গত ২৭-২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় পিএমএস এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় শিশুমঙ্গল ও এনিমেটরদের বাৎসরিক সেমিনার ২০২৩। উক্ত সেমিনারের মূলসুর ছিল ” এসো ধর্ম শিখি ও বিশ্বাসে বেড়ে উঠি” ২৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রে বিকাল ৩.৩০ মিনিটে উক্ত সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, ফাদার হারুন হেম্ব্রম, ফাদার শ্যামল গমেজ, পরিচালক, মুশরইল সেমিনারী , রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় পিএমএস এর পরিচালক ফাদার পিউস গমেজ, রাজশাহী ধর্মপল্লীতে যে সমস্ত সিস্টারগণ শিশুদের নিয়ে কাজ করেন তাদেরসহ মোট ১৮৮ জন শিশু ও এনিমেটর।
ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন,” আমি তোমাদের দেখে সত্যি খুব আনন্দিত। বর্তমানে অনেক পিতা-মাতা তোমাদের নিয়ে অনেক অভিযোগ করে কিন্তু তোমাদের দেখে আমার পুরো উল্টো লাগছে তোমরা অনেক ভালো। এই অনুষ্ঠান সার্থক করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা সকলেই যেন আরো ভালো কাজ করতে পারেন। তোমাদের অনুষ্ঠান সুন্দর হোক এই কামনা করি।”
ফাদার বাবলু কোড়াইয়া বলেন, ” এসো ধর্ম শিখি ও বিশ্বাসে বেড়ে উঠি যে মূলভাব নেওয়া হয়েছে তা অনেক সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ।এই পালকীয় কেন্দ্র তোমাদের আগমনে আনন্দিত হয়েছে। তোমরা যে কয়েকদিন থাকবে ভালো ভাবে থাকবে এবং কোন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে।”
ফাদার প্রেমু রোজারিও বলেন, ” আগে আমরা মায়েদের সাথে রোজারিমালা প্রার্থনায় যেতাম। আর বাবা ছিলেন খুব কড়া প্রার্থনা না করলেই ছিল শাস্তি। তোমরাও তেমনি প্রার্থনাপূর্ণ জীবন-যাপন গঠন করুক। ঈশ্বরকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তোমাদের জীবন সুন্দর হোক।
২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বিষয়ের উপর সহভাগিতা করেন বিভিন্ন ফাদার – সিস্টারগণ। এতে শিশু এবং এনিমেটরগণ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারনা লাভ করেন।
ফাদার পিউস গমেজ এসো ধর্ম শিখি ও বিশ্বাসে বেড়ে উঠি মূলসুরের আলোকে সহভাগিতা করে বলেন,” শিশুকাল থেকে শিশুদের ধর্মীয় বিষয়গুলোর সাথে পরিচয় করানো উচিত। ভক্তির প্রকাশ ও পবিত্রতা, মর্যাদা ও গুরুত্ব ব্যাখা করা দরকার। স্কুলের শুরু হতে ১ম শ্রেণি পর্যন্ত ছোট প্রার্থনা ও গান মুখস্থ করা প্রয়োজন। পবিত্র বাইবেলের গল্প বলার মধ্য দিয়ে শিশুদের বাইবেল সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে হবে। মা বাবার দায়িত্ব হবে মা- মারীয়ার প্রতি ভক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য দেওয়া, সাধু-সাধ্ধীদের জীবনী সহভাগিতা করা, রোজারিমালা প্রার্থনা শেখানো ও পারিবারিক প্রার্থনা পরিচালনা। ধর্মশিক্ষা ও বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা যেন অদৃশ্যের সাথে দৃশ্যমানের এক সুগভীর সংযোগ যা জীবনকে অর্থবহ করে। করে আনন্দপূর্ণ ও প্রভুতে স্থিত। খ্রিস্টীয় জীবনে এই তীর্থযাত্রায় এর চেয়ে সুন্দর ও মহত্ব আর কিছুই হতে পারে না। “
ফাদার বাবলু গমেজ তার উপস্থাপনায় বলেন,” শিশু হিসেবে ধর্মপল্লীতে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারি। শিশুদের জন্য ধর্মপল্লীতে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এতে তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকা দরকার।সাক্রামেন্তগুলো আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র বাইবেল এর বিভিন্ন পুস্তক রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জানতে হবে। এছাড়াও এনিমেটরগণ খেয়াল রাখবেন যেন শিশুরা শিশুমঙ্গল, ওয়াইসিএস, ক্ষুদ্রপুষ্পদল এসব কিছুতে যোগ দিয়ে যেন মানবিক ও বিশ্বাসের জীবন গঠনে কাজ করে। এনিমেটর এবং যুবক- যুবতী আপনারা আপনাদের ধর্মপল্লীতে নানাবিধ কার্যে ফাদারগণকে সহায়তা করতে পারেন। আপনাদের অংশগ্রহণে ধর্মপল্লী প্রানবন্ত হয়।
পিএমএস বাংলাদেশের জাতীয় পরিচালক ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ পিএমএস এর সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা প্রদান করেন এবং বলেন,” পিএমএস অর্থাৎ পন্টিফিকাল মিশন সোসাইটি পোপীয় দপ্তরের সাথে সরাসরি জড়িত। পিএমএস শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতে গড়ার লক্ষ্যে নানা কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মণ্ডলি বর্তমানে শিশুদের নিয়ে নানাভাবে চিন্তিত কিন্তু আমরা যারা এনিমেটর রয়েছি আমাদের করণীয় হবে তাদের নিয়ে সৃজনশীলমনা কাজ-কর্ম গড়ে তোলা।তোমাদের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।
উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিশুরা ২৭ও ২৮ তারিখ রাতে  বাইবেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নাটিকা উপস্থাপন করেন যা আমাদের আলোকিত করে।একই সাথে শেষ দিন ভিকারিয়া ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এক শিশু অরণ্য গমেজ বলেন,” এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছি। এখন মনে হচ্ছে আর কিছু দিন থাকতে পারলে ভালাে হতো।
একজন এনিমেটর ডালিয়া রোজারিও তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন,“পুরো প্রোগ্রাম খুব সুন্দর হয়েছে। পরবর্তীতে এধরণের আরো অনুষ্ঠান হবে বলে আশা করি এবং এনিমেটরদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
২৯ শে সেপ্টেম্বর ১১.৩০ টায় উক্ত সেমিনারের সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন পিএমএস বাংলাদেশ এর পরিচালক ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ। ফাদার তার উপদেশে বলেন,” ইংরেজিতে কেউ কোন উপকার করলে খুব সুন্দর ভাবে ধন্যবাদ দেন এবং বলেন you are angel.স্বর্গদূতের সাথে উপকারী ব্যক্তিকে তুলনা করা হয়। আজ আমরা মহাদূত মিখায়েল, রাফায়েল ও গাব্রিয়েল এর পর্ব পালন করছি। তারা তিনজন অনেক বড় ভূমিকা পালন করেন খ্রিস্টমণ্ডলিতে। মহাদূত গাব্রিয়েল ঈশ্বর ও মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করেন। শিশুরা তোমরা পবিত্র। তাইতো স্লোগানে বলা হয় শিশু যিশু ভালবাসেন “।
পরিশেষে প্রধান পোরহিত্যকারী ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ ও অন্যান্য ফাদারদের ফুল ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয় এবং ফাদার পিউস গমেজ সকলের দায়িত্ব- করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : লর্ড রোজারিও
Please follow and like us: