মণ্ডলিতে সিনড এবং সিনোডালিটি নতুন কোন ধারণা নয়। এম্মাউসের পথে যিশু নিজেই শিষ্যদের সাথে একত্রে পথচলার মধ্য দিয়ে সিনডের রূপ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলিতে অনুষ্ঠিত ‘সিনড ও সিনোডালিটি’ বিষয়ক সভার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনির সেক্রেটারী বিশপ পল পনেন কুবি এই কথা বলেন। বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে ২৭-২৯ জুন সিবিসিবি (বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ কনফারেন্স) সেন্টার আসাদগেটে সিনড ও বাংলাদেশ মণ্ডলিতে সিনোডালিটি বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

তিন দিনব্যাপী সেমিনারে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় ক্রুজ, বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বিশপ পল পনেন কুবি, বিশপ রমেন বৈরাগী, ভাটিকানের সিনড বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারী সিস্টার নাতালে, এফএবিসির সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের নির্বাহী সেক্রেটারী ফাদার জর্জ, এসডিবি এবং ৮০ জন ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার এবং খ্রিস্টভক্ত অংশগ্রহণ করেন।

প্রথম দিনের অধিবেশনে ‘সিনডের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সিনোডাল যাত্রা’ মূলভাবের ওপর আলোচনা করেন আর্চবিশপ বিজয় ক্রুজ। তিনি মণ্ডলি কী, সিনড বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিসের মাণ্ডলিক চিন্তা, সিনডের কয়েকটি বিশেষ দিক এবং সিনডাল মণ্ডলি গড়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোকপাত করেন। আর্চবিশপ বলেন, মণ্ডলি শুধুমাত্র ফাদার, ব্রাদার এবং সিস্টারদের নয়; আমরা সবাই মণ্ডলি । বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলিতে সংঘ-সমিতির মধ্যে দ্ব›দ্ব-বিবাদ, দেশে বিরাজমান অশুভ রাজনৈতিক প্রভাব ও মূল্যবোধের পরিবর্তে ক্ষমতা, অর্থ, দলাদলি, অসহনশীলতার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। পোপ ফ্রান্সিসের চিন্তাপ্রসূত সিনোডাল মণ্ডলির আলোকে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারলে এই সমস্যা দূর হবে।

সিস্টার নাতালে সিনোডালিটির বিষয়ে বলেন, সিনোডালিটি হচ্ছে মণ্ডলির গতিশীল দর্শন। আর গতিশীল দর্শনের পরিচয় চলমান লক্ষ্য নির্ধারণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এছাড়াও সিনোডালিটি হচ্ছে ত্রিত্ব পরমেশ্বরের দর্শনের মতো; যুগের পরিক্রমায় মানুষের পরিত্রাণের জন্য পিতা, পুত্র ও পবিত্রাত্মা যেমন কাজ করেছেন তেমনি সিনোডাল মণ্ডলি যুগের চাহিদা পূরণে কাজ করে। যিশু যেমন শিষ্যদের সাথে এম্মাউসের পথে যাত্রা করেছেন তেমনি সিনড হচ্ছে যিশুর সাথে যাত্রা। সেমিনারে আলোচনার প্রতিটি ধাপে সিনড প্রক্রিয়ার আলোকে ব্যক্তিগত অনুধ্যানে পবিত্র আত্মার কণ্ঠস্বর শুনে দলীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিপিবদ্ধ এবং দলীয় উপস্থাপন করা হয়।

সিনোডালিটি সংক্রান্ত এশিয়া মহাদেশীয় সমাবেশের চূড়ান্ত দলিলের ওপর আলোচনা করেন ফাদার জর্জ। তিনি এশিয়া মহাদেশের বাস্তবতার আলোকে এশিয়ায় সিনোডালিটি বিষয়ক চিন্তা, মণ্ডলিতে নারীর সম্পৃক্ততায় সমস্যা, যুবদের নিয়ে ভাবনা, দরিদ্রদের বিষয়ে ভাবনা, যাজকতন্ত্রবাদের (Clericalism) উত্তেজনা, অভিবাসী, উদ্বাস্তু এবং বাস্তুচ্যুত জনগণ, অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং আতিথেয়তা ও এশিয়ার কৃষ্টি-সংস্কৃতির আলোকে ‘জুতা খুলা’: এশিয়ান সিনোডালযাত্রা বিষয়ে সহভাগিতা করেন।

দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ‘সিনোডাল নেতৃত্বে যুব, নারী ও খ্রিস্টভক্তদের দায়িত্ব’ মূলভাবের ওপর সিস্টার নাতালে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সিনোডালিটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা ও অনুধাবনের বিষয়। সিনোডাল মণ্ডলিতে আমরা সবাই একই দীক্ষাপ্রাপ্ত মিশনারী হিসাবে সমমর্যাদার অধিকারী। বর্তমান জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ পৃথিবীতে নেতৃত্ব অনুশীলনে সিনোডালিটি একটি নতুন পথ।

সেমিনারের শেষ দিনের ধন্যবাদমূলক অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে সিনোডালিটি অনুশীলনের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব পিউস কস্তা বলেন, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের সাথে আমার পথচলা। তাই অন্যদের সাথে আমার সিনোডালিটি রক্ষা করতে হয়। আমি অন্যদের বলি, আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার সেবক। তেমনি আমিও আপনাদের সেবক হিসাবে কাজ করি। এই সেমিনার থেকে আমি যা অভিজ্ঞতা করেছি তা আমার কর্মজীবনে প্রতিফলন ঘটাবো বলে আশ্বাস দিচ্ছি।

যিশুর কন্যা সম্প্রদায়ের সিস্টার লোরি বলেন, পবিত্র আত্মা আমাদের পরিচালনা ও শক্তিদান করেন। তাই বাংলাদেশ মণ্ডলির আলোকে সিনোডালিটি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে পবিত্রাত্মার সাহচর্য দরকার।

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, সিনড এবং সিনোডালিটির ওপর এই সেমিনারের আয়োজন করাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপ্লুত। সেমিনার পরিচালনাদানকারী সিস্টার নাতালে ও ফাদার জর্জ আমাদের নিকট পোপ ফ্রান্সিসের স্বপ্নগুলো তুলে ধরেছেন। খ্রিস্ট ভক্তজনগণের সমালোচনা না করে বরং তাদেরকে নিয়ে একসাথে পথচলা ও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রদত্ত মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বরন্দ্রেদূত রিপোর্টার : ফাদার সাগর কোড়াইয়া

Please follow and like us: