৫৮তম বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ দিবস উপলক্ষে পোপের বাণী
স্নেহের ভাই ও বোনেরা,
আমি গত বিশ্ব শান্তি দিবসের বাণীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন পদ্ধতি- যা আসলেই প্রভাবিত করছে বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মৌলিক সামাজিক জীবন- সে বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। এ পরিবর্তন, এ ক্ষেত্রে যারা পেশাজীবী শুধু তাদের নয়- কিন্তু এ পরিবর্তন সবাইকে প্রভাবিত করছে। দ্রুত বর্ধনশীল এই বিস্ময়কর নব প্রবর্তন, যার কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতা আমাদের অনুধাবন ও মূল্যায়ন সামর্থের বাইরে এবং ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে উভয়দিকে- উত্তেজনা এবং অজ্ঞতা। এই বিষয়টিই পরিস্কারভাবে মানুষের স্বভাব নিয়ে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- ভবিষ্যতের গবেষণাগারে নির্মিত মনুষ্যরূপি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আমাদের সাদৃশ্যতা নিয়ে। তা হলো, কীভাবে আমরা পুরোমাত্রায় মানব স্বভাবে অবস্থান ক’রে এই সাংস্কৃতিক রূপান্তরকে ভালো উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারি।
হৃদয় দিয়ে শুরু : সবকিছুর আগে, আমাদের দূরে সরিয়ে রাখতে হবে এর দ্বারা বিপর্যয় নিয়ে ভবিষ্যতবাণী এবং এর অনুভূতিশূন্য প্রভাব। শতাব্দি পূর্বে রোমানো গৌরদিনি মানবকূল ও প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছিলেন। গৌরদিনি আমাদের অনুরোধ করেছিলেন “নতুনকে” অগ্রাহ্য না করে “সুন্দর বিশ্বকে সংরক্ষণ না করে বিলুপ্ত হওয়ার জন্য যেনো নিন্দাজ্ঞাপন” না করি। একই সময়ে গৌরদিনি প্রাবক্তিকভাবে সতর্ক ক’রে দিয়ে বলেছিলেন, “আমরা অনবরত হয়ে ওঠার পদ্ধতিতে রয়েছি। আমাদের অবশ্যই নিজেদের সাধ্যমতো এই পদ্ধতির মধ্যে উন্মুক্তভাবে প্রবেশ করতে হবে এবং একই সময়ে সতর্ক থাকতে হবে- এর ধ্বংসাক্তক ও অমানবিক দিকগুলো থেকে।” উপসংহারে তিনি বলেছিলেন, “কিছু প্রযুক্তিগত, বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে, যা মানবিকভাবে শুরু না করলে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে একটা নতুন ধরনের মানব স্বভাব গঠিত হবে যা গভীর আধ্যাত্মিকতা, নব স্বাধীনতা ও অভ্যন্তরিণ অধিকার লাভ করবে।
ইতিহাসের এই সময়ে, যখন উন্নত প্রযুক্তি ও অন্যদিকে দুর্বল মানবতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমতাবস্থায় আমাদের ধ্যান- অনুধ্যান শুরু করতে হবে হৃদয় দিয়ে। আধ্যাত্মিকতা ধারণ ক’রে যখন বাস্তবতাকে দেখি, হৃদয়ের প্রজ্ঞা দিয়ে পুনরাবৃত্তি করি, মাত্র তখনই আমরা সময়ের নতুনত্বকে মোকাবেলা ও বিশ্লেষণ ক’রে পরিপূর্ণ মানব যোগাযোগ ব্যবস্থা পুণ:আবিস্কার করতে পারি। পবিত্র বাইবেলে হৃদয়কে দেখা হয় স্বাধীনতার স্থান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা হিসেবে। এর নির্দেশনা হলো সমন্বিতকরণ ও ঐক্যতা। কিন্তু এগুলো আমাদের আবেগ, ইচ্ছা,স্বপ্ন এবং সবকিছুর উর্ধ্বে আমাদের অভ্যন্তরে ঈশ্বরের সঙ্গে অন্তর প্রকৃতি। হৃদয়ের জ্ঞান হলো এমন গুণ যা আমাদের সামর্থ এনে দেয়- পুরো বা আংশিকভাবে সমন্বিতকরণ, আমাদের সিদ্ধান্ত ও সে সবের ফলাফল, আমাদের মহত্ব, আমাদের ক্ষতিসমূহ, আমাদের অতীত, আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতা এবং বৃহৎ সমাজের মধ্যে আমাদের সম্পৃক্ততা।
হৃদয়ের এই জ্ঞান যারা অনুসন্ধান করে- তারা খুঁজে পায়, যারা ভালোবাসে- তারা সহজেই পায় দর্শন, যারা তার সন্ধান করে- তারা সহজেই পায় তার সন্ধান (প্রজ্ঞা ৬:১২-১৬)। ইহা তাদের সঙ্গী হয় যারা উপদেশ কামনা করে (হিতোপদেশ ১৩:১০)। তাই তোমার দাসকে এমনই এক বিবেচনাপূর্ণ অন্তর দান করো (১ম রাজা ৩:৯)। পবিত্র আত্মার দান, আমাদের ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দেখতে সহায়তা করে এবং সান্নিধ্য, অবস্থা, ঘটনাবলী দেখতে এবং সে সবের অর্থ ব্যাখ্যা করে। এই প্রকার জ্ঞান ব্যতিত জীবন হয়ে যায় অন্ধ, কারণ প্রকৃতপক্ষেই এই জ্ঞান … জীবন উদ্ধার করে।
সুযোগ এবং বিপদ : এই জ্ঞান যন্ত্র থেকে দেখা সম্ভব নয়। যদিও “কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা” এখন পরিবর্তিত ও শুদ্ধভাবে বলা যায় “যন্ত্রের শিক্ষা” কারণ বিজ্ঞান সাহিত্যে “বুদ্ধিমত্তা” বিপথভাবে প্রমাণ করতে পারে। এতে সন্দেহ নাই যে, যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে মাত্রাহীন তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা, তবে মানুষ আপনা থেকেই এবং নিজেই তথ্য-উপাত্ত প্রদানে বোধবুদ্ধি বহন করে। এটা শুধু কোনো বিষয় নয় যে যন্ত্র মানবরূপে দৃশ্য হচ্ছে, কিন্তু সেটা হবে মানবতাকে নোংড়া স্তর থেকে অসীমে ওঠে আসা মায়া মাত্র এবং যা হবে সামাজিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মানুষ যে উত্তম সৃষ্টপ্রাণি তা ভুলে যাওয়া। মানুষ সব সময় অনুধাবন করে যে, সে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয় তাই চেষ্টা করে ন্যূনতম থেকে ওঠে আসার জন্য সম্ভাব্য ক্ষমতা বিনিয়োগ করতে। প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগের কৃত্রিমবস্তু, যা বর্ধিত বাহু হিসেবে ব্যবহার এবং গণমাধ্যম দ্বারা কথিত শব্দ হিসেবে ব্যবহারই আজকের উচ্চ ক্ষমতাশীল অত্যাধুনিক যন্ত্র হয়ে ওঠা, যা চিন্তাশক্তি হিসেবে সামর্থ যোগাচ্ছে। এ সব প্রতিটি ধারণা আদিকালীন প্রলোভন দ্বারা অপব্যবহার হয়ে, হয়ে ওঠতে হতে পারে “ঈশ্বরবিহীন ঈশ্বর ছাড়া” (আদি ৩) যা আমাদের প্রচেষ্টা শুধু কথা মাত্র। যা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া মুক্ত দান যা অন্যের সঙ্গে উপভোগ করা শুধু ব্যত্যয় কিছু নয়।
যা কিছু আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে- তা হতে পারে একটা সুযোগ বা আবার হুমকীসরূপ। আমাদের দেহ যা সৃষ্টি করা হয়েছে যোগাযোগ ও আদান প্রদানের জন্য, যা আবার হতে পারে হিংসার কারণ। একইভাবে মানব সভ্যতার যে কোনো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হতে পারে ভালোবাসা-সেবা অথবা বৈরি আধিপত্য। তেমনিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতি একদিকে যেমন অজ্ঞতা দূর করতে পারে অন্যদিকে বিভিন্ন মানবজাতি ও প্রজন্মের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানও করতে পারে। উদাহরণসরূপ বলতে হয়, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, যে সব জ্ঞানের কথা আমাদের পিতৃগণ প্রাচীনকালে লিখে গেছেন অথবা ব্যক্তিগণ যারা একই প্রকার ভাষা ব্যবহার করে না- তাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্ষম করে তোলা। এমনকি একই সময় এগুলো হতে পারে “সমোদ্ভব দূষণ”, ভগ্ন বাস্তবতা, যা হতে পারে আংশিকভাবে অথবা পুরোভাবে অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার- যা তাদের বিশ্বাসে সত্য। চিন্তার বিষয় যে, অনেকদিনের জমে থাকা অযোগ্য জাল তথ্য-খবর, যা এমনভাবে তৈরি করা হয়, দেখতে দৃশ্যত অবিকল হলেও তা কিন্তু ভূয়ো, অন্যদিকে অন্যের কন্ঠস্বর এমনভাবে নকল করা হয় যা আসলে তার কন্ঠস্বর নয়- এগুলো হলো “মেকি-প্রতারণা।” বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে এসবের প্রয়োজন হলেও ছদ্মরূপ প্রযুক্তির কারণে ভুলদিকে পরিচালিত হয়ে অন্যের সঙ্গে এবং বাস্তবতা সঙ্গে সম্পর্ক ভঙ্গুর করে তোলে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রথম ঢেউ গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জেনেছি এর মূল্য, এর সম্ভাবনা, একই সঙ্গে এর ঝুঁকি ও ধরনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। দ্বিতীয় ধাপে এই কৃত্রিম বুদ্বিমত্তা প্রশ্নাতীতভাবে নানা গুণে অগ্রগামী হয়েছে। সুতরাং এটা জরুরি- বোঝার জন্য, মূল্যায়ন করার জন্য, কারণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়াদি যদি ভুল হাতে গিয়ে পড়ে তবে দৃশ্যপদ বদলে যেতে পারে। কারণ মানব জ্ঞানের অন্যান্য উৎপাদন এবং সক্ষমতার মতো গণনা প্রণালী নিরপেক্ষ নয়। এই কারণে আদর্শগত নীতি প্রতিরোধ, ক্ষতি সাধন থেকে বিরত রাখা, পক্ষপাতিত্ব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতি ব্যবহার ক’রে সামাজিকভাবে অন্যায্যতাকরণ ও এর অপব্যবহার বিস্তার, গণ মতামত ব্যাহত করা এবং দলগত চিন্তা চেতনা তৈরি থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। আমি আবারোও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, “যে কোনো আদলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সাধন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তি তৈরি করা প্রয়োজন।” একইভাবে মানব প্রসঙ্গের মতো সব সময় নিয়ন্ত্রণ নীতি যথার্থ নয়।
বৃদ্ধিলাভ- মানবতায় : আমাদের প্রত্যেককে একযোগে মানবতার মধ্যে এবং মানবতায় বেড়ে উঠার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। আমাদের কল্যাণকর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে যেনো জটিলতা, বিভিন্ন জনগোত্র, বহুমাত্রিক ব্যবস্থা, বহুধর্মীয় অবস্থান এবং বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক সমাজ উন্নতভাবে ডিঙ্গিয়ে পার পেতে পারি। আমাদের অবশ্যই সাবধানতার সঙ্গে তাত্ত্বিক মতবাদ উন্নয়ন এবং এই নতুন যোগাযোগ ক্ষেত্র ও জ্ঞানের বাস্তব ব্যবহার নিয়ে অনুধ্যান করতে হবে। এগুলোর ব্যাপক কল্যাণ সম্ভাবনা জড়িয়ে আছে আদর্শগত হিসাব নিকাশে যা ব্যক্তি বিশেষের উপাত্ত নিয়ন্ত্রণ, যান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা পদ্ধতি, বিচ্ছিন্ন গঠনার অভিজ্ঞতা, কল্যাণের চেয়ে লাভজনক এবং সর্বোপরি আলাদা আলাদা ব্যক্তির অনন্যতা ও নারী-পুরুষের গল্প কাহিনী। কারণ সুনির্দিষ্ট বাস্তবতা মিলিয়ে যেতে পারে ক্ষণস্থায়ী তথ্য উপাত্তের মধ্যে।
ডিজিটাল বিপ্লব আমাদের জন্য বৃহত্তর স্বাধীনতা আনতে পারে- কিন্ত যদি তা আমাদের বন্দি করে না রাখে, যাকে আজকে বলা হয় “প্রতিধ্বনিত কক্ষ।” এমনাবস্থায়, তথ্য প্রযুক্তির বহুমুখীকরণ বিস্তৃত না হয়ে ঝুঁকি তৈরি হয় নিযন্ত্রণহীন ও বিশৃঙ্খলার এবং শিকার হয় বাজার ব্যবস্থার অথবা ধনীগোষ্ঠীর। এটা অগ্রহণযোগ্য যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একটি দলের চিন্তা চেতনাকে পরিচালিত করবে, অসত্যায়িত তথ্য সংগ্রহ করবে- যেনো সংগ্রহিত সম্পাদনার পরিত্যক্ত দায়িত্ব । বাস্তবে এই সমস্ত তথ্য উপাত্ত যন্ত্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়, যা বিষয়ের আসল সত্যবর্জিত, আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বিনাশ করে এবং আমাদের মানবতার হুমকী হয়ে উঠে। তথ্য প্রযুক্তি সচল সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এগুলো ব্যক্তি এবং বাস্তব জগতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এসব শুধু তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, কিন্তু মানব অভিজ্ঞতা, মুখোমুখী বাচনভঙ্গির সংবেদনশীলতা, আবেগ ও দেওয়া নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
এখানে আমি মনে করি যুদ্ধ বিষয়ক খবর বার্তা এবং যুদ্ধ আনুসংঙ্গিতা সম্পর্কে প্রতিবেদনগুলো অনেকটা তথ্যহীন তৎপরতা। আমি এটাও চিন্তা করি যে, প্রতিবেদকগণ যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত বা নিহত হচ্ছেন, সে সব আমাদের মনোনিবেশ ঘটায় তারা কি দেখেছেন- সেসব বিষয়ে। তেমনি শিশু, নারী-পুরুষ যারা যুদ্ধে সরাসরিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে- তা থেকে আমরা যুদ্ধের সম্ভাব্যতা উপলব্ধি করতে পারি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যোগাযোগ মাধ্যমে সফল ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে সাংবাদিকতার ভূমিকা বড় করে না দেখে তা কীভাবে সমর্থক হতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের মূল্যবোধ প্রত্যেক গণমাধ্যম কর্মীকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করতে সহায়তা দেয় এবং সব মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে যোগাযোগ ক্ষেত্রে অংশীদার হতে সাহায্য করে।
আজ এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রশ্ন : এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে ওঠে আসে। সারা বিশ্বে পেশাদারিত্ব সংরক্ষণ এবং যারা তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করেন এবং যারা সেগুলো ব্যবহার করেন তাদের মান সম্মান কীভাবে রক্ষিত হবে ? কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে বিভিন্ন পেশার মধ্যে সমন্বয়তা? ব্যবসা বাণিজ্য যেগুলো ডিজিটাল সংক্রান্ত উন্নয়ন পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু এবং বিজ্ঞাপন বিপণন, দায় দায়িত্ব ও একই উপায়ে চিরাচরিত গণমাধ্যম সম্পাদনা ও তাদের পেশাদারিত্ব? আরোও কীভাবে গণনা পরিচালনার নীতির মধ্যে যা সূচক নির্ধারণ ও অনির্ধারণযোগ্য, সন্ধানযোগ্য যন্ত্রের প্রদর্শন বা ব্যক্তির মতামত বাতিল, ইতিহাস ও সংস্কৃতির স্বচ্ছতা আনয়ন করতে স্বক্ষম? তথ্য প্রযুক্তির সত্যতা যাচাই করার পদ্ধতি কি ? আমরা কীভাবে মৌলিক লেখা নিরূপণ এবং প্রমাণহীন উৎসের আলামত বাতিল করতে পারি ? আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে, ছায়াচিত্রগুলো আসল বা ভান করা ? আমরা কীভাবে একক ব্যক্তিকর্তৃক উৎস রক্ষা, একক ব্যক্তিকর্তৃক গ্রহণ, উন্নয়ন ও গণনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ? একটি পরিবেশ কীভাবে সহায়ক হতে পারে বহুত্বের বা জটিল বাস্তবতার- তা কীভাবে এগিয়ে নিতে সহায়তা দিতে পারি ? আমরা কীভাবে অতি শক্তিশালী প্রযুক্তি, ব্যয় ও উৎপাদন খরচ কমিয়ে টেকসইযোগ্য করতে পারি ? এবং এগুলো কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারি ?
এই প্রশ্নগুলোসহ অন্যান্য প্রশ্ন নিশ্চিত করবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দূষণকারি ও অসমতার তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে একটা নতুন গোত্র তৈরি করবে কীনা। অথবা, শুদ্ধ তথ্য প্রযুক্তি ও বড়দাগে ইতিহাস পরিবর্তনের উপলব্ধি যার মাধ্যমে আমরা অভিজ্ঞতা করছি সম্ভাব্য জ্ঞান যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, উন্নত জনগোষ্ঠী ও বহুমাত্রিক তথ্য প্রবাহের জন্য যা প্রযোজ্য। একদিকে, যদি দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, দেখবো নতুন ধরনের কৃতদাস প্রথা, অন্যদিকে দেখি অধিকহারে স্বাধীনতার স্বপ্ন। যা সম্ভাবনাময় হতে পারে কতিপয় নির্ধারিত ব্যক্তির চিন্তা ধারায় অথবা সব মানুষই উন্নত চিন্তা চেতনায় একযোগে অংশগ্রহণ করার মধ্যদিয়ে।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া আমাদের জন্য আগে থেকেই নির্ধারণযোগ্য নয়- বরং তা আমাদের উপরই নির্ভর করে। সিদ্ধান্ত আমাদের উপর নির্ভর করে যে কারণে যে, আমরা কি গণনা করার খাদ্য বিচালী হবো নাকী আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে হৃদয়ের পরিচর্যা করবো- জ্ঞানহীনভাবে যার বৃদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। এই ধরনের জ্ঞান বৃদ্ধিলাভ হয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সময় ব্যবহার করে এবং ক্ষতিকর দিকগুলো দেখেশুনে। এগুলোর বৃদ্ধি ঘটে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সন্ধিতে, যারা স্মরণ করতে পারে অতীতকে এবং যারা ভবিষ্যত দেখতে পারে। একমাত্র একত্রে আমরা বাড়াতে পারি আমাদের উপলব্ধির স্বক্ষমতা, সতর্কতা এবং বিষয়গুলো পরিপূর্ণতার আলোকে দেখে। এগুলো বহন করতে অক্ষম হলে আমাদের মানবতা ন্যূনতম হয়ে উঠবে। আসুন আমরা জ্ঞান অনুসন্ধান করি- যা সবকিছুর অগ্রে থেকে অবস্থান করছে (সিরাক ১:৪)। এগুলো আমাদের সহায়তা দিবে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং হৃদয়ের জ্ঞান : পরিপূর্ণ মানব যোগাযোগ লক্ষ্য অর্জনে।
ভাষান্তর :
ফা. সুনীল ডানিয়েল রোজারিও
বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক, রাজশাহী সিটি।