“মিলন সাধনা অন্তর্ভুক্তি ও বাণী প্রচারে যুব সমাজ; আশায় আনন্দিত হও” এই মূলসুরকে কেন্দ্র করে সুরশুনিপাড়া প্রভুর নিবেদন ধর্মপল্লীতে ১০ থেকে ১৫ ই অক্টোবর পালিত হয় রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব দিবস ২০২৪। এতে ফাদার সিস্টার এনিমেটর ভলেন্টিয়ারসহ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ২৫ টি ধর্মপল্লী থেকে আগত প্রায় ২৪০ জন মত একটি যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করে। পবিত্র ক্রুশ স্থাপন ও ক্রুশের আরাধনার মধ্য দিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব দিবস ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল ধর্মপল্লীর ফাদার সিস্টার ও যুবক-যুবতীদের একত্রে যুব কমিশনের হাতে ক্রুশের হস্তান্তর এবং বিশপ মহোদয়ের পক্ষে ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারাণ্ডীর ক্রুশ গ্রহণের বিষয়ে।
এরপর উদ্বোধনী পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী এছাড়াও সে সময় উপস্থিত ছিলেন ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ, ফাদার প্রদীপ কস্তাসহ অন্যান্য ফাদার সিস্টারগণ।
রাতের বরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অনুসারে যুব দিবসে আগত ফাদার সিস্টার ও যুবা ভাই বোনদের বরণ করে নেন সুরশুনিপাড়ার যুবক-যুবতী ভাই-বোনেরা এবং একইসাথে তারা উপস্থাপন করেন ধর্মপল্লী গড়ে উঠার ইতিহাস।
এর পরের দিন সকালে খ্রিস্টযাগ, বর্ণনাঢ রেলী, ,পতাকা উত্তোলন ,লোগো উন্মোচন ও এর ব্যাখ্যা এবং দেওয়ালিকা প্রদর্শনী ছিল মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ সময় অংশগ্রহণকারী যুবারা নিজ নিজ কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে সুসজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিকার জেনারেল শ্রদ্ধেয় ফাদার ফাবিয়ান মারাণ্ডী, যুব সমন্বয়কারী ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ, পাল পুরোহিত প্রদীপ যোসেফ কস্তা, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ফাদার প্রশান্ত আইন্দ ও অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে যুব নৈতিকতা আধ্যাত্মিকতা ও আমাদের করণীয় বিষয়ে সহভাগিতা করেন ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরি।
” শারীরিক শিক্ষা মানসিক পরিবর্তন যৌন জ্ঞান সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকার “বিষয়ে সহভাগিতা করেন বেনেডিক্ট মুরমু। তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে যুবাদের করণীয় এবং কোনটা করা উচিত সে সম্পর্কে বলেন। এদিন সন্ধ্যায় ক্রুশের আরাধনা ও পাপস্বীকারে সকলে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। রাতে নাটিকা উপস্থাপনা ও মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতার ইতি ঘটে।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার সুশান্ত ডি কস্তা এবং এরপর” খ্রিস্টীয় উপাসনা সক্রিয় অংশগ্রহণ ও আমাদের ” বিষয়ে সেশান নেন ফাদার সাগর কোড়াইয়া এবং পরবর্তীতে জাতীয় যুব কমিশন এর পক্ষ থেকে নিশাত এন্থনি -যুব কমিশনের গঠন ও কার্যক্রম এবং যুব কমিশনের নবায়ন সম্পর্কে। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, যুবকরা হচ্ছে আমাদের ভিত্তি তাই যুব কমিশনকে শক্তিশালী করতে যুবাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলাই হচ্ছে যুব কমিশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
পরবর্তীতে বাণী প্রচারে আমাদের দায়িত্ব কৌশলগত নির্দেশনা দেন ধর্মপ্রদেশীয় কাটেখ্রিস্ট মাস্টার সুশীল টুডু। তিনি গ্রাম পর্যায়ে আমাদের কিভাবে খ্রিস্টান এবং অখ্রিস্টান মানুষের কাছে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে হবে সে সম্পর্কে বলেন।
মধ্যাহ্নের আহারের পর যুবারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং গ্রামের খ্রিস্টভক্তদের জীবন তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিষয় জ্ঞান অর্জন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। গ্রামের খ্রিস্টভক্তদের সঙ্গে একত্রে জপমালা প্রার্থনা করে এবং একসাথে রবিবাসরীয় পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করে। বিকেলে এক্সপোজার থেকে ফিরে এসে দল ভিত্তিক গ্রাম পরিদর্শনের উপর রিপোর্ট উপস্থাপন ও ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। সন্ধ্যায় অগ্নি আশির্বাদের মধ্য দিয়ে ক্যাম্প ফায়ার শুরু করা হয়। অতঃপর আগুন আশির্বাদ করেন যুব সমন্বয়ক ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ । উপস্থিত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজ কৃষ্টি সংস্কৃতিতে নাচ গান করে।
পরবর্তী দিন শুরু হয় ক্রুশের পথের মধ্যদিয়ে । এদিন ১ম অধিবেশন পরিচালনা করেন মি. ভিনসেন্ট চঁড়ে , বিষয়টি ছিল-“আসক্তি: মাদকের সর্বগ্রাসী রূপ এবং পরিত্রাণের জন্য করণীয় দিকসমূহ । ২য় অধিবেশন ২ দলে পরিচালনা করা হয় ১ম দলে পরিচালনা করেন মি. র়্যাক্মি মার্ক রোজারিও ক্যারিয়ার, উচ্চ শিক্ষা ও ফ্রিল্যাশিং” বিষয়ে এবং ২য় দলে পরিচালনা করেন মি. যোসেফ গমেজ তার বিষয় ছিল “আত্ম-কর্মস্থান: উদ্যোক্তা ও কারিগরী শিক্ষার”। এরপরে ৩য় অধিবেশন পরিচালনা করেন ফাদার বাবলু কর্নেলিউস কোড়াইয়া ” কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের একতা” সঠিক ব্যবহার এবং নৈতিকতা ” বিষয়টি নিয়ে। মণ্ডলীর ভাবনা ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় কর্মশালার মূলসুরের আলোকে মিলন সাধনা: অন্তর্ভুক্তি -সংহতি ও বাণী প্রচারে যুব সমাজ” বিষয়ে সহভাগীতা করেন ফাদার প্রেমু রোজারিও , চ্যান্সেলর, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। এরপরে সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার প্রেমু রোজারিও, চ্যান্সেলর রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ।
খ্রিস্টযাগ শেষে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতামূলক বক্তব্য দেন ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ, যুব সমন্বয়কারী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশন। তিনি সার্বিকভাবে সহযোগিতার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। প্রাক্তন যুব সমন্বয়কারী শ্রদ্ধেয় ফাদার নবীন পিউস কস্তা । শ্রদ্ধেয় দাদা জ্যোতি মুর্মু , প্রাক্তন সেক্রেটারি , নব নিযুক্ত সেক্রেটারি তুষার বেনেডিক্ট বিশ্বাস কে ক্রেস্ট ও যুব দিবসের গেঞ্জি প্রদানের মধ্য দিয়ে সন্মান প্রদান করেন। এরপরে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও , ডিডি এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধেয় ফাদার প্রেমু রোজারিও যুব ক্রুশ হস্তান্তর করেন আভে মারিয়া ধর্মপল্লী গুল্টার কাছে এবং ঘোষণা করেন গুল্টা ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হবে ধর্মপ্রদেশীয় যুব দিবস ২০২৫। এরপরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনের সমাপ্তি ঘটে।
১৫ অক্টোবর খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার প্রদীপ যোসেফ কস্তা পাল-পুরোহিত সুরশুনিপাড়া এরপর সকালের নাস্তা খেয়ে গ্রুপ ছবি তুলে সকল যুবা ভাই বোনেরা নিজ নিজ ধর্মপল্লীর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস