পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জাতীয় সংলাপ কমিশনের শুভেচ্ছা বাণী
প্রিয় মুসলমান ভাই-বোনেরা,
প্রতিটি বছরের ন্যায় এবারও কাথলিক বিশপগণের খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন পবিত্র রমজান ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর মহোৎসব উপলক্ষে আপনাদেরকে প্রীতিপূর্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমাদের িএই শুভেচ্ছা বাণী আমাদের ও আপনাদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো অধিক নিবিড় করে তোলে।
এবারের শুভেচ্ছা বাণীতে যে বিষয়টি আমরা প্রকাশ করতে চাই তা হলোঃ বিশ্বাসের অনুশাসনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। বাংলাদেশ বহু ধর্ম, বর্ণ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির দেশ। আর যুগ যুগ ধরেই বাংলাদেশের মানুষ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করে আসছে। প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে ধর্মীয় মহোৎসব ধর্মীয় বিশ্বাস-অনুশীলনকে ঘিরে। মুসলমান ভাই-বোনদের পবিত্র রমজান মাসে রোজাসহ বহুবিধ কৃচ্ছাসাধনার পর শান্তি-সম্প্রীতি ও মিলনের ঈদ মহোৎসব হল একটি কেন্দ্রীয় ধর্মীয় মহোৎসব। এই মহোৎসবে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনসহ আরো অনেকভাবেই অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসী মানুষ মুসলমান ভাই-বোনদের সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
বর্তমান পৃথিবীতে গোটা মানব পরিবারে বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আগের চাইতে আরো অধিক জরুরী হয়ে পড়েছে। পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস তাঁর ফ্রাতেল্লী তুত্তি (ভাইবোন সকলে) সার্বজনীন পত্রে সামাজিক ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্ব শান্তির উপর খুবই জোর দিয়েছেন। তিনি শান্তি ও সম্প্রীতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে আবশ্যিক বলে গণ্য করেছেন। কাথলিক পোপগণই এর বাস্তব উদাহরণ রেখেছেন: ১৯৮৬ খ্রিস্টবর্ষে ইটালীর আসিসি শহরে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবর্গদের নিয়ে একত্রে প্রার্থনা করেছিলেন। একই মূল্যবোধে ২০১৭ খ্রিস্টবর্ষে বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকার রমনা গীর্জার মাঠে বিভিন্ন ধর্মের ও চার্চের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন; রোহিঙ্গাদের কয়েকজনের সাথেও সাক্ষাত করেছিলেন।
প্রত্যেক ধর্মই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলে; প্রত্যেক ধর্মের মধ্যেই শান্তি ও সম্প্রীতির অনুশাসন রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় উৎসবই শান্তির আমেজে উদযাপিত হয়। মাসব্যাপী রোজা এবং অন্যান্য সিয়াম সাধনা আত্মশুদ্ধি ও সৃষ্টিকর্তার তৌফিক লাভের একটি ফলপ্রসূ মাধ্যম। মাসব্যাপী এই সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ অর্থই আনন্দ; ফিত্র অর্থই ফিতরা প্রদান; অভাবীর প্রতি দৃষ্টিদান। এই মনোবৃত্তি নিয়েই ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের নামাজ এবং শান্তি ও সম্প্রীতির আলিঙ্গন; এরপর প্রেমভোজ এবং অন্যান্য বিনোদন। এই আলিঙ্গন, প্রেমভোজ, চিত্তবিনোদনে আন্তঃধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস একক হতে পারে; উৎসব উদযাপনে কিন্তু হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান একাত্ম হয়ে যায়।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা; আসুন এবারের ঈদে হোক আমাদের প্রার্থনাঃ সমগ্র বিশ্বের হিংসা-বিদ্বেষের আগুন প্রশমিত হয়ে প্রজ্জ্বলিত হোক শান্তি-সম্প্রীতির প্রদীপ।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন এবং সার্বিকভাবে গোটা খ্রিস্টান সমাজের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। এই ঈদে আপনাদের সবাইকে সৃষ্টিকর্তা হাজারো তৌফিক দান করুন।
ঈদ মোবারক!! ঈদ মোবারক!! ঈদ মোবারক!!
সভাপতি : আর্চ বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি
সেক্রেটারী : ফাদার প্যাটিক গমেজ
খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ।