সবিতা টুডু

সুন্দর এই পৃথিবীতে পিতা – মাতার বদৌলতে সন্তান জন্ম লাভ করে ঠিকই কিন্তু সেই সন্তানের জীবনকে সার্থক এবং সফল করে তোলার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন শিক্ষক। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষক শিক্ষার্থীর বন্ধু, পরিচালক ও যোগ্য উপদেষ্টা । একটি জাতিকে উন্নত করার পেছনে থাকে একজন শিক্ষকের অবদান, যা জাতিকে উন্নত, সফলতার চূড়ান্ত শাখায় পৌঁছাতে সহায়তা করে। আমাদের সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একজন আদর্শ শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা। একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার মা-বাবার পরেই শিক্ষকের স্থান। সেদিক থেকে বলতেই হবে যে, শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে শুধু জ্ঞান অর্জনেই সহায়তা করেন না, তিনি শিক্ষার্থীর মা- বাবার মতো অভিভাবক হয়ে ওঠেন। এমন শিক্ষকের কাছেই একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রকৃতপক্ষে এমন শিক্ষকরাই আদর্শ শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষকের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকা বাঞ্ছনীয় –

★ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে শিক্ষার্থীর গুণাবলী বিকাশে তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখা।
★ শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এক সঙ্গে কাজ করা এবং আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা প্রয়োজন।
★ কিভাবে পাঠ উপস্থাপন করলে তা শিক্ষার্থীর কাছে সহজ ও বোধগম্য হবে তা জানার জন্য শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জানা দরকার।
★ শিক্ষার্থীর শিখন স্থায়ীকরণে শ্রবণ যোগ্য, দর্শণযোগ্য এবং দর্শণযোগ্য উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা।
★ শিক্ষাদানের পর পর শিক্ষার্থীর শিখনের মূল্যায়ন করা।
★ পাঠ্য বিষয়ের পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী, যেমন – নাচ,গান,খেলাধুলা, আবৃত্তি, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীকেপারদর্শী করে গড়ে তোলা।
★ শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব হবে অনুসরণ যোগ্য।
★ শিক্ষককে বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও সুবিবেচনার অধিকারী এবং নিরপেক্ষ মন মানসিকতার হতে হবে।
★ হাসি- খুশি ও প্রফুল্ল হতে হবে।
★ কাজের প্রতি দায়িত্বশীল এবং আন্তরিক হতে হবে।
★ শিক্ষার্থীর ভুল প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসায় বিরক্ত না হয়ে উদার মন দিয়ে তা সংশোধনের চেষ্টা করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
★ কণ্ঠস্বর অবশ্যই পরিস্কার, শ্রুতিমধুর এবং শ্রবণ উপযোগী হতে হবে।
★ সহজ, সরল ও অমায়িক হতে হবে এবং আচরণ হবে প্রীতিপূর্ণ।
★ শিক্ষকের পোশাক – পরিচ্ছদ হবে রুচিসম্মত, মার্জিত ও সর্বজনমুগ্ধ।
★ সমালোচনামূলক মনোভাব পরিহার করে সহানুভূতিশীল হতে হবে।
★ জ্ঞানার্জন ধনার্জন অপেক্ষা মহত্তর – তা মনে – প্রাণে বিশ্বাস করে অধ্যবসায়ী হতে হবে।
আসলে সকল শিক্ষক সন্মানের এবং শ্রদ্ধার অধিকারী।

উপরোক্ত গুণের সন্মিলন ঘটলেই যে আদর্শ শিক্ষক হবে, তা কিন্তু নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য একজন আদর্শ শিক্ষক তার পেশাগত মূল্যবোধ ও দৃষ্টি ভঙ্গি পোষণ করবেন। নিজের পেশার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন। সৎ ও দায়িত্ব সচেতন হবেন।

Please follow and like us: