ফাদার সুনীল রোজারিও। খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় কেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লীতে প্রভুর নিবেদন পর্ব উদযাপন করা হয়েছে। রাজশাহী জেলার কাঁকনহাট নামক স্থানে অবস্থিত এই ধর্মপল্লীটি প্রভুর নিবেদন ধর্মপল্লী নামে উৎসর্গ করা হয়েছে।
সব রকমের স্বাস্থ্য-বিধি মেনে সকাল ন’টার সময় রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও ১১জন যাজক ও আগত ভক্তজনদের সঙ্গে নিয়ে আদিবাসী কৃষ্টিতে শোভাযাত্রা করে গির্জা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। খ্রিস্টযাগের উপদেশে বিশপ বলেন, “শিশু যিশুকে তাঁর পিতা মাতা মন্দিরে নিবেদন করেছিলেন- পিতা ঈশ্বরের সমীপে। আর পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে নিবেদন করেছিলেন গোটা মানব জাতির মুক্তির উদ্দেশ্যে। ঠিক একইভাবে আমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের রাজ্যে কাজ করার জন্য নিবেদিত।” বিশপ আরো বলেন, “আমরা প্রত্যেকে সেই খ্রিস্টের শিষ্য এবং শিষ্য হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো- খ্রিস্টের স্বাক্ষ্য বহন করা।” খ্রিস্টযাগের পরে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রভুর নিবেদন ধর্মপল্লী ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে, নিত্য সাহায্যকারিণী মা মারীয়া- আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীকে বিভক্ত করে উত্তরের অংশ নিয়ে সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লী গঠন করা হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লী গঠন করা হলেও এখানে খ্রিস্টানদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো এখন থেকে ১০৪ বছর আগে, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের ফাদার আনসেলমো (দিনাজপুরের দ্বিতীয় বিশপ) এখানে মাহালী আদিবাসীদের প্রথম দীক্ষা দেন। তখন থেকে আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীর যাজকগণ খ্রিস্টভক্তদের দেখশোনা করতেন। প্রথম দীক্ষার প্রায় ৫৮ বছর পরে, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে এখানে একটি কাঁচা গির্জা নির্মাণ করা হয়। সিস্টারদের স্থায়ী আবাসনের জন্য ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় একটি কনভেন্ট। খ্রিস্টভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধিলাভের কারণে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে একটি আধাপাকা গির্জা নির্মাণ করা হয়। পরে গির্জা চত্বরের প্রধান ফটক ঘেসে বর্তমান সুদৃশ্য গির্জাটি নির্মাণ করা হয় ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমানে এই ধর্মপল্লীতে বিভিন্ন সংঘ-সমিতির পাশাপাশি রয়েছে, বিদ্যালয়, ছেলে-মেয়েদের বর্ডিং, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, ইত্যাদি। এখানে কর্মরত যাজকগণ হলেন, কার্লো দত্তি, আন্তনী হাঁসদা, শৈবাল ফ্রান্সিস রোজারিও। যাজকদের পালকীয় কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে চ্যারিটি সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ। সুরশুনিপাড়া ধর্মপল্লীতে মোট খ্রিস্টভক্তের সংখ্যা সাত হাজারের অধিক।
প্রভুর নিবেদন পর্ব উদযাপন- সুরশুনিপাড়া
Please follow and like us: