপ মহোদয় বলেন, সমস্ত জগৎ লাভ করে, যদি নিজের আত্নাকে হারাই তা হলে কি লাভ? এই বাণীটাকেই তিনি বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা এখানে যারা এসেছি আমরা প্রত্যেকেই সাধু আন্তনীর ভক্ত তাই এই সাধুর মধ্যস্ততায় বিশেষ ভাবে প্রার্থনা করব যেন আমাদের ভক্তি ও বিশ্বাস আরো গভীর হয়। এছাড়াও তিনি সাধু আন্তনীর নানা আশ্চর্য কাজের কথা উল্লেখ করে সকলকে সাধু আন্তনীর ন্যায় পবিত্র ও ধার্মিক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। এই পর্বীয় খ্রিস্টযাগে ১০জন যাজক, ১৫জন সিস্টার এবং প্রায় ৪০০০ খ্রিস্টভক্ত সাধু আন্তনীর মধ্যস্ততায় ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে মানত ও অন্যান্য উপহার দিতে এই পর্বোৎসবে আগমন করেন এবং খ্রিস্টযাগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, মহান সাধু আন্তনীর পর্ব উপলক্ষ্যে “অনুগ্রহ” নামে এক ছোট্ট ম্যাগাজিন/পত্রিকা প্রকাশ করা হয়।
পর্বোৎসবের দিন সকাল ৮:০০ টা থেকে সাধু আন্তনীর ভক্তগণ গীর্জা প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে নিজ নিজ উদ্দেশ্য ও মনোবাঞ্ছা পূরণে প্রার্থনা করতে থাকে। সকাল ১০:০০ টায় খ্রিস্টযাগ শুরু হয়। খ্রিস্টযাগের পূর্বে সাধু আন্তনীর নয়টি গুণ উল্লেখ করে নয়টি প্রজ্ঝলিত প্রদীপ ভক্তিপূর্ণভাবে গান গাইতে গাইতে সাধু আন্তনীর প্রতিমূর্তির সামনে রাখা হয়। খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্যকারী বিশপ জের্ভাস রোজারিও সাধু আন্তনীর মূর্তিতে মাল্যদান ও ধূপারতি দিয়ে ভক্তি পদর্শন করেন। খ্রিস্টযাগের পর সাধু আন্তনীর ভক্তদের মাঝে আশীর্বাদিত বিস্কুট ও সাধুর পুণ্য প্রতিছবি বিতরণ করা হয়। এ সময় খ্রিস্টভক্তগণ সাধু আন্তনীর প্রতিমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন।
কাতুলীতে আন্তনীর পর্বে অংশগ্রহণ করতে আসা কয়েক জন আন্তনীভক্তদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অখ্রীষ্টান একজন বলেন যে, তিনি সাধু আন্তনীর মধ্যস্থ্যতায় প্রার্থনা করে সন্তান লাভ করেছেন। তাই প্রতি বছর তিনি এখানে আসেন পর্ব করতে। যোসেফ পালমা নামের একজন ভক্ত (কাতুলী গ্রামের) বলেন যে, তিনি সাধু আন্তনীকে অনেক ভক্তি করেন। কারণ একবার তার একটি গৃহপালিত গরু মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়লে তিনি সাধু আন্তনীকে ডাকেন এবং গরুটি সুস্থ্যতা লাভ করে। জ্যোৎস্না গমেজ (মথুরাপুর) বলেন যে, তিনি সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করে হারানো দ্রব্য ও হারানো নাতিকে ফিরে পেয়েছেন। বিশ্বাস, ভক্তি ও গভীর ভালোবাসা নিয়ে অনেকেই নিজ নিজ মানত পূরণ করেন এবং সাধু আন্তনীর পদযুগল স্পর্শের মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করেন।
কাতুলীতে সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব
Please follow and like us: