ত্যাগ ও সহভাগিতা
প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা,
পিতৃপুরুষ আব্রহামের বলিদান স্মরণে পশু বলিদান করে প্রতি বছরই আপনারা ঈশ্বরের কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভ করার জন্য পবিত্র ঈদুল আযাহ উদযাপন করে থাকেন। বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন আপনাদের জানায় আান্তরিক শুভেচ্ছা।
নিজ পুত্রকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা ছিল আব্রাহামের একটি বড় ত্যাগ। পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মে দেখি পিতৃপুরুষ আব্রহাম ঈশ্বরের পবিত্র ইচ্ছাকে মেনে নিয়ে তাঁর আপন সন্তান ইসাহাককে বলিদান করতে কুণ্ঠিত হন নাই। এই ঘটনা ছিল নতুন নিয়মে বর্ণিত যিশু খ্রিস্টেরই আাত্মবলিদানের পূর্বচ্ছবি।
পবিত্র ঈদুল আযাহার মূল অনুচিন্তনই হল বলিদান, যার মধ্যে রয়েছে ত্যাগ বা ছাড় দেওয়া; নিজের অতি প্রিয় জিসিটিকে ত্যাগ করা, ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা। পবিত্র ঈদুল আযাহর সময় আাব্রাহামের বলিদান স্মরণে আাপনারা পশু বলিদান করে থাকেন। এখানে মূখ্য বিষয়টিই হল ত্যাগ। নিজের অতি প্রিয় জিনিসটি নিজের কাছে না রেখে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিবেদন করা। এবং একই সাথে বলিকৃত মাংস অন্যের সাথে , বিশেষভাবে দশমাংশ (জাকাত) বিশেষভাবে দরিদ্রদের মাঝে, মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করা। তাই এখানে রয়েছে শুধু ত্যাগ বা ছাড় দেওয়া নয়, এখানে রয়েছে সহভাগিতা।
ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের কাছে এই যে বলিদান তথা ত্যাগ , তা অত্যন্ত ফলদায়ক। সুন্দর মন নিয়ে আপন আপন সাধ্য অনুসারে যা-ই বলিদান বা কুরবান করা হোক না কেন, ঈশ্বর সেই ভক্তের বলিদান গ্রহণ ক’রে তার ও তার পরিবারে উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করবেনই।
আসুন আমরা এই ঈদুল আযাহ’র সময়টিতে কুরবান বা বলিদান সম্পর্কে সচেন হই এই ভেবে যে, শুধু পশু বলিদানের মধ্য দিয়েই নয়, দরিদ্রদের, পাড়া প্রতিবেশীদের অর্থায়ন দ্বারা, সম্পদ দ্বারা, নিজেরা ত্যাগ করে তাদের কল্যাণে কুরবানী দিতে পারি এবং তা অল্লাহতালা উপর থেকে দেখতে পান। এমন কুরবানী তো আমরা সারা বছরই বাস্তবায়ন করতে পারি।
উপরন্তু, ঈশ্বর চান শুধু পশু বলি নয়, মানুষ যেন তার নিজের মধ্যে পশুসম হিংসা-বিদ্বেষ, দলাদলি, ঝগড়া-বিবাদ, বিভিন্ন বৈষম্য রয়েছে তার যেন সে বলিদান করতে পারে এবং সুন্দর মানব-ভ্রাতৃত্ব নিয়ে সমাজে বসবাস করতে পারে। বর্তমান সময়ে চরিত্রের এমন ধরণের পশুসম মন্দতাগুলোর বলিদান ভীষণ প্রয়োজন রয়েছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবারই। এমনটি হলেই ঈদুল আযাহ হয়ে উঠবে চলমান একটি আত্ম বলিদান, আত্ম শুদ্ধি। এমন অর্থেই ঈদুল আযাহ শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তা হয়ে উঠে সার্বজনীন।
সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, এবারের ঈদুল আযাহ মহোৎসবে মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাদের উপব বর্ষণ করুন তাঁর শত অনুগ্রহ, আশীর্বদ, তৌফিক; আপনারা লাভ করুন মহান আল্লাহতালার রহমত।
জাতীয় আান্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের নামে, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর নামে আপনাদের সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল আযাহ’র আন্তরিক শুভেচ্ছা: ঈদ মোবারক।
আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি ফাদার প্যাট্রিক গমেজ
সভাপতি, নির্বাহী সচিব,
খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন,বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী