বরেন্দ্রভূমির তীর্থস্থান নবাইবটতলা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াকে রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার তীর্থে খ্রিস্টভক্তদের উপস্থিতি ও আধ্যাত্মিকতা সমন্ধে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভক্তবিশ্বাসীদের মধ্যে রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার প্রতি দিন দিন ভক্তি-বিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরের চেয়ে এ বছরে তীর্থযাত্রীদের উপস্থিতির পরিমাণ আরো বেশী লক্ষ্যণীয় ছিলো। আর এ থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা চিরজীবন্ত। রহনপুর ধর্মপল্লী থেকে তীর্থে আগমনকারী হরেন টপ্য বলেন, আমার মনের বাসনা রক্ষাকারিণী মা মারীয়া পূরণ করেছেন আর তাই মাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।
বিগত ১৬ জানুয়ারী ২০২০ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের নবাইবটতলা ধর্মপল্লীতে উদ্যাপিত হলো রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার তীর্থোৎসব। তীর্থোৎসবকে কেন্দ্র করে মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল জের্ভাস রোজারিও, ৩২ জন যাজক, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিস্টার ও বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে প্রায় ৭০০০ রক্ষাকারিণী মা মারীয়া ভক্ত ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ তীর্থস্থানে অংশগ্রহণ করেন। খ্রিস্টভক্তদের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির জন্য ৭ জানুয়ারী থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে বিভিন্ন যাজকদের দ্বারা অর্পিত নভেনা খ্রিস্টযাগের ব্যবস্থা করা হয়। এতে আশেপাশের ও অন্যান্য ধর্মপল্লী থেকে খ্রিস্টভক্তগণ অংশগ্রহণ করেন। তীর্থোৎসবের পর্বীয় খ্রিস্টযাগের আগের দিন বিকালে নভেনা খ্রিস্টযাগে ধর্মপাল জের্ভাস রোজারিও বলেন, ‘ঈশ্বর যেমন সামুয়েলকে ডেকেছিলেন তেমনি ঈশ্বর আমাদের সবাইকে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্য দিয়ে ডাকেন। আর মা মারীয়ার মতো আমাদের সে ডাকে নিঃশর্ত-নিঃস্বার্থভাবে সাড়া দিতে হয়। নবাইবটতলার রক্ষাকারিণী মা মারীয়া আমাদের সে অনুপ্রেরণাই প্রতিনিয়ত দান করেন’। সন্ধ্যায় খ্রিস্টভক্তদের উপস্থিতিতে আলোক শোভাযাত্রা ও রোজারীমালা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
পর্বীয় দিন সকালবেলা থেকেই হাড়কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে দলে দলে খ্রিস্টভক্তগণ আসতে থাকেন। সবার উদ্দেশ্য রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার চরণতলে নিজেদের নিবেদন করা। সবার অন্তরে বাজতে থাকে, ‘রক্ষাকারিণী মা মারীয়া, রক্ষা কর সকল বিপদ নাশিয়া’। সকাল ৮:৩০ মিনিটে খ্রিস্টভক্তদের অংশগ্রহণে নবনির্মিত ক্রুশপথের স্থানে ক্রুশের পথ করা হয়। ১০ ঘটিকায় পর্বীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও। তিনি তাঁর উপদেশে বলেন, ‘খ্রিস্টবিশ্বাসী হিসাবে আমাদের প্রত্যেককে আনন্দে জীবন যাপন করতে হয়। আর সে নির্মল আনন্দ ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। নবাইবটতলার রক্ষাকারিণী মা মারীয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন ভক্তবিশ্বাসীকে রক্ষা করেছেন তেমনি তিনি যেন আমাদের সকল বিপদ-আপদ ও সমস্যা থেকে রক্ষা করেন’।
পর্বীয় খ্রিস্টযাগের পর মা মারীয়ার ভক্তগণ নিজেদের মানত ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মা মারীয়ার প্রতিমূর্তির সামনে প্রার্থনা করেন। এছাড়াও ভক্তবিশ্বসীগণ মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও’র নিকট থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।
নবাইবটতলায় রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার তীর্থোৎসব- ২০২০ উদ্যাপন
Please follow and like us: