ডানিয়েল লর্ড রোজারিও
মহান সাধক, সত্যের ধারক, প্রতিপালক
হে সাধু যোসেফ, সাধু যোসেফ
কিছুদিন আগে মানগাছা উপধর্মপল্লীর একজন মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম। কথাক্রমে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বনপাড়া লূর্দের রাণী মারিয়ার পর্বে আসো নি কেন? সে আমাকে উত্তর দিল, “মানুষের পর্বে বিনা দাওয়াতে আমরা যাই না।” আমি তাকে বললাম, মা – মারিয়া তো সবার মা আর তিনি আমাদের সকলকে ভালোবাসেন। তাহলে মায়ের তীর্থে দাওয়াত কেন লাগবে? সে আমাকে বলল, “আমরা বাবাভক্ত। আমরা বাবাকে অনেক ভালোবাসি আর তাই ১৯ মার্চ ধুমধাম করে সাধু যোসেফের পর্ব পালন করব, দাওয়াত রইল।” আমি শুধু বললাম ঠিক আছে। ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ হাসছিলাম কথাগুলো মনে করে কিন্তু পরে চিন্তা করলাম আসলেই তো মেয়েটার সাধু যোসেফের প্রতি কত ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাই আমার ক্ষুদ্র চিন্তাশক্তি চিন্তা ও চেষ্টা করলাম সাধু যোসেফ কে নিয়ে কিছু লেখার।
বাইবেলে নতুন নিয়মে মাত্র ৮ বার সাধু যোসেফের নাম উল্লেখ রয়েছে। বাইবেলে খুব সামান্যই যোসেফ সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও মুক্তির ইতিহাসে তাঁর কাজ ও ভূমিকা সামান্য নয়; বরং অসামান্য ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যিশুর পালক পিতা হয়েও তিনি পিতার দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। যিশুকে বার বার রক্ষা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। পেশায় তিনি ছিলেন ছুতোর মিস্ত্রী। দীর্ঘ যাত্রাকালে পথে, মিশরে এবং নাজারেথে ফিরে এসে ছুতোর মিস্ত্রীর কাজ করে, প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে তিনি যিশু ও মারিয়ার সকল অভাব পূরণ করেন এবং তাদের যত্ন ও প্রতিপালন করেন। সাধু যোসেফ খুবই দরিদ্র জীবন-যাপন করতেন। যোসেফ ছিলেন একজন আদর্শ ও ত্যাগী পিতা। আপন পালক পিতা যিশুর প্রতি তার ছিল অপরিমেয় স্নেহ ও ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার কারণেই যিশু ও মারিয়ার প্রতি যে কোন প্রকার ত্যাগস্বীকার ও কষ্ট করতে কন্ঠাবোধ করেননি।
সাধু যোসেফের বিশেষত্ব হলো : তিনি ঘুমান এবং ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন। প্রতিটি স্বপ্নে স্বর্গদূত যেভাবে তাঁকে আদেশ দেন ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি তা পালন করতে শুরু করেন। বাংলা ‘যোসেফ’ নামটি এসেছে ইংরেজি ভাষায় বাইবেলের Joseph নামটি থেকে। যোসেফ বা Joseph নামটি প্রকৃত পক্ষে বাইবেলে উল্লেখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় নাম। বলা হয়ে থাকে পুরাতন নিয়মে প্রায় ২০০ বারেরও বেশি যোসেফ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
সাধু যোসেফের কয়েকটি পরিচয় :
১. যোসেফ ছিলেন অনন্য সুন্দর এক ইহুদি যুবক, সহজ সরল ও ধার্মিক।
২. কুমারী মারিয়ার স্বামী
৩. যিশুর পালক পিতা
৪. ছুতোর মিস্ত্রী
সাধু যোসেফের কয়েকটি জনপ্রিয় উপাধি :
১. মারিয়ার স্বামী সাধু যোসেফ ( মথি ১:১৭)
২. কর্মী সাধু যোসেফ ( মথি ১৩:৫৫)
৩. স্বপ্নদ্রষ্টা সাধু যোসেফ ( মথি ১:২০-২১)
৪. যিশুর পালক পিতা সাধু যোসেফ ( মথি ১:১৭-১৮)
৫. বিশ্বমণ্ডলির প্রতিপালক
সাধু যোসেফের তিনটি স্বপ্ন :
১. কুমারী মারিয়াকে গ্রহণ ( মথি ১:১৮-২১)
২. মিশরে পলায়ন ( মথি ২: ১৩-১৫)
৩. মিশর থেকে নাজারেথে প্রত্যাবর্তন (মথি ২:২০-২২)
সাধু যোসেফের গুণাবলীর আলোকে আমাদের করণীয়:
১. সাধু যোসেফের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল নীরবতা। বর্তমান সময়ে এই নীরবতা অনেক কঠিন একটা কাজ। কিন্তু সাধু যোসেফ আমাদের শিক্ষা দান করেন নীরব থাকতে।
২. সাধু যোসেফ ছিলেন প্রার্থনাশীল। আমাদের মধ্য থেকে দিন দিন এটি বিলুপ্তির পথে। সাধু যোসেফ শিক্ষা দান করেন প্রার্থনা করতে।
৩. সাধু যোসেফ ছিলেন একজন সাহসী যুবক ও সাহসী মানুষ। তিনি আমাদের শিক্ষা দান করেন অন্যায় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতায় সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে।
৪. ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা সাধু যোসেফের আরেকটি বড় গুণ। তিনি যেন আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন বিপদে ধৈর্য্য ধরতে।
৫. নম্রতার আদর্শ সাধু যোসেফ। নম্রতা হলো সকল গুণের আঁধার। আর এই নম্রতা থাকলে আমরা একজন সুখী মানুষ হতে পারব।
৬. পিতাদের আদর্শ। সাধু যোসেফ যেভাবে তার সন্তান যিশুকে লালন করেছেন তেমনি সকল পিতার উচিত তার সন্তানদের যথাযথ যত্ন করা।
সাধু যোসেফের সপ্ত আনন্দ :
১. স্বর্গদূতের আনন্দ সংবাদ ( মথি ১:২০)
২. যিশুর জন্ম ( মথি ১:২১)
৩. যিশুর নামকরণ ( মথি ১:২৫)
৪. যিশুর মুক্তিদায়ী কাজের স্মরণে যোসেফের আনন্দ ( লুক ২:৩৮)
৫. যিশুর পায়ের কাছে মিশরের মূর্তির পতন ( মথি ২:৩০)
৬. নাজারেথের যিশু মারিয়ার সাথে পবিত্র জীবন-যাপন ( মথি ২:২৩)
৭. জেরুজালেমের মন্দিরে যিশুকে খুঁজে পাওয়া ( লুক২:৪৬)
সাধু যোসেফের সপ্ত শোক:
১. মারিয়া সম্পর্কে সন্দেহ – উদ্বেগ ( মথি ১:১৯)
২. চরম দরিদ্রতায় যিশুর জন্ম ( লুক ২:৭)
৩. যিশুর পরিচ্ছেদন ও রক্তপাত (লুক ২:২১)
৪. সিমিয়োনের উক্তি (লুক ২:৩৪)
৫. মিশরে পলায়ন ( মথি ২:১৩)
৬. স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ও উদ্বেগ ( মথি ২:২২)
৭. যিশুকে মন্দিরে হারানো ( লুক ২:৪৫)
সাধু যোসেফ ছিলেন একজন আদর্শ পিতা। তিনি সর্বদা আমাদের পথ দেখান সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে। আসুন, আমরা সকলে তার পরিচালনায় পথ চলে নিজ জীবনকে অগ্রসর করি। সাধু যোসেফ আমাদের সকলের প্রতিপালক তিনি আমাদের সকলকে পরিচালিত করুন সত্য ও ন্যায়ের পথে।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার:”সাধু যোসেফ পরিবারের রক্ষক ও বিশ্বমণ্ডলির প্রতিপালক, “- ফাদার যোহন মিন্টু রায়)