গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখে খঞ্জনপুর ধর্মপল্লীর খাটাং গ্রামে নতুন গির্জা আশির্বাদ করা হয়। অনুষ্ঠানে আরম্ভে খঞ্জনপুর ধর্মপল্লীর খাটাং গ্রামের এবং তার আশে-পাশের খ্রিস্টভক্তগণ দারাম নৃত্যের মধ্যদিয়ে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, খঞ্জনপুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার যোসেফ ফাম, রেক্টর ফাদার জোস, লক্ষীকোল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত এমিল এক্কা, সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লীর ফাদার প্রদীপ কস্তা, বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া এবং লক্ষীকোল মিশন থেকে আগত সিস্টারদের বরণ করে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে পা-ধুয়োনোর মধ্য দিয়ে এবং ফুলের তোড়া প্রদানের মধ্য দিয়ে সকলকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানানো হয়।

পবিত্র খ্রিস্টযাগের পূর্বে আশির্বাদ প্রার্থনা, ফিতা কেটে এবং পবিত্র জল সিঞ্চনের মধ্য দিয়ে শুভ উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে বিশপ মহোদয় পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন। তাঁর সহার্পিত খ্রিস্টযাগে বিশপ মহোদয় সহ মোট ৬ জন যাজক, ২ জন সিস্টার এবং প্রায় ৪০০ জন খ্রিস্টভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

খ্রিস্টযাগের উপদেশে বিশপ মহোদয় বলেন, আমরাও যিশুর মত তাঁর বাণী প্রচারের জন্য বিশেষ আহ্বান পেয়েছি। বাণী প্রচার করাই আমাদের খ্রিস্ট বিশ্বাসের একটি প্রধান কাজ। আমাদের মধ্যে যে সমস্ত ফাদারগণ বর্তমানে আপনাদের মাঝে কাজ করছেন তারাও আপনাদের কাছে খ্রিস্টের জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে উঠার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। আজকে আমরা যে সুন্দর পাকা গির্জাঘর নির্মাণ করতে পেরেছি তাও আমাদের বিভিন্ন দাতাগণ দান করেছেন। ফাদারগণ তাদের চিন্তা, মেধা ও শ্রম দিয়ে তিলে তিলে তাদের ভালোবাসার বিনিময়ে খ্রিস্টের উপস্থিতির চিহ্ন এই গির্জা ঘরটি নির্মাণ করেছেন। আজ আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। শুনেছি স্থানীয়ভাবেও আপনারা কয়েকজন গির্জাঘর নির্মাণের জায়গা ও গির্জাঘরকে সাজানোর জন্য অনুদান দিয়েছেন। যার মধ্যদিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে আমরা নিজেরাই হচ্ছি মণ্ডলি। আর এই মণ্ডলি সেবা কাজে আমরা প্রত্যেকে আহুত। এই জন্যে মণ্ডলির কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব।

হস্তার্পণ প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা আজ থেকে হয়ে উঠছো খ্রিস্টের সৈনিক। তোমাদের বাপ্তিস্মের দিনে তোমরা পিতা-মাতা ও ধর্মপিতা-মাতাগণ বিশ্বাস স্বীকার করেছিলেন এবং পাপকে পরিত্যাগ করার সংকল্প গ্রহণ করেছিল। তাই, আজ আর অন্যেরা নয় তোমরা নিজেরাই পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করবে এবং মণ্ডলির কাজে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে খ্রিস্টের সৈনিক হয়ে।

পালকীয় পরিষদের সদস্য ভেনিস তপ্ন বলেন, আজ আমরা সত্যিই আনন্দিত এই জন্য যে, আমাদের অত্র এলাকায় আমরা একটি পাকা গির্জাঘর পেয়েছি। যার মধ্যদিয়ে খ্রিস্ট নিজেই আমাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন। উপাসনালয় হলো খ্রিস্টের উপস্থিতির চিহ্ন। আর সেই সঙ্গে আজ আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বিশপ মহোদয়কে। কেননা, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমাদের আধ্যাত্মিক ও বৈশ্বিক যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মিশনারী সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের মধ্যদিয়েই আজকের এই গির্জাঘরটি আমরা পেয়েছি। তাই সবকিছুর জন্য ঈশ্বরকে এবং বিশপ মহোদয়সহ সকল ফাদারদেরকে ধন্যবাদ জানাই তাদের উদারতা ও ভালোবাসার জন্য।

খঞ্জনপুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার ফাম বিশপ মহোদয়সহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত এবং ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ এই জন্য যে, উদার দানশীল বন্ধুগণের দয়ায় এবং ভালোবাসায় খাটাং গ্রামের গির্জাঘরটির নির্মাণের কাজ সুসম্পন্ন করতে পেরেছি। বিদেশী দাতা বন্ধুদের সঙ্গে এখানকার স্থানীয় মানুষেরাও গির্জাঘর নির্মাণের কাজে এবং গির্জাঘরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দান করে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তাই, আজ সকলকে জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বলতে চাই, যদি আমরা সকলে মিলে কাজ করি তাহলে যে কোন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারব ঈশ্বরের আশির্বাদে।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: