ভূমিকা :
“ আমরা যুবা, সজাগ থাকি সর্তক হই,
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে, আজই সিদ্ধান্ত নিই।
উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন , ডেকে আনে চরম বিপদ
মিলেমিশে করব কাজ ,পাবো খুঁজে সমাধান ”
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে উপনীত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হিসেবে সর্বপ্রথম আসে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। যুব সমাজের নৈতিক দায়িত্ব হলো ঈশ্বরের সৃষ্ট পৃথিবী রক্ষায় এগিয়ে আসা। বর্তমান সময়ের আলোচিত সমস্যা সমাধানে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালননের আহ্বান ও দায়িত্ব রয়েছে। পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বির্বতন ফসল। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো তুলনামূলক যথেষ্ট কম সময়ে মানুষের কার্যক্রমের ফলে পৃথিবীর জলবায়ুর গড় তাপমাত্রা একটি লক্ষণীয় বৃদ্ধি। একশ থেকে দুইশ বছরের মধ্যে বিশ্বের জলবায়ুর উষ্ণতা ১ ডিগ্রী বা এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেলে এটাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয় ।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন
প্রতিনিয়ত পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ুর স্বাভাবিক চরিত্রে পরিবর্তন ঘটছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত বিষয়টি ‘বিশ্ব বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ’ অভিধায় ভূষিত। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আর বায়ু মন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হলো গ্রিন হাউস হাউসের প্রতিক্রিয়া। জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি সম্ভাব্য ভয়াবহ হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো গভীরভাবে প্রভাব ফেলে তার ফলে সৃষ্ট সমস্যা ও প্রতিরোধের উপায় নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো :
ই-বর্জ্য ( ইলেকট্রনিক ডিভাইস) : ই বর্জ্য হলো ব্যবহৃত অথবা ত্যাগকৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস , যেমন কম্পিউটার , মোবাইল ফোন , টেলিভিশন, এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপকরণ যেগুলি আর ব্যবহারযোগ্য না অর্থ্যাৎ নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধরণের বর্জ্য বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ই-বর্জ্যের সমস্যাসমূহ –
পরিবেশগত প্রভাব: ই-বর্জ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন লেড , পারদ,ক্যাডমিয়াম এবং ব্রেমিনেটেড ফ্লেম রিটারডেন্ট পরিবেশে মিশে গিয়ে ভূমি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করে।
স্বাস্থ্যঝঁকি : এসব রাসায়নিক উপাদান মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সমস্যার কারণ হতে পারে যেমন: শ্বাস কষ্ট , ত্বক সংক্রমণ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যার সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত বর্জ্য : দ্রুত প্রযুক্তি পরিবর্তনের কারণে ই-বর্জের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একাটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
সমাধান ও করণীয়-
১) ই-বর্জ্যরে পুর্নব্যবহার করে মূল্যবান উপাদান উদ্ধার করা যার মাধ্যমে বর্জ্যরে পরিমাণ কমানো এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ কমানো সম্ভব।
২) ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলির মেরামত ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে বর্জ্য কমানো যেতে পারে।
৩) জনগণের মধ্যে এর ব্যবস্থাপনা ও পুর্নব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।
৪) সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কঠোর আইন ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে।
প্লাস্টিক /পলিথিনের ব্যবহার
প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার আমাদের জীবনে অত্যন্ত বিস্তৃত । খাদ্যপণ্য, ঔষধ এবং অন্যান্য দ্রব্যের প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । বিভিন্ন ধরনের পোশাক এবং বস্ত্রের উৎপাদনে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পলিথিনের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু বর্তমান সময়ে পলিথিনের ব্যবহার পরিবেশ এবং জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলছে।
পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যবহারের কয়েকটি কুফল
* পলিথিন / প্লাস্টিক পঁচতে অনেক সময় লাগে য়ার ফলে জমিতে বা জলাশয়ে প্লাস্টিকের স্তর জমা হয় এবং পরিবেশ দূষণ করে।
* প্লাস্টিকগুলো পঁচে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে যা পানি ,বায়ু, মাটি পানিতে মিশে যায় এবং জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
* প্লাস্টিকের আর্বজনা বন্যপ্রাণীর জন্য বিপজ্জনক ।
প্রতিরোধের উপায়
* অমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারে সর্বদা সচেতন হতে হবে । যেন প্লাস্টিক/পলিথিন ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ও অন্যের অসুবিধার কারণ না হই। তাই প্লাস্টিক/পলিথিনের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
বায়ু দূষণ
বায়ু দূষণ হলো বায়ুমন্ডলে এমন সব পদার্থের উপস্থিতির কারণে হওয়া বায়ু দূষণ যা অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং জীব, স্বাস্থ্য কিংবা জলবায়ু বা পদার্থের ক্ষতি করে। ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যুর সরাসরি পিএম ২.৫ জনিত বায়ু দূষণের কারণে । রাস্তা নির্মাণের কাজ , কলকারখানার ধোঁয়া , গাড়ির কালো ধোঁয়া,ধূমপান, যেখানে-সেখানে কাগজ নোংরা পুড়িয়ে ফেলার ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষণ হচ্ছে।
বায়ু দূষণ রোধে যা করণীয়
* রাস্তা নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে।
* যতদূর সম্ভব ধূমপান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
* বাড়ির আশেপাশে জীবজন্তু মারা গেলে তা মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হবে।
* জনমনে বায়ু দূষন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বায়ু দূষণ রোধে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করা।
পানি দূষণ
পানি দূষণ বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ হলো পানি দূষণ। পানি দূষণ একদিকে যেমন পরিবেশেরর জন্য হুমকি, তেমনি এটি মানবস্বাস্থ্যকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এ সমস্যা শুধু পরিবেশগত উদ্বেগ নয় , বরং সমাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করছে।
দূষিত পানি পান করার ফলে যে সকল রোগ হয়
পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন: ডায়রিয়া,হেপাটাইসিস , কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ( আমিবিক ডিসেন্ট্রি), স্কেবি, হেলমিনথ ইনফেকশন, ট্রিচুয়ারিসিস ,গ্যাস্ট্রাইসিস ।
পানি দূষণ রোধের উপায়
* পুকুরে কিংবা নদীতে অসুস্থ্য রোগীর কাপড়-চোপড় ধোঁয়া বন্ধ করতে হবে।
* যে পানি পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় সেই একই পানিতে গরু-মহিষ গোসল করানো,পাট পচানো ,পায়খানা-প্রসাব বন্ধ করতে হবে।
* পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
* পুকুরের পানিতে থালা-বাসন ধোঁয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
* নদীতীরে শিল্প কারখানা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
* প্রত্যেকটি শিল্প কারখানার সাথে শোধনাগার স্থাপন বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক।
শব্দ দূষণ
শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্প কারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণের যেসব নিয়ম আছে তা মানা হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, শব্দ দূষণ একটি দন্ডণীয় অপরাধ।
শব্দ দূষণের কয়েকটি কারণ
* বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভারি মেশিন ব্যবহার করার ফলে উচ্চ মাত্রায় শব্দ তৈরি করে।
* অটোমোবাইল বিপ্লব শহুরে এলাকায় পরিবেশ বা শব্দ দূষণের বড় উৎস হয়ে উঠেছে।
* যানযটের কারণে বেশি মাত্রায় হর্ণ বাজানো হয় যা শব্দ দূষণ করে।
* বিয়ে বাড়ি/বিভিন্ন জনসভায় মাত্রাতিরিক্ত মাইকের ব্যবহারের কারণে শব্দ দূষণ হয়।
* নির্মাণ কাজ , ওয়ার্কশপ ও অটোমোবাইল মেরামত শব্দ দূষণ করে।
শব্দ দূষণ রোধের উপায়
* বিভিন্ন সংস্থার আদর্শ আইন প্রণয়ন করা যেন করে শব্দ দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে।
* শব্দ দূষণ কমানোর জন্য একটি সাশ্রয়ী উপায় হল ইয়ারপ্লাগ পরা। এটি ব্যবহারে স্বাস্থ্যকর ঘুম ও কানের পর্দার ক্ষতি প্রতিরোধ হবে।
* যেসব শিল্প কারখানা তাদের যন্ত্রপাতি থেকে প্রচুর শব্দ উৎপন্ন করে, তারা উচ্চ শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে শব্দারোহী উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।
* রাস্তার পাশে বাড়ি হলে / অতিরিক্ত শব্দ শোনা গেলে জানালা বন্ধ রাখা।
* কম্পন ও শক্তিশালী শব্দ তরঙ্গ কমানোর একটি সহজ উপায় হলো বাড়ি বা অফিসের চারপাশে গাছ লাগানো। এর ফলে শব্দ দূষণ একটু হলেও কমবে ।
বালু ও পাথর উত্তোলন
বালু ও পাথর উত্তোলন অমাদের উন্নয়ন কাজের জন্য অপরিহার্য হলেও এর প্রভাব পরিবেশ ও সমাজে ব্যাপক হচ্ছে। এটি সাধারণত নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এ উত্তোলন কার্যক্রম প্রয়োজনীয় তবুও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যেমন:
* জলপ্রবাহের পরিবর্তন
* মাটি ক্ষয় ও কৃষিজমির গুণাগুণ হ্রাস করে।
* বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক বাসস্থান নষ্ট হয় যার ফলে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
* বিভিন্ন দূষণের সৃষ্টি হয় যা জনগণের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
* অর্থনৈতিক অস্থিশীলতা সৃষ্টি হয়।
সমাধানের উপায়ঃ
* নির্দিষ্ট নিয়ম এবং বিধি মেনে উত্তোলন কার্যক্রম পরিচলনা করা।
* আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তোলনের প্রক্রিয়া আরো কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব।
* নদী ও জলাশয়ের সুরক্ষার জন্য জল পুনরুদ্ধার প্রকল্প চালু করা দরকার।
* উত্তোলন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পূর্বে এলাকার সাধারণ জনগণের মতামত গ্রহণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি।
* নিয়মিত মনিটরিং ও পরিদর্শন।
বৃক্ষনিধন ও পাহাড় কাটা
বৃক্ষনিধন ও পাহাড় কাটা প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলি পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বৃক্ষ নিধন বা বন ধ্বংস বিভিন্ন কারণে ঘটে যেমন কৃষি ক্ষেত্র বিস্তৃতি, শহুরে সম্প্রসারণ এবং কাঠের জন্য বাণিজ্য।
বৃক্ষনিধন ও পাহাড় কাটা এর প্রভাবগুলো হলো-
* বৃক্ষনিধনের ফলে মাটি ক্ষয় ও বায়ু দূষণ বেড়ে যায়।
* বন কেটে ফেলার কারনে বন্যপ্রাণী তাদের আবাসস্থল হারায়।
* গাছের অভাবে কার্বণ ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি পায় যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে একটি বড় কারণ।
* পাহাড় কাটার ফলে জলপ্রবাহের নিয়ম পরিবর্তিত হয়।
* পাহাড় কাটার ফলে প্রাকৃতিক বাস্ততন্ত্রেও ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়ে।
প্রতিকারের উপায়
* বন সংরক্ষণ , রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ।
* বন ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ণ।
* জনগণকে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
* এলাকার যুবকরা একসাথে হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমাধান হবে।
* একটি গাছ কাটলে দশটি গাছ লাগানো অর্থ্যাৎ বৃক্ষরোপন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান:
জলবায়ু দূষণের ফলে প্রতিনিয়ত মারাত্মকভাবে প্রকৃতি ও জনজীবন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নিম্নে তারই একটি পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হলো :
বিশ্ব উষ্ণায়নে ও জলবায়ু পরিবর্তনে যুবাদের প্রস্তাবিত দায়িত্ব :
“ একসাথে একত্রিত হবো, হাতে হাত রেখে,
নতুন দিনের স্বপ্ন দেখি, পরিবেশকে রক্ষা করে।
বায়ু,জল, মাটি সবকিছুই হবে সুন্দর,
জলবায়ু পরিবর্তনরোধে , একসাথে আমরা যুবা, হবো অটুট অটল।”
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুবসমাজের কয়েকটি প্রস্তাবিত দায়িত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো-
* সচেতনতা বৃদ্ধিঃ জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাব সম্পর্কে এলাকায় জনসচেতনতা বাড়ানো এবং ধর্মপল্লীর সহায়তায় এ বিষয়ে জনগণকে বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষা প্রদান ও সচেতন করা।
* পুর্নব্যবহার : প্লাস্টিক ও অন্যান্য সামগ্রী পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পণ্যে রুপান্তর করা ও ব্যবহার।
* বিদ্যুৎ সাশ্রয় : প্রথমে নিজ পরিবারে এবং পরে সমাজে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দরকারি ফ্যান, লাইট ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বাদে অযথা বিদ্যুৎের অপচয় না করা।
* পানি সাশ্রয় : পানির অপচয় কমানোর জন্য সচেতন হতে হবে , লিকেজ মেরামত এবং অপ্রয়োজনে পানির অপচয় না করা। পানি সাশ্রয়ের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা।
* কার্বন নিগর্মন কমানো : ফসফেট জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সৌর ও বায়ু শক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে ।
* বনভূমি রক্ষা ও বৃক্ষরোপণ : বন সংরক্ষণ ও নতুন গাছ লাগাতে হবে যা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে।
* বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : পুর্নব্যবহারযোগ্য ও কম বর্জ্য উৎপাদনকারী পণ্য ব্যবহার করা এবং বর্জ্য পুর্নব্যবহারে সকলকে উৎসাহিত করা।
* পানি সংরক্ষণ : পানি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানো এবং পানিব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি করা ।
* পরিবেশ রক্ষা: বিভিন্ন দূষণ আমাদের পরিবেশকে দূষিত করে তাই এ বিষয়ে সচেতন হয়ে সকলকে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুবাদের প্রস্তাবিত দায়িত্ব বাস্তবায়নের উপায়
যুবসমাজ চাইলে কিছুই অসম্ভব নয়। পানি দূষণ সম্পর্কে আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। পানি দূষণরোধে আমাদের সেই প্রস্তাবিত দায়িত্ব বাস্তবায়নের জন্য কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো-
* সচেতনতা বৃদ্ধিঃ ধর্মপল্লীতে রবিবারের ধর্মক্লাস, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি দূষণ ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি: নদী,খাল,পুকুর এবং অন্যান্য জলাশয় পরিষ্কার করার জন্য যুবাদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করা।
* বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : সকলের মধ্যে বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা , রিসাইক্লিং এবং পুনঃব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান।
* নীতি প্রস্তাবনা : বিভিন্ন দূষণ কমানোর জন্য সরকার ও স্থানীয় কতৃপক্ষের কাছে যুবাদের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া এবং তাদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা ।
* প্রযুক্তি ব্যবহার : উন্নত পরিবেশ বিনির্মাণের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং যুবাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।
* গবেষণা ও উদ্ভাবন : বিভিন্ন দূষণরোধে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের উপর গবেষণা এবং তার প্রচারে যুবাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ।
* নিয়মিত মনিটরিং: স্থানীয় এলাকায় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টিংয়ের জন্য যুবাদের নিয়ে দল গঠন।
* সৃজনশীল প্রকল্প : পুনঃব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহারে এলাকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, গাছ লাগানো ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে নিজে সৃজনশীল প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা ও অন্যকে অনুপ্রাণিত করা।
* ইকো-ফ্রেন্ডলি অপশন ব্যবহার : প্রত্যেক যুবক-যুবতীর নিজ নিজ পরিবারে দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশবান্ধব পণ্য ও সেবা ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যুবাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জোরালো ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার : জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল সমস্যা যা সকল গরীব দেশসমূহকে প্রভাবিত করেছে ব্যাপকভাবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনরোধে যুবাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যুবারা সমাজিক সচেতনতা সৃষ্টি , পরিবেশবান্ধব আচরণের প্রচার ও শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। যুবাদের মাধ্যমে নীতিমালা ও বাস্তবায়ন চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করা সম্ভব। তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন দিশা প্রদর্শন করতে পারে। অতএব যুবাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনরোধে একটি মৌলিক চাবিকাঠি।