খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্রের উদ্যোগে বিগত ১০ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে কাটেখিস্ট সিস্টার, কাটেখিস্ট মাস্টার ও প্রার্থনা পরিচালকদের নিয়ে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে শিক্ষা সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেমিনারের মূলসুর ছিল “বাণীর আলোকে গড়ি জীবন তা প্রচারে সঁপিবো জীবন”।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আগুনের পরশমণি গানের মধ্যদিয়ে উক্ত সেমিনারের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রহনপুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুশান্ত ডি’ কস্তা, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া ও অবসর প্রাপ্ত ধর্মপ্রদেশীয় কাটেখিস্ট বার্ণাবাস হাপরুমসহ ৩ জন ধর্মপ্রদেশীয় কাটেখিস্ট মাস্টার, ৯ জন সিস্টার ও বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৩৫ জন কাটেখিস্ট ও প্রার্থনা পরিচালক-পরিচালিকাগণ।

সেমিনারের আয়োজক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন- কাটেখিস্ট সিস্টার, কাটেখিস্ট মাস্টার ও প্রার্থনা পরিচালক-পরিচালিকাগণই হচ্ছেন ঐশরাজ্য প্রচারের বা বাণী ঘোষণার সক্রিয় সেবাকর্মী। তাই আমাদের ধর্মপ্রদেশের আপনাদেরই আত্মত্যাগ ও নিঃস্বার্থভাবে বাণীঘোষণার কাজে এই মহান ব্রত পালনের জন্য বিশপ মহোদয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, এই শিক্ষা সেমিনারের মাধ্যমে আপনারা আরো বেশি বাণীর দ্বারা আলোকিত হবেন এবং আপনাদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়ে এই কাজে আরো বেশি তৎপর হবেন। আপনাদের এখানে অবস্থান সুন্দর হোক, শিক্ষা দীক্ষায় ও জ্ঞানে বেড়ে উঠুন এই শুভ কামনা করি।

শিক্ষা সেমিনারে ফাদার প্যাট্রিক গমেজ “বাণীর আলোকে জীবন-যাপন কর এবং বাণী ঘোষণায় হও তৎপর” এই বিষয়ে সহভাগিতা করেন। তিনি তাঁর সহভাগিতায় বলেন, কাটেখিস্ট হলেন একজন ধর্মশিক্ষক, বাণী প্রচারক, একটি আহ্বান। বাণী প্রচার একটি ক্যারিজম। কাটেখিস্টের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১) পবিত্র আত্মা থেকে আহ্বান, ২) মণ্ডলিতে প্রেরিত ৩) বিশপ ও যাজক দ্বারা নির্ধারিত কাজ ও ৪) বিশেষ যোগাযোগ ও সমন্বয় । কাটেখিস্টের সেবাকাজ হলোঃ সমাজে প্রার্থনা পরিচালনা করা, শিশু থেকে শুরু করে যারা প্রার্থনা দুর্বল তাদের প্রার্থনা ও গান শিক্ষা দেওয়া। উপদেশ ও বাইবেল সহভাগিতা করা। বাইবেলের দুইটি অংশ পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম। পুরাতন নিয়ম হলো প্রতিশ্রুত কালের বর্ণনা, সৃষ্টি এদেন বাগানে সুখের জীবন ও পতন। আব্রাহামের সাথে সন্ধি, বন্ধন, প্রতিজ্ঞা ও মুক্তির ইতিহাস শুরু হয়। ইস্রায়েল জাতির দাসত্ব, মোশীর মাধ্যমে উদ্ধার ও বিধান দান করা হয়। বিচারক, রাজা ও প্রবক্তাদের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালনা করা হয়। নতুন নিয়ম হলো পূর্ণতার কাল । মঙ্গলসমাচার একটি শুভসংবাদ, মুক্তির সংবাদ। মঙ্গলসমাচার লেখক হলেন চার জন সাধু মথি মার্ক লুক ও যোহন। মথি ইহুদিদের জন্য, মার্ক নতুন খ্রিস্টানদের জন্য এবং লুক অখ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে মঙ্গলসমাচার লিখেছেন। যার জন্য তাদের লেখা ও বলার ধরণ আলাদা । যোহন যিশুর প্রিয় শিষ্য যিনি প্রথম থেকে ক্রুশে মৃত্যু পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। তিনি মঙ্গলসমাচার সকলের উদ্দেশ্যে লিখেছেন এবং তাঁর লেখা গভীর আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ। সাধু পৌলের ১৩টি পত্র যাকোবের ১টি পিতরের ২টি যোহনের ৩টিপত্র ও প্রত্যাদেশ গ্রন্থ।

কাটেখিস্ট সিস্টার, কাটেখিস্ট ও প্রার্থনা পরিচালকদের জীবনে ধর্মশিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা। শুরুতে জীবনের শ্লোগান হোক- “হায় রে আমি, মঙ্গলসমাচার যদি না প্রচার করি!” (মথি ৯: ১৬)। তারপর তিনি তাঁর বিষয়বস্তু শুরু করেন। যিশু নিজেই একজন কাটেখিস্ট ছিলেন। সকল দীক্ষিত ব্যক্তিই কাটেখিস্ট। বাণী প্রচার সকলেরই দায়িত্ব। বাণী বপন করি, যিশুর ভালোবাসার বীজ বপন করি, তুলে ধরি। যিশু আমার মধ্য দিয়ে কথা বলেন। তাই রবিবাসরীয় প্রার্থনা অন্য কেউ না থাকলেও নিজেই একা প্রার্থনা করবো। প্রার্থনা পরিবেশ, গির্জার পরিবেশ প্রস্তুত করা। ধুপদিয়ে শোভাযাত্রা করে সক্রিয় ও প্রানবন্তু করবো। সেবকের দায়িত্ব,পাঠ আগে থেকে পড়ার জন্য ব্যক্তি নির্বাচন ও পাঠ করে শব্দ, বানান উচ্চারণ, প্রণাম ঠিকমতো করা। সেবক, ধুপ দেওয়া, কমুনিয়ন গ্রহণের আসা-যাওয়া ইত্যাদি বিষয় ঠিকমতো করা। বাইবেল সহভাগিতার জন্য বাইবেল কয়েকবার পড়ে মূলভাব ঠিক করা। বাইবেল পাঠের উপর, বিভিন্ন উপলক্ষে অনুসারে কোন ঘটনার লক্ষে মূলভাব ঠিক করা যেতে পারে। প্রার্থনায় সকল খ্রিস্টভক্তে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রার্থনার উত্তর সঠিকভাবে, জোরে, স্পষ্টভাবে, ভক্তির সাথে ও বিশ্বাস নিয়ে দেওয়া। এরপর তিনি প্রার্থনা পরিচালনার কাঠামো লিখিত আকারে দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন। সন্ধ্যায় বাইবেলের পদ ও বাস্তব বিষয় নিয়ে অভিনয় করে সেমিনার শেষ করা হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : সুশীল টুডু

Please follow and like us: