গত ০৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিকালে ডিকন সুমিত ব্লেইস কস্তা’র মঙ্গল কামনা করে আশির্বাদের অনুষ্ঠান পবিত্র ঘন্টা করা হয়। এই আশির্বাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ও বনপাড়া ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ কস্তাসহ অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ ও ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত খ্রিস্টভক্তগণ।
৮ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ডিকন ব্লেইস যাজকপদে অভিষিক্ত হন। অভিষেক অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৪৫ জন ফাদার, ৩ জন ডিকন, ৩৫ জন সিস্টার ও প্রায় ১৩০০ এর অধিক খ্রিস্টভক্ত।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও উপদেশ বাণীতে বলেন- ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রকাশ আমাদের জীবন। অবিরাম ধারায় ঈশ্বর অনুগ্রহ দানের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন ধন্য করেন। এর মধ্যদিয়ে আমরা নিজ বিশ্বাসের অভিজ্ঞতায় তাঁকে চিনতে ও জানতে পারি। উপলব্দি করতে পারি তাঁর পরিকল্পনা ও আহ্বান। নব অভিষিক্ত ফাদার সুমিত ব্লেইস কস্তা আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসার দান। এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ চিত্তে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। ফাদার সুমিতের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঈশ্বর যে সন্তানকে তাদের পরিবারে দান করেছিল, তারা উদারভাবে তা ঈশ্বরের নামে মণ্ডলীর মধ্যদিয়ে সেবা কাজের জন্য দান করেছেন। আশা করি, একইভাবে আরও অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করবেন। ফাদার সুমিত আজ যাজকাভিষেক লাভের মধ্যদিয়ে স্বয়ং খ্রিস্টের যাজকত্বের অংশী হয়ে উঠেছেন। আশা করি ফাদার সুমিত ঈশ্বরের এই মহা দান সযত্নে রক্ষা ও জীবনের মধ্য দিয়ে যাপন করে যাবে। ধর্মপ্রদেশের বিশপ হিসেবে আমি চাই, প্রত্যেকটি পরিবার যেন যিশু-মারিয়া ও যোসেফে’র ন্যায় পবিত্র ও আদর্শ পরিবার হিসেবে খ্রিস্ট বিশ্বাসের জীবন যাপন করে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার অন্তর গেয়ে ওঠে ঈশ্বরের জয়গান। আমি আজকে আমাদের নতুন ফাদার ব্লেইসকে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। তার জন্য আমি সব সময় প্রার্থনা করেছি আর করব যেন তুমি পবিত্র থাকতে পার প্রথম কাজ পবিত্র যাজক হতে পার। মানুষের সামনে তুমি যেন সত্যি সত্যি খ্রিস্টকে উপস্থাপন করতে পার এবং তুমি নিজেই হয়ে উঠতে পার অপর খ্রিস্ট। তোমার মধ্যে যেন মানুষ খ্রিস্টকেই দেখে। এটা শুধু বললে হবে না বরং তোমার কথায়, চিন্তায়, কাজে, এমনকি সবকিছুতেই হয়ে উঠতে হবে অপরখ্রিস্ট।
নব অভিষিক্ত ফাদার সুমিত ব্লেইস কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- যে যাত্রা শুরু করেছিলাম সে যাত্রার একটা অবস্থান বা সে লক্ষ্যে এসে উপনীত হয়েছি এবং আমি চিন্তা করেছিলাম যে যখন সিড়ি বেয়ে বেয়ে ঘরে প্রবেশ করা হয় সেটাই একটা আনন্দ পূর্ণতা। এবং আমার এই জীবনের দীর্ঘ ১৭ বছর যে সিড়ি বেয়ে বেয়ে চলেছি আজকে সেই পূর্ণতায় আমি উপনীত হয়েছি যাজক হওয়ার মধ্যদিয়ে আর সেটা অবশ্যই অনেক মানুষের অবদান ছিল, শ্রম ছিল, সমর্থন ছিল। আমি প্রত্যেককেই ধন্যবাদ জানাই বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই এখানে উপস্থিত পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়কে যিনি আমাকে মনোনীত করেছেন অভিষিক্ত করেছেন তার সহকর্মীরূপে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এবং একই ভাবে আমার পিতা মাতা তাদেরকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাদের মধ্যদিয়ে আমি পৃথিবীতে এসেছি এবং যত্নে লালিত পালিত হয়েছি এবং উৎসাহ অনুপ্রেরণার মধ্যদিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি এবং একইভাবে অন্যান্য যারা আমাকে এ পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। ঈশ্বরকে আমি অবশ্যই ধন্যবাদ দেই তার এই মহা দান তিনি আমাকে দিয়েছেন এই যাজকত্ব কাজের তা যেন আমি ধরে রাখতে পারি সবসময়। এতেই আমার আনন্দ কেননা আপনারা আমাকে এই যাজকীয় জীবনে সাড়া দিতে সাহায্য করেছেন। প্রার্থনা চাই, যেন সেই আনন্দ আমি সমসময় ধরে রাখতে পারি। আমি সামগ্রিকভাবে বনপাড়া ধর্মপল্লীর প্রত্যেকটি খ্রিস্টভক্তকে প্রত্যেকটি পরিবারকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের কোন না কোন ভাবে সমর্থন ছিল প্রার্থনা ছিল যার মধ্যদিয়ে আমি এই মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত হতে পেরেছি। একই ভাবে সকলের কাছে প্রার্থনা চাই আমার এই যাত্রা যেন সুন্দর হয় প্রভুর সেবকের ন্যায় যেন আমি কাজ করে যেতে পারি।
যাজকীয় অভিষেক স্মরণিকার সম্পাদক ফাদার পিউস গমেজ তার অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন- যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠান একটি অনুগ্রহের মাহেন্দ্রক্ষণ। একটি ধর্মপল্লী, ধর্মপ্রদেশ তথা গোটা মণ্ডলীর জন্য ঈশ্বরের আশির্বাদ লাভের সময়। এমন একটি উপলক্ষ্যের সাথে আমরা একাত্ম হতে পেরেছি বলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।
ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, বনপাড়া ধর্মপল্লীর সন্তান ফাদার ব্লেইস কস্তাকে যাজকীয় জীবনের জন্য জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। বনপাড়া ধর্মপল্লীর সন্তান হিসেবে আমি আজ অনেক আনন্দিত কারণ পিতা ঈশ্বর এই ধর্মপল্লী থেকে আরেকজন নতুন যাজক উপহার দিয়েছেন। দয়াময় প্রভু তোমার এ বাণী প্রচার যাত্রায় সহবর্তী হোন।
ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা তার অনুভূতিতে বলেন- কল্যাণীয় নবীন অভিষিক্ত যাজক ব্লেইস সুমিত কস্তা; “যাজক তুমি চিরকালের মতো, মেলখিসেদেকের রীতি অনুসারে” (হিব্রু ৫:৬)। যাজকীয় অভিষেক হল পালকীয় কাজে নব যাজকদের আনুষ্ঠানিক দীক্ষা। তোমার পালকীয় সেবাকাজের উদ্বোধন উৎসবে তোমাকে নিরন্তর শুভেচ্ছা-অভিনন্দন, প্রণাম! এ নিবেদন যাত্রায় সর্বমঙ্গলময় স্রষ্টা তোমার সার্বিক মঙ্গল করুন। তুমি ধীরে ধীরে হবে পরিপক্ক পালক, সমন্বিত বাণী-প্রচারক। তোমার প্রতিদিনের ভ্রাতৃপ্রেম হবে খ্রিস্ট যাজকের আসল পরিচয়। তোমার সহযাত্রীগণ আমরা সর্বদা তোমার পাশে আছি। তোমার চিরন্তন মঙ্গল হোক।
ফাদার সুশান্ত ডি কস্তা তার অনুভূতিতে বলেন- যাজকীয় জীবন হলো ঈশ্বরের অনুগ্রহের আহ্বান। ঈশ্বরই মনোনীত করেন কে যাজক হবে। তাই ডিকন সুমিত ব্লেইস কস্তাকে ঈশ্বরই আহ্বান ও মনোনীত করেছেন যাজক পদে অভিষিক্ত হতে। বনপাড়া ধর্মপল্লীর যাজক হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত তার এই যাজকীয় অভিষেকের জন্য এবং একই সঙ্গে ঈশ্বরের গৌরব ও প্রশংসা করি তাঁর এই মহান অনুগ্রহ ও আশির্বাদের জন্য।
বনপাড়া ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ এস. কস্তা বলেন, নব অভিষিক্ত যাজক ব্লেইস সুমিত কস্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ঐহিত্যবাহী এই ধর্মপল্লী থেকে যেন যাজকীয় ব্রতীয় জীবনের আহ্বান অব্যাহত থাকে সেই প্রচেষ্টা করতে সবাইকে আহ্বান জানাই। যাজকাভিষেক অনুষ্ঠান ধর্মপল্লী ও মণ্ডলীর জন্য একটি আনন্দময় আশির্বাদমণ্ডিত ঘটনা। বিশ্বমণ্ডলীতে যাজকীয় ও ব্রতীয় আহ্বান হ্রাস পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক আহ্বান রয়েছে। সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা, প্রার্থনা-অনুদানের মধ্যদিয়ে যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠান সার্থক, সুন্দর ও আশির্বাদমণ্ডিত হয়ে এই প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টা সকলের। ঈশ্বরের সকল অনুগ্রহ, কৃপা ও আশির্বাদের জন্য আমরা তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করি। ধর্মপল্লী হলো সকল বিশ্বাসী ভক্তের মিলন কেন্দ্র। উপাসনায় অংশগ্রহণে মাধ্যমে ধর্মপল্লীর আরো সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক। “ফসল তো প্রচুর কিন্তু কাজ করার লোক অল্পই! তাই ফসলের মালিককে মিনতি জানাও, তিনি যেন তার শস্যক্ষেত্রে কাজ করার লোক পাঠিয়ে দেন” (লুক ১০:২)। তাই বিশ্বাসী খ্রিস্টভক্ত হিসেবে আমরা প্রত্যেকে যাজকীয় ও ব্রতীয় জীবনের আহ্বান বৃদ্ধিতে সহায়তা দান করি। নব অভিষিক্ত যাজক ফাদার ব্লেইস সুমিত কস্তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। ঈশ্বরের মঙ্গল ইচ্ছা সবার উপর বর্ধিত হোক। এই অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সার্থক করতে যারা বিভিন্নভাবে শ্রম দিয়েছেন তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার