ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিনিধি
ভাটিকান সিটি: ধর্মের কাজ হলো একসঙ্গে শান্তির সেতুবন্ধন রচনার জন্য কাজ করা। পোপ ফ্রান্সিস ভাটিকান সিটিতে আলবানিয়ার বেকতাসিস মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা বলেন। তিনি বলেন, “যখন ধর্মীয় নেতাগণ পারস্পরিক সম্মানবোধ নিয়ে সংলাপের মধ্যদিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলেন তখন নবীকৃত ও দৃঢ় হয় নতুন বিশ্বের আশা।” বেকতাসিস মুসলিম হলেন একটি উঁচু মার্গের সুফি গোষ্ঠী, যা ১৩শ শতাব্দিতে বর্তমান তুরস্কের আনাতলি নামক স্থানে সংগঠিত হয়ে অটোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
বেকতাসিস মুসলিম সুফি গোষ্ঠীর অন্যতম কাজ হলো- মানুষের প্রতি ভালোবাসা, অন্যকে আমলে নেওয়া, আধ্যাত্মিকতা এবং সে সঙ্গে ক্যাথলিক চার্চ ও ভাটিকানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। পোপ এ সুফি সম্প্রদায়ের সঙ্গে চার্চের সম্পর্ককে “আশির্বাদ” হিসেবে বর্ণনা করে আশা প্রকাশ করেন যে, “ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে এবং মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করবে।” পোপ ফ্রান্সিস, এ সুফি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সংলাপ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বৈঠকের কথা স্মরণ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন- এ সম্পর্ক তাদের মধ্যে চিরকাল বজায় থাকবে। আলবানীয়া বেকতাসিস সুফি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন, মহামাণ্য হাক্সীবাবা এডমন্ড ব্রাহিমাজ।
জুবিলিবর্ষ ২০২৫: পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের ঐতিহ্য উল্লেখ করে ২০২৫ খ্রিস্টবর্ষকে “জুবিলিবর্ষ” ঘোষণা করেছেন। খ্রিস্টজন্মের ২০২৫ বছরের জয়ন্তী সামনে রেখে এ জুবিলিবর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি ২৫ বছর পর পর জুবিলিবর্ষ ঘোষণা করা হয়। পোপ গত ২৪ ডিসেম্বর, রোম নগরীতে অবস্থিত সাধু পিতর মহামন্দিরের পুণ্যদ্বার (পুণ্য দরজা) খুলে দিয়ে জুবিলিবর্ষ ঘোষণা করেন। পুণ্যদ্বার হলো মহামন্দিরের চারটি প্রধান দরজার একটি- যেটি শুধুমাত্র জুবিলিবর্ষে খুলে দেওয়া হয়। পোপ ৮ম বনিফাস ত্রয়োদশ খ্রিস্টাব্দে এ ঐতিহ্য স্থাপন করেছেন- যেটাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক যাত্রা।
এ বছর জুবিলিবর্ষের আধ্যাত্মিক যাত্রায় জোর দেওয়া হয়েছে “আধ্যাত্মিক নবীকরণ এবং ক্ষমাদান।” এবারের জুবিলিবর্ষে আধ্যাত্মিক যাত্রার সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও ভাটিকানের ঐতিহাসিক মাইলফলক যুক্ত করে খ্রিস্টানদের আহ্বান করা হয়েছে “ভ্রাতৃত্ব ও আশা” নিয়ে একতাকে আলীঙ্গণ করে যাত্রা। এ তীর্থযাত্রার প্রবেশতোরণ হবে- সাধু পিতর মহামন্দিরের পুণ্যদ্বার। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের খ্রিস্টভক্তদের আহ্বান জানিয়ে বলছেন তারা যেনো এ জুবিলিবর্ষের আধ্যাত্মিক নবীকরণ, ভ্রাতৃত্ব ও আশা এবং তাদের একত্রে যাত্রা যেন গোটা মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
জুবিলিবর্ষে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, বাংলাদেশ: গত ৫ জানুয়ারি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের প্রতিটি ধর্মপল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে জুবিলিবর্ষ উদ্বোধন করা হয়। রবিবার সকালে ধর্মপল্লীর যাজক খ্রিস্টযাগের শুরুতে গির্জার প্রধান দরজা খুলে দিয়ে জুবিলিবর্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। খ্রিস্ট জুবিলিবর্ষের ঘোষণা বার্তায় ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, “আমরা আমাদের দরিদ্র ও অসহায় ভাইবোনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং আমাদের হৃদয়ে স্থান দিয়ে তাদের প্রতি খ্রিস্টিয় ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি।
বাইবেলের আলোকে বিশপ জের্ভাস বলেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ক্ষুদ্রতম ভাইদের একজনের প্রতি যাকিছু করেছো, তা আমারই প্রতি করেছো (মথি ২৫:৩৭-৪০)।” তিনি বলেন, “এভাবে ভালোবাসার সংস্কৃতি গড়ে তুলে আমাদের পরিবার, সমাজ ও স্থানীয় মণ্ডলীতে শান্তি ও ন্যায্যতা স্থাপন করতে পারি।” সবশেষে বিশপ রোজারিও, এ জুবিলিবর্ষে ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টভক্তদের একসঙ্গে প্রভুর কাছে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ আফ্রিকা: দক্ষিণ আফ্রিকার বিশপ সম্মিলনী জুবিলিবর্ষকে ঐক্যতা, সামগ্রিকতা এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকরণের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র পরিবারের পর্বদিনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশপগণ বিশ্ব মণ্ডলীর সঙ্গে একাত্ব হয়ে জুবিলি বছরের লক্ষ্য ঘোষণা করেন। ককস্টেড এবং কুইন্সটাউন ধর্মপ্রদেশের বিশপ থুলানী ভিক্টর এম্বুয়াইসা এবং সিপিও পৌল ভাংকা- ঐশজনগণকে “আশার উৎস” ও জুবিলিবর্ষে প্রৈরিতিক অনুপ্রেরণা হিসেবে উৎসাহিত করেছেন। অন্যদিকে উত্তর আলিওয়াল ধর্মপ্রদেশের বিশপ যোসেফ মেরী কিজিতো- জুবিলিবর্ষে যুব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে আধ্যাত্মিক যাত্রার কথা ঘোষণা করেছেন।
সিয়েরা লিয়ন: পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিয়ন দেশের আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিষদ- সরকারের গর্ভপাত বৈধকরণ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পরিষদের ভাষ্য হলো- এ ধরনের বিল দেশের ধর্মীয় অনুভূতি ও শিক্ষার বিরুদ্ধচারণ করবে। তারা বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ২০২৪ নামের এই প্রস্তাব জীবনের পবিত্রতা এবং দেশের বর্তমান আইনের বিরোধী। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিষদ- সংসদের মহিলা সদস্যা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে পরিষদ তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সিয়েরা লিয়নের ফ্রিটাউন আর্চডায়োসিসের প্রধান আর্চবিশপ এডোয়ার্ড টাম্বা চার্লস আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিষদের প্রধান।