গত ২৪ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে মহাসমারোহে প্রতিপালিকা সাধ্বী রীতা’র পর্ব উদযাপন করা হয়। এ দিন ধর্মপল্লীর বিভিন্ন ব্লক/গ্রাম থেকে আগত খ্রিস্টভক্তগণ দলে দলে সাধ্বী রীতার প্রতিমূর্তিতে পুষ্পমাল্য ও উপহার সামগ্রি প্রদান করে অন্তরের ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভালবাসা প্রদর্শন করে এবং সাধ্বী রীতার চরণ ছুঁয়ে তাঁর মধ্য দিয়ে ঐশ আশীর্বাদ যাচনা করেন।

সাধ্বী রীতার প্রতিমূর্তিতে ভক্তি নিবেদন শেষে পুষ্পকণ্যা, খ্রীষ্টভক্ত, বেদীসেবক ও যাজকগণ দু’লাইনে শোভাযাত্রা করে ভক্তিগীতি গাইতে গাইতে ধর্মপল্লীর উপাসনালয়ে প্রবেশ করে পর্বীয় মহাখ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। পর্বীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রমনা সেমিনারীর পরিচালক শ্রদ্ধেয় ফাদার মিল্টন রোজারিও। খ্রিস্টযাগে সর্বমোট প্রায় ১০০০ খ্রিস্টভক্ত, ১২ জন সিস্টার ও ০৯ জন যাজক অংশগ্রহণ করেন।

খ্রিস্টযাগর উপদেশে ফাদার মিল্টন বলেন: প্রতিপালিকা সাধ্বী রীতা আমাদের সকলের জন্যই আদর্শস্বরূপ। সাধ্বী রীতা বাবা-মায়ের একান্ত বাধ্য সন্তান ছিলেন। তিনি ছোটবেলায় ধর্মীয় জীবনাহ্বানে সাড়া দিয়ে সিস্টার হতে চয়েছিলেন কিন্তু বাবা-মার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিনি এক মাতাল ও ডাকাত লোককে বিবাহ করেন। তিনি সংসার জীবনে স্বামীর শত নির্যাতন সহ্য করেন। পরে তিনি প্রার্থনার শক্তিতে স্বামীর মন পরিবর্তন করতে সক্ষম হন। তাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় জীনাহ্বানে সাড়াদানের জন্য প্রস্তত করতে হবে এবং আমাদের পরিবারগুলোর মায়েরা বা স্ত্রীরা যেন সাধ্বী রীতার মতোই ধৈর্য্যশীল ও প্রার্থনাশীল হয়ে পরিবারের সকলের যত্ন করেন।

তিনি আরো বলেন যে, সাধ্বী রীতার দু’পুত্র যেন পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মারাত্মক পাপে পতিত না হয় সেজন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে মিনতি করে বলেন যে, সম্ভব হলে ঈশ্বর যেন তাঁর দু’পুত্রকে তাঁর কাছে নিয়ে নেন এবং মারাত্মক পাপের হাত থেকে রক্ষা করেন। সাধ্বী রীতার মতো আমাদের মায়েরা যেন সন্তানদের পাপের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং সুপথে পরিচালিত করেন।

পর্বীয় খ্রিস্টযাগ মোট ২৮ জন ছেলে-মেয়ে ১ম কম্যুনিয়ন সাক্রামেন্ত গ্রহণ করে। খ্রিস্টযাগর পর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের খ্রিস্টভক্তগণ। উল্লেখ্য যে, পর্বোৎসবের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির জন্য পর্বের আগে মোট ৯ দিন যাবৎ নভেনা, খ্রিস্টযাগ ও পাপস্বীকার সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয় এবং পর্বোৎসবের আগের দিন সন্ধ্যায় খ্রিস্টভক্তদের অংশগ্রহণে আলোর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেরিতগণের রাণী মারীয়ার সংগিনী সংঘের পর্বদিবস উদযাপন : গত ২৫ মে ২০২৪, রোজ: শনিবার মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে কর্মরত এসএমআরএ সম্প্রদায়ের প্রতিপালিকা প্রেরিতগণের রাণী মারীয়ার পর্বদিবস মহাসমারোহে পালন করা হয়।

এ দিন ধর্মপল্লীর গীর্জায় পর্বীয় মহাখ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার উত্তম রোজারিও। খ্রিস্টযাগের শুরুতে ধর্মপল্লীতে কর্মরত সিস্টারদের নিয়ে শোভাযাত্রা করেন ফাদার উত্তম। শোভাযাত্রা শেষে কুমারী মারীয়ার গলায় মাল্য প্রদান করা হয় ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এরপর যথারীতি খ্রিস্টযাগ আরম্ভ হয়। খ্রিস্টযাগে সিস্টারগণ গান পরিচালনা, বাণীপাঠ, সার্বজনীন প্রার্থনা ইত্যাদিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

খ্রিস্টযাগের উপদেশে ফাদার উত্তম বলেন, প্রেরিতগণের রাণী কুমারী মারীয়া যেভাবে যিশুর শিষ্যদের সেবাকাজে সর্বদা সহায়তা করেছিলেন তেমনি তিনি যেন এসএমআরএ সিস্টারগণ মণ্ডলির বিবিধ পালকীয় সেবাকাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন। এ জন্য তিনি এসএমআরএ সম্প্রদায়ের সকল সিস্টারদের বিশেষভাব মথুরাপুরে কর্মরত সিস্টারদের মঙ্গল কামনায় ঐশ অনুগ্রহ যাচনা করেন এবং এ ধর্মপল্লীতে যুগ যুগ ধরে সিস্টারদের সকল সেবাকর্মের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

খ্রিস্টযাগ সিস্টারগণ তাদের ব্রত নবায়ন করেন। খ্রিস্টযাগের পর গীর্জার বেদীর সামনে সিস্টারদের আহ্বান করা হয় এবং তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে পাল-পুরোহিত, সহকারী পাল-পুরোহিত ও সকল খ্রিস্টভক্তদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।

ধন্যা কুমারী মারীয়ার সাক্ষাৎকার মহাপর্ব উদযাপন : গত ৩১ মে মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে মহাসামরোহে ধন্যা কুমারী মারীয়ার সাক্ষাৎকার পর্ব উদযাপন করা হয়। এদিন বিকেলে কুমারী মারিয়ার মূর্তিসহযোগে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিশেষ জপমালা প্রার্থনা করা হয়। জপমালা প্রার্থনা প্রার্থনার পর ফাদার উত্তম রোজারিও খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন।

খ্রিস্টযাগের উপদেশে ফাদার বলেন, ঈশ্বর জননী ধন্যা কুমারী মারিয়া আমাদের সকলের মা। তিনি গোটা খ্রিস্টমণ্ডলির মাতা। স্বর্গীয়া মা হিসেবে তিনি আমাদের সকলের প্রার্থনা শোনেন এবং স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুগ্রহ নিয়ে দেন। তাই আসুন, প্রতিদিন ভক্তি ভরে জপমালা প্রার্থনা করি এবং মা মারিয়ার মধ্যস্থতায় ঐশ অনুগ্রহ লাভ করি।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার উত্তম রোজারিও

Please follow and like us: