গত ৩১ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ‘প্রাণ আমার পরমেশ্বরের মহিমা গায়’- মূলসুরের উপর ভিত্তি করে নবাই বটতলা ধর্মপল্লীতে নবাইবটতলা ধর্মপল্লীর উদ্যোগে মে মাসের সমাপ্তি ও মা মারীয়ার সাক্ষাৎকার পর্ব উদযাপন করা হয়।

এতে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২৩০ জন মারিয়া সংঘের সদস্য-সদস্যাসহ মায়েরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল পবিত্র খ্রিস্টযাগ, মূলভাবের উপর সহভাগিতা, মা মারিয়ার প্রতি ভক্তি বৃদ্ধিকরণে উপায় বিষয়ক সহভাগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দুপুরের আহার ও মা মারীয়া মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা।

পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন ধর্মপল্লীর পালক ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন। তিনি সহভাগিতায় বলেন- গোটা মে মাসব্যাপী আমরা রোজারিমালা প্রার্থনার মাধ্যমে মায়ের মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের প্রতি হৃদয়ের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। রোজারিমালা প্রার্থনা জপ করতে করতে আমরা চেষ্ঠা করি হারিয়ে যেতে সংসারের মোহ-মায়া হতে। যখনই হতশা-নিরাশা আমাদের জীবনকে আছন্ন করে তখনই রোজারিমালা প্রার্থনাসহ মায়ের নিকট নতজানু হওয়া সবকিছুকে নিমিসেই বিলীন করে দেয়। ইংরেজীতে Rose শব্দটি এসেছে Latin শব্দ Rosa থেকে, যার অর্থ প্রকাশ করে ‘গোলাপ”। মা মারীয়ার আজন্ম পবিত্রতা বুঝাতে শ্বেতশুভ্র গোলাপ কুড়ি গেঁথে তৈরী করা হতো রোজারী মালা। সাদা গোলাপ দিয়ে তৈরি মালাকে বলা হতো রোজারি যার অর্থ মায়ের প্রতি উৎস্বর্গীকৃত শ্বেত শুভ্র গোলাপের মালা।

তিনি আরো বলেন, খ্রিস্টধর্মের শুরু থেকে এই রোজারি মালা বা জপমালা প্রার্থনার প্রচলন ছিল না। ইতিহাস থেকে জানা যায় লোকালয় ত্যাগী কৃচ্ছতা সাধনা মগ্ন সন্ন্যাসীরাই রোজারী মালার আবিষ্কারক। পরে মরুবাসী অথবা আশ্রমবাসী খ্রিস্টান  সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে গিয়ে সাধারণ মানুষ এই প্রার্থনা শিখে নিয়েছেন। বর্তমানেও এই প্রার্থনা সর্বজন স্বীকৃত ও প্রচলিত প্রার্থনা।

ফাদার যোয়াকিম হেম্ব্রম রোজারি মিনিস্টির উপর সহভাগিতা করেন। তিনি রোজারিমালা প্রার্থনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, অলৌকিক কর্মসাধক পাদুয়ার সাধু আন্তনী’র জীবনী হতে জানা যায় জপমালা র্প্রাথনা মাধ্যমে তিনি কুমারী মারীয়ার প্রতি তার অগাধ ভক্তি দেখিয়েছেন এবং খ্রিস্টযিশুর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। মণ্ডলির ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জপমালা প্রার্থনার শক্তিও ফলপ্রসূতা বিশ্বাসীদের জীবনে কতই না বিস্ময়কর। বিভিন্ন গুণী ব্যক্তিদের জীবন অভিজ্ঞতা এবং তাদের সাক্ষ্য আমাদেরকে জপমালা প্রার্থনার প্রতি আকর্ষণ করে। পোপ ৬ষ্ঠ পল বলেন ‘ধ্যান ছাড়া জপমালা প্রার্থনা হল আত্মাহীন দেহ”। তাই ধন্যা কুমারী মারীয়ার অনুকরণে এবং তার সঙ্গে যিশুর জীবনের রহস্যগুলি ধ্যান ও স্মরণ করার মধ্য দিয়েই যিশুকে আরও ঘনিষ্টভাবে জানতে পারি।

ফাদার যোয়াকিম আরো বলেন, সাধু পোপ ২য় জন পল দুটি উদ্দ্যেশের জন্য জপমালা প্রার্থনা আবৃতি করতে বলেছেন। প্রথমটি বিশ্ব শান্তির জন্য, দ্বিতীয়টি পরিবারের কল্যাণের জন্য । বিশ্বের এবং আমাদের দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া স্থায়ী শান্তি আশা করা যায় না। জপমালা বা রোজারী মালা প্রার্থনা হচ্ছে শান্তি জন্য একটি উপযুক্ত ও ফলপ্রদ প্রার্থনা।

ফাদার আরতুরো স্পেজিয়ালে, পিমে তার সহভাগিতা মা মারীয়ার প্রতি ভক্তির কয়েকটি দিক তুলে ধরে বলেন, সাধু-সাধ্বীদের জীবনে মা মারীয়ার প্রতি বিশেষ ভক্তি ছিল এবং অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা রোজারিমালা জপ করতে করতে অনেক আশ্চর্য কাজ সমাধা করতে পেরেছেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন মা রোজারিমালা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যে বিভিন্ন কৃপা লাভ করেছেন তা সহভাগিতা করেন। সবশেষে পালক পুরোহিতের সমাপন প্রার্থনা ও আশীর্বাদ দানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করা হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন

 

Please follow and like us: