ফাদার পিউস গমেজ
(ইন্চার্জ. মাধ্যমিক শাখা, সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ, বনপাড়া)

“সবার জন্য শিক্ষা” বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচিত ইস্যু হতে পারে। মানুষের জন্য সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এই শিক্ষাকে আমি সু-শিক্ষা হিসাবে সুনির্দিষ্ট করতে চাই। মৌলিক অভাববোধ বা শূণ্যতা যে কোন বোধসম্পন্ন মানুষকে প্রয়োজনগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। নতুবা এগিয়ে যাওয়া যায় না। থেমে হলেও শিক্ষাকে শিক্ষার মূল পথ নিশ্চিত করা দরকার। না হলে সার্টিফিকেটধারি শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে বেকারত্ব। অন্যদিকে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের আকাঙ্খিত ও উপযুক্ত কর্ম নিশ্চিত হচ্ছে না। সব ধরনের শিক্ষার খরচ বাড়ছে। হিমসিম খাচ্ছে অভিভাবকরা। একমাত্র কারণ মানুষের আয়-ব্যয় ভারসাম্য নেই। এর স্থায়ী সমাধানের রূপকল্প তৈরি করা ও বাস্তবায়ন অন্য প্রকল্পগুলোর মতোই থেমে যাবে এ আশঙ্কা অধিকাংশ মানুষেরই। অত্যোধিক জনসংখ্যা দক্ষ জনশক্তি হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখালেও, গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব ও প্রভাব মানসম্পন্ন জীবন নিশ্চিত করতে পারছে না। শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটভিত্তিক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থনৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক, ভৌগলিক, ও ধর্মীয় প্রভাব নানাভাবে বাধাগ্রস্থ করে। এর বাহিরে প্রত্যেক অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে এক ধরনের নিরাপত্তারজনিত শঙ্কায় (ইন্সিকিউরড ফিলিংস) থাকেন। এটা একধরনের মানসিক চাপ। এই কারণগুলো একদিকে আমাদেরই সৃষ্টি, অন্যদিকে আমরাই ভুক্তভোগি। এটা প্রমাণ করে শিক্ষার সাথে সাথে আমাদের আত্মগঠন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হয়নি।

বর্তমানে উচ্চ শিক্ষিত না হলেও মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেড়িয়েছে এমন মানুষ প্রায় সবখানেই আছে। বেশির ভাগ পরিবারেই কেউ না কেউ আছে যারা লেখাপড়া করছে। আর সেটা প্রাক-প্রাথমিক হতে উচ্চ শিক্ষা, এমনকি বিদেশের কোন নামকরা বিশ^বিদ্যালয়ে। শিক্ষার সাথে শিষ্ঠাচার শব্দটি খুব যায়। আর তা শেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকতার কোন বালাই এক সময় ছিল না। আর যুগের যাতাকলে বাবা-মাকে এখন সন্তান সঠিকভাবে প্রতিপালনের জন্য প্যারেন্টিং নামক বিশেষ কোর্সও করতে হচ্ছে। শূণ্যতাবোধ হতে প্রয়োজন উপলব্ধি তৈরি হয়। আর প্রয়োজন হতে শুরু হয় উৎকর্ষতার পথ বের করা। নেই যৌথ পরিবার, ভেঙ্গে যাচ্ছে সামাজিক কাঠামো, শিথিল হচ্ছে আত্মীয়তার বন্ধনগুলো। যা এক সময় অ-প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষের এ ধরনের প্রয়োজনগুলো এমনিতেই পাড় করে দিত। একদিকে একক পরিবার, অপর দিকে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবি। পরিবার ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়ছে দিন দিন। সিঙ্গেল মা’য়ের আশ্রয়ে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে মাতৃ স্নেহহীন বেড়ে উঠছে অনেক ছেলে-মেয়েরা।

পিতামাতা, পারিবারিক আদর-স্নেহ-ভালবাসার জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ফসল আর্টিফিশিয়াল অনুসঙ্গ। শিশুরা পরিবার হতে আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ও নৈতিক মর্যাদাবোধ নিয়ে বড় হবার কথা। সেক্ষেত্রে আমরা পাচ্ছি একটি নিয়ন্ত্রহীন জেনারেশন। দায়িত্বে অস্বচ্ছতা, অসততা, আদর্শিকতার অবনমন, বিত্ত ও ক্ষমতার প্রভাব, রাজনৈতিক দুষ্টাচার, স্বার্থের শীতল সংঘাত, অপরিকল্পিত কর্মকৌশল ও অদূরদর্শিতার কারণে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে জীবনমান প্রত্যাশিত পথের উল্টো দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুগের এ প্রবাহ অনেকটা স্বাভাবিকতার রূপ পাচ্ছে। গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাবার এই স্বতঃসিদ্ধতা মানুষের বিবেকবোধ তেমনটা আর নাড়া দেয় না। স্বীকার করি বা না করি এ এক ভয়াবহ আবহের মধ্য দিয়ে আমরা দিনাতিপাত করছি। এই প্রভাব বলয়ে অন্য ধারার প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক পদ-পদবি ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের চিন্তা মানুষকে পেয়ে বসলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন ও পেশাগত পরিচয় ধরে রাখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ক্ষমতার অশুভ অভিলিপ্সা অধীন্যস্তদের ও সুফলভোগীদের এক ধরনের অদৃশ্য কারাগারে আবদ্ধ করে ফেলে। এ থেকে মুক্তির পথ শুধু ভেবে বসে থাকার সুযোগ নেই। বরং নিজ নিজ অবস্থানে এর অর্থপূর্ণ পরিবর্তন খুব দরকার। এর জন্য উপযুগি মানসিকতাও বাঞ্চনীয়, যা শিক্ষাগুণেই অর্জন সম্ভব।

শিক্ষাসহ যেকোন কর্ম পরিবেশ শান্তি, আনন্দ ও সৌহার্দপূর্ণ হওয়া অনেক দরকার। এতে সহযোগি মনোভাব বাড়ে। অভিযোগ প্রিয় মানুষ কোন দিনই শান্তির মানুষ হতে পারেন না। শিক্ষা মানুষকে দান করতে শেখায় ও যোগ্য করে তোলে। এই দান ভিন্নমাত্রিক হলেও আমি ব্যক্তির দায়িত্বশীলতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। দায়িত্বশীলতা যেকোন মানুষকে কর্মক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ করে। সেই সাথে তাকে করে তুলে একজন দূরদর্শি, পরিশ্রমী ও বিশ্বস্থ মানুষ। শিক্ষার ফল তো এভাবেই ফিরে আসে।

বর্তমানে শিক্ষার মান নেই কিংবা মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা এইতো আমাদের সহজে আওড়ানো বুলি। এতে এক দিকে যেমন কথার যুক্তির কোন শেষ নেই, অন্যদিকে তেমনি প্রত্যাশার আয়ুষ্কাল ফলশূণ্যতায় বুড়োই হচ্ছে। আসলে কি, আমরা দায় এড়াতে যতটা কৌসুলি, দায়িত্ব পালনে ততটা আগ্রহী নই। বা চাইলেও পেড়ে উঠছি না। তাছাড়া পারষ্পারিক সহযোগিতার জায়গাগুলোতে আমরা অনেক এক পেশে। পূর্বের দোহায় দিয়ে বা পূর্বের নিক্তিতে বর্তমানকে পরিমাপ করে আমরা বর্তমানের সংকট সমাধান করতে পারি না। বর্তমানে পারিবারিক, সামাজিক, তথ্য-প্রযুক্তি, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পেশাগত বৈচিত্রময় বাস্তবতার জটিল প্রভাব অনেক বেশি। মানুষ জীবনের মৌলিক ধারা হতে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছে। সর্বস্তরের অদৃশ্য কাঠামো ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর প্রায়। নিয়ন্ত্রণহীনতা প্রতিটি ক্ষেত্রে। অব্যবস্থাপনাই বিশেষরূপে এখন স্বাভাবিকতা পাচ্ছে। আপনি দাঁড়িয়ে গেলেই দায়ী বলে বিবেচিত হবেন ও নেতিবাচক জনশ্রুতি বাড়তে থাকবে। সবাই অন্যকে ভাল মানুষ হিসাবে প্রত্যাশা করে। ফলশ্রæতিতে তাকে ঠকানো সহজ হয়। আমরা নিয়মানুবর্তী মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আশা করি কিন্তু নিজের বেলায় স্বার্থ হাসিলে অসৎ পন্থাই বেছে নিতে কুণ্ঠাবোধ করি না। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত মন্দতার সাথে সম্পৃক্ত হলে বা অন্যের ক্ষতির কারণ হলেও আমরা তা স্বীকার করতে চাই না। বরং উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আমরা অন্যের ক্ষতির পেছনেই সময়, মেধা ও অর্থ ব্যয় করি। শুভ ইচ্ছাগুলোকে আমাদের সঠিক পথ ধরেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হয় এবং এর জন্য সহযোগিতা নিতে ও দিতে হয়। শিক্ষার আদর্শিক ধারা এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরিকল্পিতভাবেই পরিবারগুলোতে এখন সন্তান অনেক কম। এক-দু’য়ের বেশি হবে এমন পরিবার সংখ্যা একেবারেই কম। সন্তানের প্রতি ভালবাসা থাকবে এবং সন্তানরা সকলের ভালবাসায় বেড়ে উঠবে এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু এই ভালবাসার প্রকাশগুলো মাত্রাহীন আদিখেত্যায় রূপ পেয়েছে। এতে করে সন্তানেরা যুগ প্রবাহের বলয়ে পরে নিজেদের দাবি-দাওয়া ও ইচছা-অনিচ্ছার প্রকাশগুলো নিয়ন্ত্রহীন হয়ে পড়ছে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সীমারেখা মানুষ হয়ে উঠার বিপরীতে ঠেলে দিচ্ছে। ছোট বয়স হতে শিক্ষার্থীরা অপ্রয়োজনীয় অধিকার ও ভোগবাদে আক্রান্ত হচ্ছে। সহভাগিতা, সহমর্মিতা, পরিস্থিতির সাথে খাপ-খাওয়ানো, অন্যের কাজে সাহায্য করা, অন্যের প্রশংসা করা, সম্মানবোধ, ধর্মানুশীলন, সততা, ত্যাগস্বীকার, বাবা-মায়ের পরিশ্রমকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়া এগুলো যদি পারিবারিক অনুশীলন বা সংষ্কৃতির অংশ হতে না পারে তবে সন্তানদের জন্য আর ভাল কিছু দেয়ার মতো কিছুই ভাবতে পারি না। দায়িত্বশীল আচরণ ও যুগলক্ষণ বুঝেই আমাদেরকে সন্তান মানুষ করতে হবে। আমাদের শিক্ষা লাভের প্রকাশ যদি সঠিক ধারায় প্রকাশ পায় তবে অবশ্যই ভাল কিছু আমরা আশা করতে পারি।

শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রথমেই সামনে আসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিবাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিচ্ছবি। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো, সর্বপরি দেশের বাস্তবতায় শিক্ষা চিত্র ভেসে উঠতে থাকে মনের আয়নায়। শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ব চিত্রের সাথে বিগত দু’বছরের বাস্তব চিত্র অনেক আলাদা। করোনা’র ভয়াল থাবা আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষা পরিবেশ যেভাবে বিনষ্ট করেছে তা কতদিনে বা কি উপায়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব তা নিশ্চয়তা বোধ কেউ দিতে পারবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার এবং তাদের জীবন সম্পৃক্ততার জায়গাগুলো অনেক ভীতি জাগানিয়া। পিতা-মাতার অনুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রভাব অনেক শিক্ষার্থীদের নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলছে। অনেক শিক্ষার্থী মোবাইল গেমসে আসক্ত। নেশায় আসক্ত কেউ কেউ। অনেকে বয়োঃসন্ধিকালীন জটিলতায় জড়িয়ে অপ্রাপ্ত বয়সে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ছে। শাসন করা, শাস্তি দেয়া এখন আইনত নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ থাকাই ভাল। না হলে দু’পক্ষের আগ্রাসী মনোভাব বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেত। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, এর সুফল কোনভাবেই আমরা পাচ্ছি না। অনেকে মনে করেন আমাদের দেশীয় সামাজিক-সাংষ্কৃতিক আবহে এর ফল পাওয়া সহজ হবে না। শাসন বা শাস্তির বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষকগণ এখন অনেক বিব্রত। শাস্তি এখন শিক্ষকগণ কোনভাবেই দিতে চান না। আবার এটাও ঠিক যে, কিছু শিক্ষক মনে করেন এর ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে মানুষ গড়ার কারিগড় হিসাবে সময়ের কৌশল ও দক্ষতা বৃদ্ধি করাও প্রত্যেক শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ বিষয়গুলি অনেক সংবেদনশীল বিধায়, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, অভিভাবক, জন-প্রতিনিধি ও প্রশাসনকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সাথে সঠিক ভ‚মিকা রাখা প্রয়োজন। না হলে বিপদগামী শিক্ষার্থীরা জবাবদিহীতার আওতায় আসা মাত্র এটাকে সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে। অনেক সময় কারও স্বার্থ হাসিলে প্ররোচিত হয়ে শিক্ষার্থী বিপদগামী হচ্ছে। যদি শিক্ষার কথা বলি সে বাস্তবতা আরও হতাশাজনক। প্রতিদিন ক্লাশে পড়ানো হচ্ছে। বুঝানো হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ অনুসরন করছে শিক্ষার্থীদের সেই সংখ্যা অনেক কম। বাড়ীর কাজ করা বা পরের দিন পড়া করে আসার রীতি শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে উধাও। বাধ্য করা বা চাপ সৃষ্টি করার কোন সুযোগ নেই। অভিভাবকদের সাথে নিয়ে বসলেও সব ক্ষেত্রে সহযোগি আচরণ পাওয়া যায় না। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপ, পরিবারের সাথে কথা বলা ও পরিবার পরিবার ভিজিট করার মধ্য দিয়ে অনেক ভাল ফল আসছে। তবে সামগ্রিকভাবে সামাজিক জাগরণ না হলে এ বাস্তবতার প্রত্যাশিত পরিবর্তন সহজে আসবে না।

অনেককেই মনে করেন- শিক্ষার্থী যত বেশি প্রাইভেট-কোচিং এ পড়বে ততবেশি সে ভাল রেজাল্ট করবে। এর নেতিবাচক প্রভাব অনেক। যেমন ক্লাশে অমনোযগিতা, ক্লাশে না আসা, বাড়িতে পড়াশোনায় সময় না দেয়া, অতিরিক্ত খরচ প্রবণতা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, বিপদগামী হবার আশঙ্কা ইত্যাদি। অনেক দরকার নেই তবুও প্রাইভেট-কোচিং এ। এক্ষেত্রে কথা হলো- প্রত্যেক শিক্ষার ক্লাসে পড়া বুঝে নেয়ার অধিকার আছে। আর শিক্ষক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীকে বুঝানো। সিলেবাস সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী শারিরীক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কিভাবে ঘটছে তা কিন্ত শিক্ষকগণ সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারেন এবং যথাযত দিক-নির্দেশনাও দিতে পারেন। অসম প্রতিযোগিতার মনোভাব ত্যাগ করে শৃঙ্খলার জীবন গঠন ও জ্ঞান অন্বেষনে মনোনিবেশ করতে শিক্ষার্থীরা তাদের মূল পথ খোঁজে পাবে। শিক্ষার্থীদের যুক্তিযুক্ত প্রয়োজনগুলো পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের দরদ দিয়ে সমাধানের নেয়া সম্ভব হলে শিক্ষার্থীরা আরও আনন্দ প্রিয় ও আত্মবিশ্বাসী হয়। তবে স্বপ্ন ও বাস্তবতা যেন মুখোমুখি অবস্থায় না যায়। সঠিক দিক-নির্দেশনা এক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের অনুসরনীয় কিছু দিক নিন্মে তুলে ধরা হলো-

শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরনীয়

 দেশপ্রেম ও সু-নাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠা ।
 শুদ্ধাচার শিক্ষা ও অনুশীলন।
 ধর্মীয় ও নৈতিক জীবন-যাপন।
 প্রত্যেক মানুষই আলাদা। তাই প্রত্যেককে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের আলোকেই মূল্যায়ন করা।
 অন্যের কষ্টের কারণ না হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
 অন্যের কাছ থেকে যে ব্যবহার প্রত্যাশা করি, অন্যদের সাথে ঠিক তেমন আচরণ করা।
 সময়ানুবর্তীতার অনুশীলন ও নিয়মিত পড়াশোনা করা।
 যুক্তিসঙ্গত কিন্তু পরিমিত প্রশংসা করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
 ভুলকে সঠিক প্রমাণ করতে কোনো যুক্তি না দেয়া।
 গিবত ও পরচর্চা থেকে বিরত থাকা।
 অন্যকে প্রাপ্য সম্মান দিতে শিখা।
 স্মার্টফোন আসক্তি মাদকাশক্তির মতোই ভয়ংকর। ব্যবহার হোক প্রয়োজন অনুসারেই।

শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনুসরনীয়

 শিক্ষার্থীদের নিজ কাজ সঠিকভাবে করতে শেখা।
 শিক্ষক হিসাবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনগুলো শোনার ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়া।
 উপদেশ ও জীবনাদর্শ দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন আলোকিত করা।
 শিক্ষার্থীদের নাম বিকৃত করে না ডাকা।
 শিক্ষার্থীদের সব ধর্ম ও মতের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে হতে শেখানো।
 শিক্ষার্থীদের দেশের ঐহিত্য, সংষ্কৃতি ও বীরত্বগাথা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করা।
 অপ্রাসঙ্গিক ও অহেতুক কথাবার্তা বলার অভ্যাস ত্যাগ করা।
 রূঢ় কণ্ঠে ও রাগাণ্বিত স্বরে আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলা হতে বিরত থাকা।
 কারও ব্যাপারে অযৌক্তিক প্রশংসা করা বা তোষামোদ করা পরিহার করা।
 প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক আলাপে বা কথায় কোনোরকম ব্যক্তিগত আক্রমণ না করা।

পিতামাতা হিসাবে অনুসরনীয়

 সন্তাদের সামনে নেতিবাচক ভাষা ও অন্যের সমালোচনা হতে বিরত থাকা ও সন্তানদের সময় দেয়া।
 সন্তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা।
 সন্তাদের বাধ্যতা. নম্রতা, শ্রদ্ধাশীলতা, সততা ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়া।
 সন্তানদের যেকোন ভুল সুন্দরভাবে বুঝানো ও সংশোধন দেয়া।
 শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করুন।
 সন্তানেরা যেন আত্মকেন্দ্রিক না হয়। এজন্য আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদের সাথে মেলামেশার সুযোগ দিন।
 সন্তাদের ভিডিও গেম বা ভার্চুয়াল গেম এ আসক্তি নয়; মানুষের সংষ্পর্শে বড় হতে শিক্ষা দিন।
 এক শিক্ষকের সমালোচনা, অন্য শিক্ষকের কাছে করবেন না।

ভাবনা যাহাই হোক, প্রকৃত শিক্ষা তার মান সমুন্নত রেখেই টিকে থাকে। মানুষ হিসাবে আমরা সেই নির্যাস গ্রহণ করতে ও ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে তার দায় আমাদের। সুশিক্ষার ফল অবশ্যই ভাল ও মঙ্গলকর। আমরা চাই প্রত্যেক মানুষের জীবন প্রকৃত শিক্ষার আলোক ধারায় অবগাহন করুক। বাড়তে থাকুক শান্তি ও সমৃদ্ধির মানুষ। আলোকিত হোক সবার জীবন আর আমরা হয়ে উঠি সেই আলোর পথ দিশারী।

 

Please follow and like us: