শ্রদ্ধেয় ও স্নেহের প্রিয়জনেরা,
প্রতি বছরের মত এবারও ভস্ম বুধবার কপালে ছাই দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রায়শ্চিত্তকাল বা উপবাসকাল। এই কালটি ৪০ দিন স্থায়ী হবে। মরু ভূমিতে ৪০ দিন উপবাস থাকার সময় শয়তান যীশুকে পরীক্ষা করেছিল বা প্রলোভন দিয়েছিল। যীশু প্রলোভনে শয়তানের কাছে পরাভূত হননি; তিনি পরীক্ষা বা প্রলোভন জয় করে ছিলেন। সেই জন্য এই সময় আমরা ৪০ দিন উপবাস করি ও সাধ্য মত অন্যান্য ত্যাগস্বীকার করি যেন আমরা এই সময় যীশুর সঙ্গী হতে পারি। আবার এই সময় আমরা যীশুর যাতনাভোগ আর ক্রুশ মৃত্যুর কথাও অনুধ্যান করি আর আমাদের পাপের জন্য অনুতাপ করি ও যীশুর কাছে ক্ষমা চাই ও ঈশ^রের দিকে মন ফিরাই।
এই সময় আমি আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সকল খ্রিস্টভক্ত ভাই-বোনকে ঈশ^রের কাছে ফিরে আসতে ও তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে আহ্বান জানাই। আসুন আমরা অনুধ্যান করে দেখি কি ভাবে আমরা দৈনন্দিন কাজে, চিন্তায় ও কথায় ঈশ^রের আরও কাছে যেতে পারি ও থাকতে পারি। এরজন্য আমরা কি ত্যাগস্বীকার বা প্রায়শ্চিত্ত করব যেন আমাদের পাপের বোঝা লাঘব হয়। ভস্ম বুধবার হল উপবাস ও মাংসাহার ত্যাগ করার দিন (আমাদের দেশে নিরামিস খাবার গ্রহনের দিন)।
এই সময় কাথলিক মণ্ডলীর ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শিক্ষা অনুসারে তিনটি কাজ গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে: প্রার্থনা, উপবাস ও ভিক্ষাদান বা দয়ার কাজ। আমাদের পুণ্য পিতা পোপ আরও বলেন যেন আমরা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বা আমাদের সবার গৃহধরিত্রীর প্রতি (ঙঁৎ ঈড়সসড়হ ঐড়সব) সদয় হই ও তার কান্না শুনি; আর তা শুনি আমাদের নিজেদেরই টেকসই ভবিষ্যতের জন্য, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। “বিশ^ সৃষ্টি ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে, ঈশ^র কবে তার সন্তানদের সেই অলৌকিক মহিমা প্রকাশ করবেন” (রোমীয় ৮:১৯)।
পুণ্য পিতা লিখেছেন ‘যেন আমরা এই প্রায়শ্চিত্তকালটিকে ব্যর্থ হতে না দিই। যদি ঈশ^র-পুত্রের প্রায়শ্চিত্তকাল হয়ে থাকে মরু ভূমিতে প্রবেশ করা, যেন আদি পাপের পূর্বের অবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে ঈশ^রের সঙ্গে মিলন ঘটানো, তাহলে বর্তমান খ্রিস্টবিশ^াসীদের উচিত তাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে ও সমাজ জীবনে পাস্কারহস্যের সাথে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত হওয়া, বিশেষ ভাবে তাদের উপবাস, প্রার্থনা ও ভিক্ষাদানের মাধ্যমে।’
পোপ বলেছেন যে, উপবাস হল আমাদের খাদ্য ও পাণীয় থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করা এবং সকল প্রকার ভোগবিলাস পূর্ণ জীবন পরিহার করা; প্রার্থনা হল ঈশ^রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সকল প্রকার প্রতিমা বর্জন করে নিজের অহম বোধকে জয় করা আর ঈশ^রের সান্নিধ্যে সময় ব্যয় করা; আর ভিক্ষাদানের মাধ্যমে আমরা পাগলের মত ধনসম্পদ জমা করার প্রবনতা জয় করতে পারি, আর তা করি এই জন্য যে ধনসম্পদ আমাদের ভবিষ্যতের কোন নিরাপত্তা দিতে পারে না।
আমরা যদি এই ভাবে চলি তা হলে আমরা সমগ্র সৃষ্টির জন্য ঈশ^রের পরিকল্পনা ও আমাদের নিজেদের জন্য ঈশ^রের পরিকল্পনার আনন্দ উপলব্ধি ও আবিষ্কার করতে পারব। এর মানে হল আমাদের প্রতিবেশী সকল ভাই-বোনকে ভালবাসা ও সমগ্র বিশ^সৃষ্টিকেই ভালবাসার আনন্দ। যুবক-যুবতিদের আমি আহ্বান জানাই, তোমরা প্রভু যীশুর কাছে আস! যীশু তোমাদের ভালবাসেন আর চান যেন তোমরা তাঁর কাজে অংশ নাও। তোমরাই পারবে পৃথিবীকে নবায়ন করতে ও আরও বেশী বাসযোগ্য করতে।
তাই পাস্কার পথ আমাদের কাছে দাবী করে যেন আমরা খিস্টভক্ত হিসাবে আমাদের মুখাবয়ব ও হৃদয় মন নবায়ন করি। আর তা করি পাপের জন্য অনুতাপ করে, পাপের পথ থেকে মন পরির্বতন করে ও অন্যদের ক্ষমা দানের মাধ্যমে। পোপের মতে এই বিষয়টা সকল সৃষ্টিকেই জরিত করে। তাই আসুন আমরা এই প্রায়শ্চিত্তকালে এমন ভাবে নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলি যেন আমরা খ্রিস্টের পুণরুত্থানের গৌরবে ভূষিত হতে পারি।
+ বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ
৬ মার্চ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ

Please follow and like us: