ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
প্রতি বছর পহেলা মে, বিশ্ব শ্রমিকদের প্রতিপালক সাধু যোসেফের পর্ব পালন করা হয়। সেই সাথে পালন করা হয় আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস। পোপ দ্বাদশ পিউস ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই পর্ব স্থাপন করেছিলেন। যোসেফ হলেন শ্রমজীবী মানুষের প্রতিপালক ও আদর্শ। তাঁর অনেক গুণাবলীর মধ্যে যোসেফ ছিলেন নম্র, ধৈর্যশীল, কঠোর পরিশ্রমী। তিনি ছিলেন আদর্শ শ্রমিক, তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্বে তিনি নিরবে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর কাজ শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের কারণে ছিলো না বরং তা ভালোবাসার প্রেরণায়ই করেছিলেন। শ্রমিক জীবনে তিনি ছিলেন ঈশ্বরের একান্ত অনুগ্রহপাত্র ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তিনি যীশুকে লালন-পালন করার যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তা যত্নের সাথেই করেছিলেন।
একই সাথে আমরা পালন করছি, আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস। উনবিংশ শতাব্দিতে শুরু হয়েছিলো শ্রমিক আন্দোলন যা, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো শহরে, পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে ভয়ংকর রূপ নেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের দাবি- ন্যায্য পাওনা, দিনে আট ঘন্টা কাজ, কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ ও জীবনের নিরাপত্তা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস স্বীকৃতি লাভ করে। সেই থেকে প্রতি বছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য নিয়ে মে দিবস বা আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শ্রমিকগণ হলেন দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। অস্বীকার করার উপায় নেই, আজকের এই উন্নয়ন, সভ্যতার পিছনে শ্রমিকদের অবদান। গ্রাম গঞ্জের কৃষক থেকে শুরু করে কল কারখান, ইমারত কর্মী- সবার অবদান- আজকের সভ্যতা। কিন্তু তারপরেও শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের অবহেলার শেষ নেই। তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ এবং নিরাপত্তা বিধান, এখনো বিশ্বের বহু দেশে নিশ্চিত হয়নি।
এবারের শ্রমিক দিবসের মূল বিষয় ঘোষণা করা হয়েছিলো- কর্মক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও নির্যাতন। কিন্তু আজকের বাস্তবতায়, এই করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ অনুরোধ জানিয়েছে। যে সব স্বাস্থ্যকর্মী নিজের জীবন বিপন্ন করে মানব সেবায় নিয়োজিত, তারা যেনো প্রয়োজনীয় সহায়তা লাভ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ বিশ্বের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। এই মহামারি সংকট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো উপযুক্ত সেবা- যা স্বাস্থ্যকর্মীরা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা মানবতার এই সেবাটি দিতে গিয়ে যেনো নিজেদের জীবন রক্ষা ক’রে অন্যের জীবন রক্ষা করতে পারেন, তার জন্য জাতিসংঘ সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা এই মানবতার শ্রমিকদের জন্য সৃস্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তারা যেনো পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেরা বিপন্ন হয়ে না পড়েন। এই বিপদকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরাই আমাদের একমাত্র ভরসা। শ্রমিকদের প্রতিপালক, সাধু যোসেফ সবার সাথে থাকুন। শ্রমিকদের প্রতি রইলো আমাদের শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।

Please follow and like us: