“ক্রুশের উপরে দুহাত বাড়ায়ে যিশু ডাকেন
ফিরে আয়,ফিরে আয়, ফিরে আয়”
‘সব- কিছু যখন এইভাবে বিলয় হবে, তখন একবার ভেবে দেখতো, কী ধরনের মানুষ তোমাদের হওয়া উচিত,কতখানি পবিত্র ও ধার্মিক জীবনই না যাপন করা উচিত! ‘( ২ পিতর ৩:১১)। “বাবা, আমার বিয়ে হয়েছে পনের বছর হয়। এই পনেরটা বৎসর আমার স্বামী আমারে একটুও শান্তি দেয়নি। সবসময় মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করে। আর আমার ছেলে দুইটাও এখন মদ, বিড়ি খাওয়া শুরু করছে। গতকালকে আমার ছেলে আমার কাছে ১০০ টাকা চেয়েছে কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিল না তাই দিতে পারিনি। সে আমাকে গলা টিপে ধরে বলে ‘টাকা দিতে পারবি না তো জন্ম দিছোস কে’। আমি অনেক প্রার্থনা করি আমার স্বামী ও ছেলেদের মন পরিবর্তনের জন্য। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না” কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন একজন মা। আর এটা শুধুমাত্র একজন মায়ের বা একটি পরিবারের অবস্থা না। বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ পরিবারে এ অবস্থা বিরাজমান।
প্রায়শ্চিত্তকাল হলো পাপ থেকে মন পরিবর্তন ও আত্মশুদ্ধির বসন্তকাল। ভস্ম বুধবারে কপালে ভস্ম লেপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রায়শ্চিত্তকাল। প্রায়শ্চিত্ত কাল হলো আত্মশুদ্ধি ও সাধনার সময়।অন্যভাবে বলা যায় এটি ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ লাভের সময়।এসময় মণ্ডলি আমাদের আহ্বান করে কু-অভ্যাস ও দূষিত জীবন ত্যাগ এবং মনপরিবর্তন করে যিশুর কাছে ফিরে আসতে। আমরা অনেক সময় পাপ করি এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। কিন্তু ইশ্বর আমাদের জন্য অপেক্ষা করেন কখন আমরা তার কাছে ফিরে যাব।উপরোক্ত গল্পটিতে সেই মায়ের আর্তনাদ যেন আজ অনেক মায়ের আর্তনাদ। আধুনিক যুগে এসে পরিবারগুলোর অবস্থা সত্যিই খুব শোচনীয়। পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কমে গেছে শ্রদ্ধা – ভালবাসা। পরিবার হলো সন্তানদের বেড়ে উঠার ও বিকাশের কেন্দ্রস্থল। আর পরিবারেই যদি সমস্যা থাকে তাহলে সন্তানের সুষ্ঠু বিকাশ কোনভাবেই সম্ভব না। “সন্তানেরা প্রভুর কথা মনে রেখে তোমরা তোমাদের পিতামাতাকে মেনে চল, কেন না তা করাই তো সমীচীন। পিতামাতাকে সন্মান করবে, এটিই তো সেই প্রথম আদেশটি, যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রতিশ্রুতি । আর সেই প্রতিশ্রুতি হল এইঃ “তাহলেই তোমার মঙ্গল হবে, এই পৃথিবীতে তুমি দীর্ঘজীবি হবে “। আর তোমরা, পিতারা, তোমরা কিন্তু তোমাদের সন্তানদের রাগিয়ে তুলো না; বরং প্রভুরই শিক্ষা ও শাসনের আদর্শে তাদের মানুষ করে তোল।( এফেসীয় ৬:১-৪)
এফেসীয়দের কাছে সাধু পলের পত্রে সুন্দরভাবে তিনি পিতা- মাতা ও সন্তানের করণীয় সম্পর্কে বলেছেন। বর্তমান পরিবার ও প্রায়শ্চিত্ত কাল সম্পর্কে যদি বলতে চাই বা চিন্তা করে দেখি তাহলে আমরা কী দেখতে পাই? আমাদের পরিবারগুলো কি আগের মতো ভক্তি নিয়ে প্রতি শুক্রবার উপবাস ও ক্রুশের পথে অংশ গ্রহণ করে? প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা প্রার্থনা হয়? প্রতি রবিবারে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করে? একে- অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? অধিকাংশের উত্তরই হবে ” না “। সত্যিই বর্তমানে পরিবারগুলো এগুলো থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। আর আমাদের ধর্মীয় চর্চা নাই বললেই চলে। তবে আমরা প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের পরিবারকে নিয়ে একটু ধ্যান করতে পারি। প্রায়শ্চিত্ত কালে আমরা আমাদের পরিবারে কি কি করতে পারি। যদি আমরা একইরকম থাকি তাহলে তো আমরা সত্যিকার অর্থে খ্রিস্টের কষ্টভোগী সেবক ও পুনরুত্থানের অংশীদার হতে পারব না। আমরা এই সময় আমাদের পরিবারে সকলে একসাথে যীশুর পথে অগ্রসর হতে চেষ্টা করি।
প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের পরিবারের জন্য করণীয় কিছু দিক:
১) অন্তত শুক্রবার দিন উপবাস করার মধ্য দিয়ে যিশুর সান্নিধ্যে বাস করা।
২) আমাদের ত্যাগ ও কষ্টের অংশটুকু গরীব-দুঃখীদের দান করা।
৩) একে-অপরকে গ্রহণ ও সাহায্য করার মনোভাব বৃদ্ধি করা।
৪) প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসাথে প্রার্থনা ও বাইবেল পাঠ।
৫) রবিবার দিন খ্রিস্টযাগে যোগদান।
৬) অপচয় কমানে অর্থ্যাৎ অযথা টাকা পয়সা খরচ না করা।
৭) অন্যকে আঘাত দিয়ে কোন কথা না বলা এবং অন্যের মতামতের গুরুত্ব প্রদান করা।
৮) মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ না করা।
৯) মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে সময় কম ব্যবহার করে পরিবারের সময় দেওয়া।
১০) নেশা করা থেকে সংযত থাকা।
প্রায়শ্চিত্তকাল হলো মন পরিবর্তন ও যিশুর সাথে একত্রে পথ চলার সময়। আমরা আমাদের পরিবারে নিজেদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে যিশুর পবিত্র পরিবার হয়ে উঠি এবং স্বয়ং যিশু আমাদের সাথে বাস করেন। প্রায়শ্চিত্তকালের প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যিশু আমাদের জন্য ক্রুশে প্রাণ ত্যাগ করেছেন। আর তিনি প্রাণ ত্যাগ করেছেন আমাদের পরিত্রানের জন্য। তাই, আসুন এই প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের পরিবারকে করে তুলি নাজারেথের পবিত্র পরিবার। আমরা সবাই পাপী আর প্রায়শ্চিত্তকাল হলো আমাদের পাপময় জীবন সমন্ধে সচেতন হয়ে অনুতপ্ত হৃদয়ে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসার বিশেষ সময়। তাই আমরা আমাদের পাপের জন্য অনুতাপ করে যেন পুনরায় প্রভুর কাছে ফিরে যেতে পারি। এটাই হোক প্রতিটি পরিবারের প্রার্থনা।
ডানিয়েল লর্ড রোজারিও
Please follow and like us: