ফা: সুনীল দানিয়েল রোজারিও

ভাটিকান : ভাটিকান সিটি থেকে প্রচারিত এক বার্তায় বলা হয়েছে যে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের নববর্ষের বিশ্ব শান্তি বার্তার শিরোনাম হবে “আমাদের পাপ ক্ষমা করো এবং তোমার শান্তি দান করো।” খবরে বলা হয়েছে, আগামী বছর “আশার তীর্থ” মূলভাব নিয়ে যে খ্রিস্ট জুবিলী পালিত হবে- তার পালকীয় কর্মকান্ড হবে আশা এবং ক্ষমার বাণী নিয়ে। পোপ ফ্রান্সিস তাঁর “তোমার প্রশংসা হোক” এবং “সবাই ভাইবোন” প্রৈরিতিক পত্রের আলোকে এই শিরোনাম বেছে নিয়েছেন। এ ভাব বেছে নেওয়ার পিছনে পোপের যুক্তি, আমরা যেনো অন্যকে দোষী সাব্যস্ত না ক’রে পরিবর্তনের আহ্বান জানাই। পোপ বলেন, “সত্যিকার পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে, ব্যক্তিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি অর্জন সম্ভব।” সমাজের বর্তমান বাস্তবতা ও সামাজিক পাপ- যেগুলো মানবতাকে প্রভাবিত করছে, জুবিলী ঐতিহ্য, আশা এবং ক্ষমাদান বিশেষভাবে প্রয়োজন- যেনো আধ্যাত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

পাকিস্তান : পাকিস্তানের লাহোর থেকে ডিগনিটি ফ্রাস্ট মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে এশিয়া নিউজ জানাচ্ছে যে, চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে খ্রিস্টানদের উপর কমপক্ষে ৭০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে- যার কারণে ১৪০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে যে, এসব সহিংসতা শুধু শারীরিক নয়, কিন্তু অর্থনৈতিক, ধর্মগত বৈষম্য, হত্যা, নির্যাতন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত ও ধর্মবিরোধীর মতো মিথ্যা অপবাদ রয়েছে। ডিগনিটি ফ্রাস্ট মানবাধিকার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইউসেফ বেঞ্জামিন বলেছেন, বছরের প্রথম ছয়মাসে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা ভয়াবহ। সহিংসতার কারণে ১৫জন খ্রিস্ট বিশ্বাসী প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে ১৩ জন পাঞ্জাব প্রদেশে, দুইজন কোয়েটা- বেলুচিস্তান। মৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বয়স ২৫ বছরের কাছাকাছি। পাঞ্জাব প্রদেশের ছয়টি জেলায় ১২জন নির্যাতিত হয়েছে- যার মধ্যে ছয়জন নারী এবং ছয়জন পুরুষ। মানবাধিকার সংস্থাটি আরোও জানিয়েছে যে, আটজন খ্রিস্টান মেয়ে যাদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে, তাদের শারীরিক নির্যাতন এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। এসব খ্রিস্টান মেয়েদের মধ্যে সাতজন পাঞ্জাব এবং একজন সিন্ধু প্রদেশের। এছাড়া লাহোরে ১৩ বছরের একজন খ্রিস্টান বালক, ধর্মান্তরিত হতে না চাইলে তার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার বন্ধের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

তুরস্ক : তুরস্ক দেশের বৃহত্তম শহর ইস্তান্বুল শহর থেকে “ফ্রেডম অব বিলিফ” নামক একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থার বরাত দিয়ে বিভিন্ন বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে যে, গত ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে সে দেশে খ্রিস্টানদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সংস্থাটি গত বছর তুরস্কে সংঘটিত ৪৭টি সহিংসতার ঘটনার উল্লেখ করেছে। তুরস্কে গত বছর সংখ্যালঘুদের উপর যে সমস্ত সহিংসতা ঘটেছে, তার সবগুলোই খ্রিস্টান, আলেভিস এবং ইহুদিদের লক্ষ্য করে। তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের উপর প্রতি বছর নির্যাতন বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছর খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২টি এবং ইহুদিদের উপর ১৪টি। গত ২০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এযাবৎ খ্রিস্টানদের উপর ৫২টি ঘটনা, আলেভিসদের উপর ৪২টি এবং ইহুদিরে উপর ২৩টি নির্যাতন ও সহিংষতার ঘটনা ঘটেছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ওশেনিয়া : পোপের দক্ষিণপূর্ব ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়া অঞ্চল সফর নিয়ে ভাটিকান সিটি থেকে পূর্ণ ভ্রমণসূচি প্রকাশ করা হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস সেপ্টেম্বর মাসের দুই থেকে ১৩ তারিখ পযর্ন্ত ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, ইস্ট তিমুর এবং সিঙ্গাপুর সফর করবেন। পোপ তার এ দীর্ঘ সফরকালে বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও শহরে মোট ১৬টি উপদেশবাণী রাখবেন। সফর শুরু করবেন ইন্দোনেশিয়া দিয়ে। সেপ্টেম্বর চার পোপ ইস্তানা মেরদেকা প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট জকো উইডোডো’র সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতে মিলিত হবেন। পরে বিকালে তিনি ইন্দোনেশিয়ার ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনী, যাজক ও খ্রিস্টধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আওয়ার লেডী অব এসামশন ক্যাথিড্রালে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। পরেরদিন পাঁচ তারিখে পোপ রাজধানী জাকার্তায় তিনটি বিশেষ পর্ব যেমন- আন্তধর্মীয় সভা, ক্যাথলিক সাহায্য সংস্থাসমূহ এবং ৭৭ হাজার লোক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ফুটবল স্টেডিয়ামে খ্রিস্টযাগ অর্পণ করবেন। ছয় তারিখ পোপ পাপুয়া নিউগিনির উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করবেন। পোপ সাত তারিখ রাজধানী পোর্ট মোরেসবাই শহরে গভর্নর ভবনে, গভর্নর রবের্ট দাদায়ে, সরকারি কর্মচারি, নাগরিক সমাজ এবং কুটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। একইদিন বিকালে তিনি কিছু ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। আট তারিখ পোপ স্যার জন জেসে স্টেডিয়ামে খ্রিস্টযাগ অর্পণ করবেন। নয় তারিখে তিনি সে দেশের যুবগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। পরে তিনি ইস্ট তিমুর সফর শুরু করবেন। ১০ তারিখে পোপ ফ্রান্সিস ইস্ট তিমুরে স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং বিকালে তাসি তুলু সমুদ্র সৈকত সংরক্ষিত স্থানে খ্রিস্টযাগ অর্পণ করবেন। পরেরদিন ১১ তারিখ সকালে যুবগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা শেষে পোপ সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ইস্ট তিমুর ত্যাগ করবেন। ১২ তারিখ সকালে পোপ প্রেসিডেন্ট থারমান সানমুগারাতসাম এবং প্রধান মন্ত্রী লরেন্স ওয়াং-এর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। পরে তিনি সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ এবং কুটনীতিক মিশনের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। পরে বিকালে সিঙ্গাপুরের জাতীয় স্টেডিয়ামে খ্রিস্টযাগ অর্পণ করবেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রোমের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করার পূর্বে সাধ্বী তেরেজা রোগী ভবন পরিদর্শন করবেন। সবশেষে পোপ ক্যাথলিক জুনিয়র কলেজে যুব সমাজের সঙ্গে আন্তঃধর্মীয় সংলাপে মিলিত হবেন।

সৌদি আরব : সৌদি আরবে ইসলাম ছাড়া প্রকাশ্যে অন্য কোনো ধর্মের অনুশীলন নিষিদ্ধ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে, সেদেশে কর্মরত প্রায় ১০ লক্ষ ক্যাথলিক রয়েছেন যারা নিজের ঘরে, কর্মক্ষেত্রে ও কুটনীতিক ভবনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এসব বিশ্বাসের গোপন মুখাবয়ব বিশ্বাসীগণ নিজেদের মতো করে ধর্মকর্ম পালন করে থাকেন। সৌদি আরবে সরকারিভাবে কোনো মিশন সেন্টার নেই। আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খ্রিস্টভক্তগণ বলেন, একমাত্র ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা বিশ্বের খ্রিস্টানদের অবস্থা, পোপের খবরাখবর জানতে পারেন। ধর্মীয় বইপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আজকে তারা স্মার্ট ফোনের কল্যাণে সবকিছু পড়তে এবং জানতে পারছেন। ফলে খ্রিস্টভক্তগণ আগের মতো এতো বিচ্ছিন্ন ও একাকীত্ব ভোগ করেন না। অন্যদিকে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের রিফর্ম পদক্ষেপ ধর্মীয় স্বাধীনতা না দিলেও আগের মতো এতো কঠিন অবস্থা সেখানে নেই। আধুনিক গণমাধ্যম ও ইন্টানেটের কল্যাণে সৌদিতে কর্মরত খ্রিস্টভক্তদের জীবন অনেক সহজ হয়ে আসছে। অনেকে মনে করছেন- ভবিষ্যতে তাদের ধর্মীয় জীবন আরোও সহজ হবে।

Please follow and like us: