গত ২৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিকালে ডিকন লিংকন সামুয়েল কস্তা’র মঙ্গল কামনা করে আশির্বাদের অনুষ্ঠান পবিত্র ঘন্টা করা হয়। এই আশির্বাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বরিশাল ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ও ফৈলজানা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার হ্যামলেট ফ্রান্সিস বটলেরুসহ অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ ও ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত খ্রিস্টভক্তগণ।
২৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে ডিকন লিংকন যাজকপদে অভিষিক্ত হন। অভিষেক অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও এবং তাঁর সহার্পিত খ্রিস্টযাগে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিওসহ বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৪০ জন ফাদার, ৭ জন ডিকন, ২০ জন সিস্টার ও প্রায় ১০০০ খ্রিস্টভক্ত।
বরিশাল ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও তার উপদেশে বলেন- ফৈলজানা সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ারের ধর্মপল্লীতে নব অভিষিক্ত ফাদার লিংকন কস্তাকে পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠান দেখে এবং তাঁর যাজকীয় জীবনের আদর্শ থেকে প্রেরণা নিয়ে আরও অনেকেই যাজকীয় ও ব্রতীয় জীবন নিয়ে ধ্যান ও চিন্তা করার সুযোগ পাবে এবং তাদের জীবনে ঈশ্বরের আহ্বান উপলব্দি ক’রে ঈশ্বর ও মণ্ডলির সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি। তিনি আরো বলেন, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারিতে যাজকীয় গঠনলাভকালীন সময়ে তিনি আমার ছাত্র ছিলেন বিধায় নব অভিষিক্ত ফাদার লিংকন কস্তাকে আমি ভালভাবেই চিনি। মানুষ হিসেবে তিনি অনেক গুণের অধিকারী। ঈশ্বর প্রদত্ত এই গুণগুলো এবং তাঁর সৃজনশীলতা ব্যবহার করে খ্রিস্টের দেহরূপ মণ্ডলি গঠনে এবং মঙ্গলবাণী প্রচারে তিনি অনেক ভালো অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে প্রার্থনা জানাই যেন ঈশ্বর এই নব অভিষিক্ত যাজককে প্রচুররূপে আশির্বাদ করেন এবং বিশ্বস্তভাবে যাজকীয় জীবন-যাপনে ও কর্তব্য পালনে প্রয়োজনীয় কৃপা দান করেন। আমি তাঁর ফলপ্রসূ যাজকীয় জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন- ধর্মপ্রদেশের বিশপ হিসেবে আমি চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন যিশু-মারিয়া ও যোসেফের ন্যায় পবিত্র ও আদর্শ পরিবার হিসেবে খ্রিস্টবিশ্বাসে জীবন যাপন করে। আর যেভাবে সহযোগিতা দিয়ে এই অভিষেক অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলেছেন; ঠিক একইভাবে ধর্মপল্লী পরিচালনায় ফাদারদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাবেন। অবশ্যই ফাদার লিংকনসহ মণ্ডলিতে সেবারত সকল যাজক ও ধর্মব্রতীদের জন্য প্রার্থনা করবেন। ফাদার লিংকন আজ যাজকাভিষেকের লাভের মধ্যদিয়ে স্বয়ং খ্রিস্টের যাজকত্বের অংশী হয়ে উঠেছেন। আশা করি ফাদার লিংকন ঈশ্বরের এই মহা দান সযত্নে রক্ষা ও জীবনের মধ্যদিয়ে যাপন করে যাবে। নবভিষিক্ত ফাদার লিংকন ও সকলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা, অভিনন্দন ও আশির্বাদ রইল।
নব অভিষিক্ত ফাদার লিংকন কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- “ উদরের মধ্যে তোমাকে গঠন করিবার পূর্বে আমি তোমাকে জ্ঞাত ছিলাম, তুমি গর্ভ হইতে বাহির হইয়া আসিবার পূর্বে তোমাকে পবিত্র করিয়াছিলাম; আমি তোমাকে জাতি-গণের কাছে ভাববাদী করিয়া নিযুক্ত করিয়াছি” (জেরেমিয়া ১:৫ পদ)। পবিত্র বাইবেলে প্রবক্তা জেরেমিয়ার আহ্বান থেকে আমি উপলব্দি করতে পারি যে ঈশ্বর তাঁর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য মানুষকে তার জন্মের আগে থেকেই আহ্বান করে থাকেন। তাই যাজকীয় জীবনের আহ্বান একটি ঐশ অনুগ্রহের প্রকাশ। আজকে আমি ফাদার লিংকন সামুয়েল কস্তা এখানে দাঁড়িয়ে যখন আমার জীবন নিয়ে ধ্যান করি এবং আমাকে নিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা ও ঈশ্বরের দেয়া ঐশ অনুগ্রহের দিকে তাকাই, তখন আমার মনের পর্দায় এককে একে ভেসে উঠে, আমার জন্ম থেকে আজ অবধি ঈশ্বরের সকল দয়া ও করুণা যা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। সত্যিই ঈশ্বর কতই না মহান, অসীম তার ভালোবাসা যে আমাকে তিনি তার পরিকল্পনায় স্থান দিয়ে আমাকে ধন্য করেছেন।
এছাড়াও আমার যাজকীয় জীবনাহ্বানের এই ঘটনাটি স্মরণ না করে পারছি না। ঘটনাটি হলো- একদিন বিকেশে আমি যখন মিশনের পাশ দিয়ে পার হচ্ছি, তখন আমাদের নতুন গির্জা গড়ে ওঠেনি। আমি দেখতে পাই বয়স্ক ফাদার কান্তন একটি ঝাড়– দিয়ে পুরাতন গির্জার দেয়াল পরিষ্কার করছে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি এবং ফাদারকে দেখছি সেই সাথে মনে মনে বলছি একজন বিদেশী পুরোহিত যদি বাইরের দেশ থেকে এসে আমাদের জন্য এত কাজ যত্ন করে করতে পারেন তাহলে আমি কেন একজন ফাদার হবো না। সেই দিন আমি মনে মনে ইচ্ছা পোষন করি আমি ফাদার হবো এবং যদি ফাদার হই তাহলে ফাদার কান্তনের মত ফাদার হবো।
পাল পুরোহিত ফাদার হ্যামলেট ফ্রান্সিস বটলেরু বলেন, অবশেষে চলে এলো বহুল প্রত্যাশিত ২৫ অক্টোবর। ফাদার লিংকন ও তার পরিবারকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানাই। আমি শুনেছি যে, ফাদার লিংকনের পারিবারিক আনন্দ, সুখ ও ঈশ্বরের কৃপাশীষ প্রকাশ করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ভালো লাগছে আমার, কারণ এটা একটি ব্যতিক্রমী প্রয়াস যে, পরিবার থেকে একটি স্মরণিকা বের করা। এই স্মরণীকায় বাণীর মাধ্যমে আমি এই পরিবারের সাথে একাত্ম হতে পেরেছি বলে আমি অনেক আনন্দিত ও খুশী। ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ দেই এই পরিবারের জন্য। ফাদার লিংকনের জন্য এই পরিবার আশির্বাদিত হয়েছে। আমি নব অভিষিক্ত যাজক লিংকন কস্তা ও তার বাবা-মাসহ পুরো পরিবার এর সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।
বরেন্দ্রদূত নিজস্ব রিপোর্টার