“ খ্রিস্টরাজা তোমারে প্রণাম করি
তুমি পবিত্র ঈশ-নন্দন তোমারে প্রণাম করি
তুমি পাপীর তরে জীবন দিয়েছ তোমারে প্রণাম করি ” ( গীতাবলী-৩৮৬)
খ্রিস্টরাজার রাজত্ব মানুষের হৃদয়ে। তার রাজত্ব ভালবাসার রাজত্ব। এই ভালবাসার চরম নির্দশন দেখাতে গিয়ে নিজেকে রিক্ত করে ক্রুশে ঝুলে প্রাণ দিয়েছেন। ক্রুশেই খ্রিস্টরাজার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে। খ্রিস্টরাজার মহাপর্বোৎসব আমাদের অনুধ্যানের বিষয় , বিশ্ব রাজ যিশু খ্রিস্টের ন্যায় আমরা কী মানব উন্নয়ন অগ্রগতির চিন্তায় বিভোর? শান্তি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় আমরা কী সম্পৃক্ত? মানুষের মাঝে শান্তি-সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি? বাস্তচ্যূত মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মানুষের সাথে পথ চলি?
আমাদের প্রতি খ্রিস্টরাজার বার্তা
খ্রিস্টীয় প্রেম ও সেবার পথে চলার জন্য খ্রিস্টরাজ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে আহ্বান করেন। যদিও তিনি সৃষ্টির অধিকর্তা তবুও জাগতিক অর্থে তার কোন ঐশ্বর্য ছিল না। তিনি ছিলেন বিশ্বে সর্বকালের দীনতম রাজা। কারও প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব ছিল না। অসহায় দুর্বলদের সাথে একাত্ম হয়েছেন, যারা অস্পৃশ্য-আপাংত্তেয় তাদের মর্যাদা ও অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। যিশুর কোন নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না। যিশুকে ১২ জন শিষ্য খুব ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করলেও তারা তার দেহরক্ষী ছিল না। গেৎসিমানী বাগানে পিতর মেলখাসের কান কেটে দিলেও যিশুর তাতে স্বীকৃতি ছিল না বরং যিশু পিতরের প্রতিরক্ষামূলক আচরণে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। অসংখ্য লোক যিশুর সাথে উঠাবসা করলেও তাদের বেশিরভাগ ঘুরেছে স্বার্থ উদ্ধারের জন্য, যিশুর নিরাপত্তা বিধানের জন্য নয়।
তার রাজত্বে নেই ক্ষমতার আস্ফালন, অস্ত্রেও ঝনঝনানী। তার রাজত্বে নেই ভৌগলিক বা রাজনৈতিক গন্ডিসীমা। পৃথিবীর বিস্তার যতদূর, মানবজাতির বিস্তার যতদূর ততদূরই তার রাজত্ব। তার রাজ্যের সংবিধান হলো ভালোবাসা ও ন্যায্যতা। সেবা হলো তার প্রশাসন এবং ক্ষমা হলো তার উপহার। যারা খ্রিস্টের অনুসরণ করে তারাই খ্রিস্টান তাই একজন খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো খ্রিস্টরাজার ন্যায় প্রত্যেককে ক্ষমা ও ভালবাসা উপহার প্রদান করা। আমাদেরকে খ্রিস্টরাজার পর্ব স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে জাগতিক মোহ-মায়া ত্যাগ করে ঐশ্ব সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য ও খ্রিস্টের মানদন্ডে নিজেকে পরিচালিত করতে।। জগতে নিজ নিজ দায়িত্বে ও কর্তব্যে আসুন খ্রিস্ট যিশুর আদর্শ অনুসরণ করি।
সকলকে ভালোবাসার আহ্বান
খ্রিস্টরাজা আমাদের সেবা, ক্ষমা ও ভালোবাসার পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি নম্রতার উত্তম আদর্শ। ঈশ্বর পুত্র স্বর্গ মর্ত্যরে অধীশ্বর হয়েও পাপীকে ক্ষমা করে বিরল আদশ ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি এমনই ন্যায় বিচার করেছেন যে, ভাইয়ের চোখের কড়িকাঠ না দেখে বরং নিজের চোখে যে কুটোটা আছে সেটা দেখতে বলেছেন। অর্থ্যাৎ নিজের দিকে তাকানো , নিজেকে চেনা, নিজের সমন্ধে সচেতন হওয়া এবং আত্ম মনপরীক্ষা করা আবশ্যক। আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে আমরা বিশুদ্ধ, পবিত্র মানুষ হব। পবিত্র অন্তর নিয়ে পরস্পরকে ভালবাসতে পারব। ‘ভালবাসা যেখানে প্রভু যিশু সেখানে, পরস্পরকে ভালোবাস প্রভু যিশুর বিধানে ’। বিশ্ব রাজ খ্রিস্টের একান্ত ইচ্ছা আমরা যেন পরস্পরকে ভালোবাসি এবং প্রভু যিশুর ভালোবাসার আশ্রয়ে থাকি।