– ফাদার পিউস গমেজ
শিক্ষকতা একটি পেশা কারণ এখানে রুটি-রুজির প্রশ্ন জড়িত। তবে অন্য সব পেশার সাথে তা মেলানো যাবে না। এজন্য তা একটি মহত্বর সেবা মাধ্যম হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। বলা যায় শিক্ষকতা হলো জীবনের সুষ্ঠ বৃদ্ধির জন্য সেবা।
আমার একজন শিক্ষক একবার তার বক্তব্যে বলেছিলেন- “শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদন্ড, তেমনি শিক্ষার মেরুদন্ড হলেন শিক্ষকগণ।” কথাটি যে গভীর তাৎপর্যবাহী তা আমি প্রতিনিয়ত অনুধাবন করি। প্রকৃত শিক্ষাবিহীন যেমন একটি জাতি ধ্বংস হতে পারে তেমনি, প্রকৃত শিক্ষকের অভাবে যে কোন জায়গার শিক্ষা কার্যক্রম পুরোটাই ধ্বংসের পথে নামতে পারে।
শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হোক বা আবহমানকাল হতে একইরূপ চলমান থাকুক সেটার উপর নির্ভর করে একজন ভাল শিক্ষক তৈরি হয় না। একজন প্রকৃত শিক্ষক যেকোন পরিবর্তীত বাস্তবতায় নিজেকে খাপ-খাওয়ানোর সক্ষমতা রাখবেন এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। কারণ কোন ড্রাইভার একই পথে গাড়ী ড্রাইভ করলেও তাকে প্রতিদিন পথের বাস্তবতা দেখে গাড়ীর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে ড্রাইভ করতে হয়। এখানে অসচেতন হবার কোন সুযোগ নেই। একজন শিক্ষকের বাস্তবতা তেমনি হবার কথা। ১০, ১৫ কিংবা ২০ বৎসর যাবৎ একই বিষয় পড়ালেও ক্লাসের বাস্তবতা, সময় ও শিক্ষার্থীদের ধারণ ও বুঝ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ক্লাস উপস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুত করা একান্ত দরকার। এভাবেই একজন ভাল শিক্ষক তৈরি হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন রূপ নতুনত্ব আসলে শিক্ষকদের পরিশ্রম একটু বেশিই হয়। কারণ নতুন করে পড়তে হয়। সাজাতে হয় ও শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে তুলতে হয়। সেখানে ভৌগলিক ও সমসাময়িক দিকগুলোও মাথায় রাখতে হয়। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন ভীতি অতিক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষৎ পথ উত্তরণের আত্মবিশ্বাসের বীজ এ সময় হতে শিক্ষকদেরই গড়ে দিতে হয়। একজন পরিশ্রমী ও পাঠ-পরিশীলিত শিক্ষক অবশ্যই অনেক অনেক অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী তৈরি করতে সক্ষম হন।
শ্রেণিকক্ষে বিষয় অনুসারে ভাষার যথাযথ ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মধ্যে হাস্যরসের খাতিরে বা সাহিত্য পাঠে বুঝানোর তাগিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার ঠিক আছে। কিন্তু কোন শিক্ষক যখন তার এই লেবাস বা অভ্যাস হতে বেড়িয়ে আসতে না পারেন, সেখানে শিক্ষার্থীদের কিভাবে আগামীর বৃহৎ পরিসরে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত করবেন? ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সম্বোধনের ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের সচেতন হবার অনেক বেশি দরকার। সেটা অবশ্যই আপনিও নয় আবার তুই না। তবে সর্বজন গ্রহণীয় প্রকাশ যেন ঘটে।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও নির্মূহ থাকতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষা ও শিক্ষকদের অনেক কথা ও সমালোচনা হয় বা হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত কারণগুলো ছাড়া অনেক কিছুই শিক্ষকগণ চাইলে প্রকৃত শিক্ষাসেবার মধ্য দিয়ে যথাযথ উত্তর অবশ্যই দেয়ার সক্ষমতা রাখেন। আশা করি এভাবেই শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা ও পরিচয়ের জায়গাগুলো আবার স্থায়ীত্ব পাবে।