ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিনিধি
ভাটিকান : খ্রিস্ট যিশুর দেহ উৎসব পর্বের দিন তাঁর সান্ধ্যকালীন প্রার্থনার সময়, ইউক্রেন, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল এবং মিয়ানমারের নেতাদের শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খ্রিস্টানদের হতে হবে, খ্রিস্টপ্রসাদের মতো, “অন্যের জন্য নিজের জীবন দান করা।” পোপ বলেন, “আমি শাসকগোষ্ঠীর প্রজ্ঞার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলছি তারা যেন সর্বপ্রকার উসকানি বন্ধ করে আলোচনা ও সংলাপের আশ্রয় নেন।” তিনি দূতসংবাদের শেষে সুদান সম্পর্কে বলেন, সেখানে বছরের অধিককালব্যাপী যুদ্ধ চলে আসলেও শান্তির কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদান গত বছরের এপ্রিল থেকে মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেখানে সার্বিক অবস্থার অবনতির কারণে বহু মানুষ দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচেছ এবং সেই সঙ্গে এক কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার মধ্যে রয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন, “খ্রিস্ট নিজেকে অন্যের জন্য দান করেছেন, খ্রিস্টপ্রসাদ হলো দানসরূপ।” তিনি শেষ ভোজের সময় একই রুটি ভাগ করে সবার সঙ্গে সহভাগিতা করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে খ্রিস্টভক্তদের কাজ হলো, শান্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ ও সহভাগিতা করা।
চীন : চীন দেশের ঝিয়াংঝি প্রদেশে নানফেং ক্যাথলিক চার্চে কলোম্বান মিশনারিদের পালকীয় কাজের স্মরণ উৎসব পালিত হচ্ছে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পযর্ন্ত আইরিশ যাজকগণ এখানে পালকীয় কাজ করেছেন। গত দিনগুলোতে চার্চটি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। সম্প্রতি ঘরটি মেরামত করে আবার গির্জাঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। নানফেং ক্যাথলিক মণ্ডলির ভক্তগণের একান্ত ইচ্ছা- এই গির্জাঘরে কাঁচের ঘেরার মধ্যে সেই সমস্ত যাজকদের মূর্তি স্থাপন করা। যে তিনজন কলোম্বান যাজক নানফেং অবস্থিত যিশুর পবিত্র হৃদয় ধর্মপল্লীতে কাজ করেছেন তারা হলেন- ফাদার টিম লেনার্ড, যিনি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে নানফেং পৌঁছেন এবং পরের বছর জুলাই মাসে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গের সময় আততায়ীর হাতে শহীদ হোন। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছিলো। তার কবর নানফেং চার্চে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে। ফাদার জেরি বাট্টিমোর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পরিবশেগত কারণে মৃত্যুবরণ করেন এবং সবশেষে ফাদার পেডি ডেরমোডি, চীন থেকে বহিস্কৃত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আয়ারল্যান্ডে পালকীয় কাজ করেন। ১২৭১ এসব মিশনারিগণ চীন দেশে আসেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চীনকে কমিউনিস্ট ঘোষণার পর ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মিশনারিদের চীন থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে চীনা সরকারের অধীনে রয়েছে স্বদেশী ক্যাথলিক চার্চ। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের এক সমীক্ষায় চীনে ক্যাথলিকদের সংখ্যা ৫৭ লক্ষ দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে হংকং থেকে হলি স্পিরিট স্টাডি সেন্টার তাদের ২০১২ খ্রিস্টাব্দের এক জরিপ শেষে চীন দেশে এক কোটি ২০ লক্ষ দেখানো হয়েছে।
থাইল্যান্ড : পোপ ফ্রান্সিস ভাটিকান সিটিতে থাইল্যান্ড থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। থাইল্যান্ডে কর্মরত পিমে মিশনারিদের আঞ্চলিক প্রধান ফাদার ডানিয়েলে মাজ্জা বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এই সাক্ষাতকালে পোপ বলেন, “প্রার্থনা এবং ধ্যান- অচল হয়ে যাওয়া বিষয়কে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। পোপ ফ্রান্সিস ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর থাইল্যান্ড সফরের সময় সেদেশে বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধমীয় নেতা ৯ম সোমদেত ফ্রা আরিয়াবংশাগাতানানা’র সঙ্গে সাক্ষাতকারের বিষয়টি উল্লেখ করেন। গত নভেম্বর মাসে রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত সপ্তম বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বৈঠকের কথাও পোপ উল্লেখ করেন। সেই বৈঠকে গোটা এশিয় থেকে ১৫০জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সেই আর্ন্তজাতিক বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো,” করুণা এবং ভালোবাসার সংলাপ- বিশ্বের আহত মানবতাকে সুস্থতা দান করতে পারে।” নভেম্বরে সপ্তম বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্মেলনের আলোকে পোপ প্রতিনিধিদের তিনটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। প্রথমতঃ আন্ত:নির্ভরশীলতার কথা উল্লেখ করে পোপ বলেন, কেউ একা মুক্তিলাভ করতে পারে না। তিনি বলেন, সত্যের আলোকে আমি আপনাদের একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করছি। নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন ধর্মের সদস্য, সরকার, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বৈজ্ঞানিক সংগঠন এবং অন্যান্য আগ্রহী সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে- যেন ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মধ্যদিয়ে একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। দ্বিতীয়তঃ পোপ জোর দেন উন্নত শিক্ষাদানের জন্য। তিনি বলেন, শিশু ও যুবাসমাজের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা একটি প্রধান বৈশিষ্ট। সবশেষে পোপ বলেন, “প্রার্থনা এবং ধ্যান- অচল হয়ে যাওয়া বিষয়কে সঠিক পথে ফিরিয়ে এনে আমাদের মন-অন্তরকে পরিশুদ্ধ দান করতে পারে। পোপ ফ্রান্সিস খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সংলাপপের প্রশংসা করেন।
ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়া সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানী জাকার্তার আর্চডাইয়োসিস ও পেলামবাঙ্গ ডাইয়োসিসে দু’টি নতুন গির্জা নির্মাণের অনুমতি দান করেছেন। সরকার সে দেশের অন্ধদের জন্য ব্রাইল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান এবং দু’টি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করবে- যে স্কুলে ব্রইল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষক তৈরি করা হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রি ইয়াকুত খলিল কোমাস, ক্যাথলিক চার্চের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিযে বলেন, তার সরকার সব সময় ক্যাথলিক চার্চের এই ধরনের পালকীয় কাজকে উৎসাহিত করবেন। ইন্দোনেশিয়ার ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনীর সভাপতি এবং বান্দুং ধর্মপ্রদেশের বিশপ আন্তনিউস সুবিয়ানো বলেন, “আমাদের মধ্যে অবহেলিত অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আমরা যৌথভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।” বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২৭কোটি ৫৭ লাখ, যার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ১০.৪৯% বা ১ কোটি ৯১ লাখ, আবার যার মধ্যে ক্যাথলিকদের সংখ্যা ৮৫ লক্ষ। গোটা ইন্দোনেশিয়াতে রয়েছে ১০টি আর্চডাইয়োসিস এবং ২৭টি ডাইয়োসিস। বিশ্বে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে খ্রিস্টানদের উপস্থিতি নাইজেরিয়া এবং মিসরের পরেই ইন্দোনেশিয়া।
সিরিয়া : পোপ ফ্রান্সিস উনবিংশ শতাব্দিতে সিরিয়ায় ধর্মশহীদদের সাধু শ্রেণীভূক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের ৯ এবং ১০ তারিখে রাজধানী দামেস্কে ৮জন ফ্রান্সিসকান যাজক ও তিনজন মেরোনাইট খ্রিস্টভক্তকে হত্যা করা হয়েছিলো। শহীদ যাজকদের মধ্যে ৭জন স্পেনিয়ার্ড এবং একজন অস্ট্রিয়ান। পোপ ১১দশ পিউস ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে শহীদদের ধন্য শ্রেণীভুক্ত করেছিলেন। তাদের ধন্যশ্রেণিভুক্ত করার প্রায় শত বছর পরে গত মে মাসের ২৩ তারিখে পোপ সাধু শ্রেণীভুক্ত করার ঘোষণা দেন। পোপের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পূণ্যভুমি থেকে ফ্রান্সিসকান যাজক ফ্রান্সেসকো পেটন। তিনি বলেন, দামেস্কের ধর্মশহীদগণ মিশনারিদের জন্য একটি উত্তম আদর্শ। তিনি বলেন, এসব নতুন সাধু হবেন সিরিয়ার জন্য একটি আশার চিহ্ন। ভাটিকান থেকে খবরে বলা হয়েছে যে, ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই ড্রুজ মিলিশিয়ার কিছু কমান্ডো বাব তমা ফ্রান্সিসকান কনভেন্টে প্রবেশ করে এবং ৮ জন যাজক এবং তিনজন খ্রিস্টভক্তকে হত্যা করে। প্রতি বছর জুলাই মাসের ১০ তারিখ দামেস্ক শহরে ল্যাটিন চার্চ এবং মেরোনাইট সম্প্রদায় যৌথভাবে ১১জন ধর্মশহীদের স্মরণ উৎসব পালন করে আসছেন।
গাজা ভূ-খন্ড : ফিলিস্তিনের গাজা ভু-খন্ডে পালকীয় কাজে কর্মরত রোজারি সম্প্রদায়ের সিস্টার নাবিলা সালেহ বলেছেন, “বিশ্বাস এবং আশা কখনো বিফলে যায় না।” মিসরীয় বংশভুত সিস্টার নাবিলা গত প্রায় ১৩ বছর ধরে গাজা ভু-খন্ডে পালকীয় সেবাদান করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি গাজার একটি স্মরণার্থী শিবির থেকে ইটালির মিলান শহরে চলে যান এবং গণমাধ্যমে ইসরায়েল- হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ কাহিনী তুলে ধরেন। সিস্টার নাবিলা বলেন, তিনি আরো অনেকবার ইসরায়েল- হামাস সংঘর্ষ দেখেছেন, তবে সেসব সংঘর্ষ ছিলো অস্থায়ী। কিন্তু এবারের উভয় পক্ষের যুদ্ধ অনেক ভয়াবহ। ফলে বেঁচে থাকার জন্য গাজা ভুখন্ডে কোন স্থানই নিরাপদ নয়। তিনি ছয়মাস হলি ফেমিলি চার্চে আরো ৬৫০জন শরণার্থীর সঙ্গে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। তিনি গাজায় চোখের সামনে বহু অসহায় মানুষের মৃত্যু দেখেছেন। সিস্টার নাবিলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছে।