গত ৪ নভেম্বর বনপাড়া ধর্মপল্লীর  সেন্ট যোসেফ’স স্কুল এন্ড কলেজের মহাসমারোহে ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তী উৎসব উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কাথলিক ধর্মের অবসরপ্রাপ্ত কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ রোজারিও। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় জেলা প্রশাসক মোঃ জনাম আবু নাছের ভুঁঞা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাহী অফিসার জবাব মোঃ আবু রাসেল, সেন্ট যোসেফ’স স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি ফাদার দিলীপ এস কস্তা, সেন্ট যোসেফ’স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ, বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ফাদার সিস্টারগণ এবং আরো উপস্থিত ছিলেন সেন্ট যোসেফ’স স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক ও বর্তমান অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীগণ।

দিনের কর্মসূচি শুরু হয় পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও।

মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজের হীরক জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষ্যে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ৩৩ বছর আগে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল হিসেবে এই বনপাড়া সেন্ট যোসেফস্ স্কুলেই বিশপীয় অভিষেক লাভ করেছিলাম। আজ সেই কথা আমি বার বার স্মরণ করছি। আজ এই বিদ্যাপীঠে দাঁড়িয়ে আমি স্মরণ করতে চাই সেই সমস্ত মিশনারীদের কথা, যারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তুলেছিলেন। সেই সময় তারা চেয়েছিলেন আমরা যেন শিক্ষা গ্রহণের মধ্যদিয়ে আমাদের জীবনের সার্বিক মুক্তি লাভ করি। তাই আজ আমি বলতে চাই, Education is information, Education is formation and Education is Transformation. তাই আমরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করি তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে,  আমরা যেন রূপান্তরিত মানুষ হয়ে উঠি। তাই আমি বর্তমানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে চাই, অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করার ফলে তোমরা সকলে হয়ে উঠবে রূপান্তরিত মানুষ, নতুন মানুষ এবং সর্বদিক থেকে জ্ঞান-বিদ্যায় মুক্ত ও স্বাধীন মানুষ।

রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও হীরক জয়ন্তী উৎসবে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আজ আমরা বনপাড়া সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজে’র ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তী উৎসব পালন করছি। এই জন্যে আমি খুবই আনন্দিত কেননা আমাদের চার্চ পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বিগত ৬০ বছর ধরে অত্র এলাকার জনগণকে শিক্ষা দানের জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে শিক্ষা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছি এবং আমার মতো আরও অসংখ্য মানুষ এখান থেকে পড়াশুনা করে বেরিয়েছেন ও  জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তাই আজ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য ঈশ্বরকে  ধন্যবাদ জানাই। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই সেই সমস্ত মিশনারী ফাদারগণকে যাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি আজকের এই রূপ লাভ করতে পেরেছে। আমাদের চার্চ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষদেরকে মানুষের মতো করে গঠন দেওয়া। প্রত্যাশা করি, অত্র স্কুল থেকে যারা পড়াশুনা করে বেড়িয়েছে এবং যারা ভবিষ্যতে বের হবে তারা সকলে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ তার হীরক জয়ন্তীর অনুভূতি এইভাবে ব্যক্ত করেন, আজ আমার খুবই ভাল লাগছে এই ভেবে যে, আমি অত্র স্কুল এন্ড কলেজের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তী উৎসব পালন করতে পারছি। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যে হলো ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা ও সম্ভাবনাকে বিকশিত করা এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব হলো সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করা এবং বাস্তবায়নের পথ দেখানো। আজকে “হীরক জয়ন্তী  উৎসব” উদযাপনের মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বর্তমান শিক্ষক বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে সেতুবন্ধন রচিত হবে তা এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখার ইনচার্জ ফাদার পিউস নিকু গমেজ তার হীরক জয়ন্তীর অনুভূতি এইভাবে ব্যক্ত করেন, হীরক জয়ন্তীতে এক অসাধারণ অনুভূতি কাজ করছে। কারণ প্রায় তিনটি মাস ধরে আজকের এই দিনটির জন্য আমরা শিক্ষক মণ্ডলি ও ছাত্র-ছাত্রী সকলে মিলে প্রস্তুত গ্রহণ করেছি। তারা বিভিন্ন ইভেন্টে যোগদান করেছে। তাদের পারস্পারিক সাক্ষাত হচ্ছে এবং একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞা বর্হিপ্রকাশ করছে। এই হীরক জয়ন্তী হচ্ছে এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণ যেখানে আমরা একে অপরের সাথে হাত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার আশা সঞ্চার করতে পারি।

সেন্ট যোসেফস্ স্কুলের মাধ্যমিক শাখার একজন শিক্ষিকা শিল্পী ক্রুশ তার হীরক জয়ন্তীর আনন্দ অনুভূতি এইভাবে ব্যক্ত করেন, হীরক জুবিলী উপলক্ষ্যে আমরা এক মাস ধরে যে প্রস্তুত গ্রহণ করেছি যে আয়োজন চলছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আন্তরিকতার সাথে তা করতে চেষ্টা করছি। তাই হীরক জয়ন্তী আমার কাছে খুবই আনন্দের, গর্বের এবং আগামী দিনের পথ চলার একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

জুবিলীতে অংশগ্রহণকারী দশম শ্রেণীর একজন ছাত্র নির্ণয় তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন,  আজকে আমাদের স্কুল এন্ড কলেজের ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। আজকের অনুষ্ঠানটিকে আমি একটি নতুন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা হিসেবে মনে করছি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞানের সহভাগিতা শুনে আমরা অনুপ্রাণিত হব যেন ভবিষ্যতে আমরাও তাদের মতো উদ্যমী ও আদর্শ মানুষ হতে পারি। তারা স্কুল জীবনে ভাল কিছু করার মধ্যদিয়ে ভাল কিছু করে গেছেন আমরাও সেই মতো জীবন গঠন করব।

জুবিলীতে অংশগ্রহণকারী দশম শ্রেণীর একজন ছাত্রী হিমানী ইসলাম তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন,  এই প্রথম আমি এতো বড় একটি অনুষ্ঠানে সামিল হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছি। এই ৬০ বছরের হীরক জয়ন্তী উৎসবে যোগদান করতে পেরে সবচেয়ে বড় কথা এখানকার একজন ছাত্রী হিসেবে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার হৃদয় মন আত্মায় গর্ব অনুভব করছি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: